Ads

মসজিদে মহিলাদের নামাজ আদায়ে বিপত্তি কোথায়?

জামান শামস

রাসূলের (স) যুগে প্রতিটি ঘটনা বা উপলক্ষ্যে মসজিদে নারীদের স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি থাকতো। মহানবীর (সা) সুন্নাহ থেকে এ সম্পর্কিত শতাধিক বর্ণনা পাওয়া যায়। উদাহরণ হিসেবে এখানে মাত্র কয়েকটি বর্ণনা তুলে ধরছি।

একটি কাহিনী দিয়ে শুরু করা যাক। আয়েশার (রা) সূত্রে ইমাম বুখারী এটি বর্ণনা করেছেন। এক আফ্রিকান দাসীর ঘটনা। আরবের একটি গোত্র তাকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়েছিলো। তারপর ওই নারীকে মসজিদে নববীর ভেতর একটি তাঁবুতে থাকতে দেয়া হয়। ঘটনাটির তাৎপর্য সহজে বুঝার স্বার্থে পুরো বর্ণনাটি এখানে উদ্ধৃত করছি। আফ্রিকান তরুণীটি বলেন–
“আমি যে গোত্রের দাসী ছিলাম, সেই গোত্রের একটি বাচ্চা মেয়ে মূল্যবান পাথর খচিত একটি লাল চামড়ার স্কার্ফ পরে বাইরে গিয়েছিলো। তারপর সে স্কার্ফটি হয় ভুলে কোথাও রেখেছিলো, নয়তো কোথাও পড়ে গিয়েছিলো। একটি পাখি তখন সেখান দিয়ে উড়ে যাচ্ছিলো। মাটিতে স্কার্ফটি দেখে পাখিটি একে গোশতের টুকরা মনে করে ছোঁ মেরে নিয়ে উড়ে চলে গেলো। বাচ্চাটির পরিবার স্কার্ফটি খুঁজতে লাগলো। কিন্তু কোথাও না পেয়ে তারা আমাকে চুরির দায়ে অভিযুক্ত করলো। তারপর অশোভনভাবে তারা আমার দেহে তল্লাশী শুরু করলো। তারা এমনকি আমার স্পর্শকাতর স্থানগুলোতেও খুঁজেছে। আল্লাহর কী রহমত! তারা যখন তল্লাশী চালাচ্ছিলো, ঠিক তখনই ওই পাখিটি ফিরে এসে লাল স্কার্ফটি তাদের সামনে ফেলে দিলো। তখন আমি তাদেরকে বললাম, এই তো সেই স্কার্ফ! এর জন্যই তো তোমরা আমাকে দোষ দিচ্ছিলে, অথচ আমি ছিলাম সম্পূর্ণ নির্দোষ।

আয়েশা (রা) আরো বলেন,

এ ঘটনার পর ওই পরিবার তরুণীটিকে মুক্ত করে দিলো এবং সাথে সাথেই সে রাসূলের (সা) কাছে এসে ইসলাম গ্রহণ করলো। তারপর মসজিদে নববীর ভেতর নিচু ছাউনি দিয়ে একটি তাঁবু তৈরি করে সেখানেই থাকতে লাগলো। সে আমার কাছে মাঝেমধ্যে আসতো, কথাবার্তা বলতো। প্রত্যেকবারই কথাবার্তার শুরুতে সে এই কবিতাটা আমাকে শোনাতো–

স্কার্ফ হারানোর দিনটি ছিলো আমার রবের আশ্চর্য এক দিন
কাফেরদের হাত থেকে তিনি আমায় মুক্তি দিলেন যেদিন।

আয়েশা (রা) বলেন,

একদিন আমি তার কাছে এই কবিতার পেছনের কাহিনী জানতে চাইলাম। তখন সে আমাকে পুরো ঘটনা খুলে বললো।

এই ঘটনায় আমরা দেখতে পাচ্ছি, রাসূলের (সা) সাথে দেখা করা ও কথা বলা একজন তরুণীর জন্য কতটা সহজ ও স্বাভাবিক ছিলো। এমনকি কোথাও আশ্রয় না পেলে মসজিদে থাকতেও কারো কোনো অসুবিধা ছিলো না। যা হোক, এই হাদীসের উপর ভিত্তি করে আন্দালুসীয় স্কলার ইবনে হাযম মতামত দিয়েছেন, ঋতুস্রাবের সময়ও নারীদের মসজিদে আসতে কোনো অসুবিধা নেই।

মসজিদে নববীতে নারীদের যাতায়াত সংক্রান্ত আরো কিছু হাদীস তুলে ধরা হলো–

আয়েশা (রা) বলেন, “সাদ ইবনে মুয়াজ (রা) খন্দকের যুদ্ধে আহত হয়েছিলেন। … তারপর রাসূল (স) তাঁর জন্যে মসজিদের ভেতর একটা তাঁবু তৈরি করলেন, যাতে তিনি সাদকে (রা) নিয়মিত দেখতে পারেন।”
(সহীহ বুখারী, অভিযান অধ্যায়, ৪১৬/৮ এবং সহীহ মুসলিম, জিহাদ অধ্যায়, ১৬০/৫)

এই হাদীসটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইবনে হাজার বলেছেন,

প্রকৃতপক্ষে রাসূল (সা) মসজিদের ভেতর রুফাইদার (রা) তাঁবুতে সাদকে (রা) রাখেন। আহতদের চিকিৎসায় দক্ষতার জন্যে রুফাইদা (রা) পরিচিত ছিলেন । তাই রাসূল (সা) বলেছেন – সাদকে রুফাইদার তাঁবুতে রাখো, যাতে আমি কাছ থেকে তাকে দেখতে পারি। (ফাতহুল বারী, ৪১৫/৮)

রুফাইদা (রা) ছিলেন একজন নারী সাহাবী ও চিকিৎসক। মসজিদে নববীতে তিনি একটি তাঁবু স্থাপন করেছিলেন। এই তাঁবুটি ইসলামের ইতিহাসের সর্বপ্রথম ইমার্জেন্সি ক্লিনিক বা জরুরি হাসপাতাল হিসাবে পরিচিত।

ইমাম মুসলিমের বর্ণনা মতে আশ-শাবী বলেন,

আমরা ফাতিমা বিনতে কায়েসের কাছে গেলাম। ফাতিমা বললেন, যখন লোকদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা দেয়া হলো– নামাজের জন্য একত্রিত হয়ে যাও, তখন অন্যদের সাথে আমিও মসজিদে নববীতে উপস্থিত হলাম। এরপর নারীদের জন্য নির্ধারিত সামনের কাতারে দাঁড়ালাম, যা ছিলো পুরুষদের সর্বশেষ কাতারের ঠিক পেছনেই। নামাজ শেষে মহানবীকে (সা) মিম্বারে বসে বলতে শুনলাম– ‘তামীম দারীর জ্ঞাতি ভাই সমুদ্রে নৌযাত্রা…।
(সহীহ মুসলিম, শাস্তি অধ্যায়, ২০৫/৮)

ইমাম বুখারীর বর্ণনা মতে আসমা বিনতে আবু বকর (রা) বলেছেন,

আমি একবার রাসূলের (সা) স্ত্রী আয়েশার (রা) কাছে এসেছিলাম। তখন সূর্যগ্রহণ চলছিলো। আমি দেখলাম, সব মানুষ নামাজে দাঁড়িয়ে আছে। আয়েশাও (রা) নামাজ পড়ছিলেন। আমি বললাম, লোকদের কী হয়েছে? তিনি আকাশের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, সুবহানাল্লাহ! আমি বললাম, এটা কি কোনো আলামত? তিনি হ্যাঁ সূচক ইঙ্গিত করলেন। তারপর আমি নামাজে দাঁড়িয়ে গেলাম।… নামাজ শেষ করে রাসূলুল্লাহ (সা) সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি হামদ ও সানা পাঠ করলেন।
(সহীহ বুখারী, অযু অধ্যায়, ৩০০/১ এবং সহীহ মুসলিম, সূর্যগ্রহণের নামাজ অধ্যায়, ৩২/৩)

আসমা বিনতে আবু বকর (রা) একই ধরনের আরেকটা ঘটনা বর্ণনা করেছেন।

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহর (সা) জীবদ্দশায় একবার সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। … তারপর আমি এসে মসজিদে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম, রাসূলুল্লাহ (সা) নামাজে দাঁড়িয়ে আছেন। আমিও তাঁর সাথে নামাজে শামিল হলাম। কিন্তু তিনি এতো দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন যে আমার বসে পড়তে ইচ্ছা করছিল। ঠিক তখন আমি খেয়াল করলাম, আমার পাশেই একজন দুর্বল মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন। তখন আমি মনে মনে বললাম, এই মহিলা তো আমার চেয়েও দুর্বল। কাজেই আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ (সা) রুকু করলেন। রুকুতে তিনি দীর্ঘ সময় থাকলেন। তারপর রুকু থেকে ওঠে তিনি দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। তখন যদি বাইরে থেকে কেউ আসতো, তাহলে তাঁর ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা দেখে ভাবতো, মহানবী (সা) বোধহয় এখনো রুকুই করেননি।
(সহীহ মুসলিম, সূর্যগ্রহণের নামাজ অধ্যায়, ৩২/৩)

বুখারী ও অন্যান্য বর্ণনায় রয়েছে, আয়েশা (রা) বলেছেন,

ঈমানদার নারীগণ চাদরে শরীর ঢেকে ফজরের নামাজে রাসূলের (সা) সাথে জামায়াতে শরীক হতেন। নামাজ আদায় শেষে তারা নিজ নিজ ঘরে ফিরে যেতেন।
(সহীহ বুখারী, নামাজ অধ্যায়, ১৯৫/২ এবং সহীহ মুসলিম, মসজিদ অধ্যায়, ১১৮/২)

মহানবীর (সা) স্ত্রী উম্মে সালামা (রা) বর্ণনা করেন,

রাসূলের (সা) যুগে নারীরা (সাধারণত) ফরজ নামাজ শেষে উঠে চলে যেতেন এবং রাসূল (সা) মাঝেমধ্যে পুরুষদের সাথে বসে থাকতেন।
(সহীহ বুখারী, ১৭৩/১। অনুবাদকের টীকা: রাসূল (সা) ফরজ নামাজ শেষ করে সাধারণত উঠে হুজরায় চলে যেতেন। তবে মাঝেমধ্যে তিনি সুন্নত-নফল মসজিদেই আদায় করতেন, এরপর সাহাবীদের সাথে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলতেন)

আসমা বিনতে আবু বকর (রা) থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন,

আমি রাসূলুল্লাহকে (সা) বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যেসব নারী আল্লাহ তায়ালা ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, তারা যেন (সেজদা থেকে) আমাদের মাথা তোলার আগে মাথা না তোলে। তা না হলে নারীরা পুরুষদের লজ্জাস্থান দেখে ফেলবে।

তারপর আসমা (রা) ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করে বলেন,

এই নির্দেশনার কারণ হলো, তখন পুরুষদের নিম্নাংশের পোশাক খুব সংক্ষিপ্ত ছিলো। ‘নামিরাহ’ (নিম্নাংশে পরিধানের জন্য ছোট্ট এক টুকরা কাপড়) ছাড়া বাড়তি কোনো পোশাক পরিধানের সক্ষমতা তখন অধিকাংশ পুরুষের ছিলো না।
(মুসনাদে আহমদ, ৫১১/৪৪)

আরেকটি বর্ণনায় আসমা বিনতে আবু বকর (রা) বলেছেন,

আমাদের মধ্য থেকে রাসূল (সা) উঠে দাঁড়ালেন এবং আমাদের উদ্দেশ্যে কথা বলা শুরু করলেন। মৃত ব্যক্তিকে কবরে কী জিজ্ঞেস করা হবে, তিনি যখন সে প্রসঙ্গে বলছিলেন, তখন লোকেরা হট্টগোল করতে লাগলো। ফলে রাসূলের (সা) শেষ কথাটি আমি বুঝতে পারিনি। তারপর লোকেরা চুপ হলে আমার সামনে বসা পুরুষটিকে বললাম, আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন! রাসূল (সা) তাঁর বক্তব্যের শেষে কী বলছিলেন? পুরুষটি জবাব দিলেন, ‘আমাকে ওহীর মাধ্যমে জানানো হয়েছে– তোমরা কবরে যে ধরনের পরীক্ষার সম্মুখীন হবে, সেটা প্রায় দাজ্জালের ফিতনার মতোই।
(সহীহ বুখারী, জানাজা অধ্যায়, ৪৭৯/৩; একই সনদ)

আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত,

একজন কালো মহিলা মসজিদ ঝাড়ু দিতেন। একদিন তিনি মারা গেলেন। তারপর একদিন রাসূল (সা) মহিলাটি সম্পর্কে জানতে চাইলেন। সাহাবীরা বললেন, তিনি তো মারা গেছেন। তখন রাসূল (স) বললেন, ‘মহিলাটি মারা যাওয়ার পর তোমরা আমাকে জানাওনি কেন? এখন আমাকে তার কবরে নিয়ে চলো।’ তারপর রাসূল (সা) ওই মহিলার কবরের কাছে এসে তার জন্য জানাজার নামাজ আদায় করলেন।
(সহীহ বুখারী, অভিযান অধ্যায়, ৪১৬/৮ এবং সহীহ মুসলিম, জিহাদ অধ্যায়, ১৬০/৫)

আয়েশা (রা) বর্ণনা করেছেন,

যখন সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রা) ইন্তেকাল করলেন, তখন রাসূলের (সা) স্ত্রীগণ সংবাদ পাঠালেন– তাঁর লাশের খাটিয়া যেন মসজিদে নিয়ে আসা হয়, যাতে তাঁরা তাঁর জানাজায় শরীক হতে পারেন।
(সহীহ মুসলিম, জানাজা অধ্যায়, ৬৩/৩)

ইবনে ওমর (রা) থেকে বর্ণিত,

ওমর ইবনুল খাত্তাবের (রা) স্ত্রী আতিকা বিনতে যায়েদ (রা) ফজর ও এশার নামাজ মসজিদে জামায়াতের সাথে আদায় করতে অভ্যস্ত ছিলেন। মসজিদের কোনো কোনো মুসল্লি তাঁর কাছে একদিন জানতে চাইলো, ‘আপনি নামাজ পড়তে আসেন কেন? আপনি তো জানেন, ওমর (রা) এটি পছন্দ করেন না। এতে তিনি ঈর্ষান্বিত বোধ করেন।’ তিনি জবাব দিলেন, ‘তাহলে ওমর (রা) নিজে কেন আমাকে নিষেধ করছেন না?’ তারা বললো, ওমরকে (রা) বাধা দেয় রাসূলের (সা) এই কথাটি– ‘তোমরা নারীদেকে আল্লাহর মসজিদে যেতে বারণ করো না।’
(সহীহ বুখারী, নামাজ অধ্যায়, ৬/২; ইবনে হিব্বান, ৩২৭/১; মুয়াত্তা, ১৯৭/১; বায়হাকী, ১৯৯/৩; ইবনে খুজায়মা, ৯০/৩; ইবনে আবু শায়বা, ১৫৬/২ এবং আবু হোরায়রার সূত্রে আহমদ ৪০৫/১৫)

এ হাদীসটির ব্যাখ্যায় ইবনে হাজার বলেছেন, উমরকে (রা) যখন ছুরিকাঘাত করা হয়েছিলো, তখন আতিকা (রা) তাঁর পিছনেই নামাজ পড়ছিলেন।
(ফতহুল বারী, ৩৪/৩)

বুখারী ও মুসলিম উভয় গ্রন্থে মহানবীর (সা) স্ত্রী আয়েশা থেকে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

তিনি বলেন, কোনো এক ঈদের দিন রাসূল (সা) আমাকে হাবশীদের খেলা দেখার জন্যে ডাকলেন। মসজিদের ভেতর তারা বর্শা চালনায় নিজেদের নৈপুণ্য প্রদর্শন করছিলো। রাসূল (সা) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি খেলা দেখতে চাও? আমি বললাম: হ্যাঁ। তারপর আমি তাঁর পেছনে দাঁড়ালাম। তিনি এমনভাবে নিচু হয়ে দাঁড়ালেন যেন তাঁর কাঁধে আমার থুতনি রাখতে পারি। আমি তাঁর গালের সাথে গাল লাগিয়ে খেলা দেখতে লাগলাম। এমনকি রাসূল (সা) কয়েকবার দেখা ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করলেও আমি বললাম, ‘আরেকটু অপেক্ষা করেন…!’ সত্যি বলতে কি, খেলা দেখার প্রতি আমার খুব একটা আগ্রহ ছিলো না। সেদিন বরং আমি চেয়েছিলাম, বিশেষ করে, নারীরা জানুক– তাঁর সাথে আমার সম্পর্ক কেমন। তাই, তোমরা আনন্দ-উচ্ছ্বাসের প্রতি তরুণীদের আগ্রহকে সুদৃষ্টিতে দেখো।
(সহীহ বুখারী, ৪৪৫ এবং সহীহ মুসলিম, ৮৯২)

আয়েশা (রা) বলেন,

রাসূল (সা:) ফজর সালাত আদায় করতেন, তখন তাঁর সাথে মুমিন নারীরা চাদর পেঁচিয়ে নামাজ আদায় করতেন, তারপর তারা ফিরতেন, তাদেরকে কেউ চিনতে পারতো না।’ এ হাদীসটি সহীহ বুখারীতে তিনটি অনুচ্ছেদে উল্লেখিত হয়েছে।
(বুখারী, খ. ১, পৃ. ৯৯; পৃ. ২০৮,খ. ৩, পৃ. ১৩০-১৩১)

রাসূল (সা) অধিকাংশ সময়ে সালাত দীর্ঘ করতে চাইতেন কিন্তু মহিলাদের শিশুদের কান্নায় তাদের মায়েরা অস্থির হয়ে পড়ে কিনা এ কথা ভেবে তিনি সালাত সংক্ষিপ্ত করতেন।

আব্দুল্লাহ ইবনু আবি কাতাদা তদীয় পিতা হতে বর্ণনা করেছেন,

রাসূল (সা:) বলেছেন, আমি সালাতে দাড়িয়ে তা দীর্ঘ করতে চাই; কিন্তু শিশুর কান্না শুনে আমার সালাত সংক্ষিপ্ত করি, পাছে তার মায়ের কষ্ট হয়। বুখারী সালাত অধ্যায়ে চারটি স্থানে এ বর্ণনাটি উল্লেখ করেছেন; দুটি আবু কাতাদাহ (রা:) হতে আর দুটি আনাস ইবনু মালিক (রা:) হতে।
(বুখারী খ.১, পৃ. ১৭২; পৃ. ২০৮; তিরমিযি খ.১, পৃ. ২৩৪)

রাসূলের (সা:) খলিফাদের যুগেও নারীদের সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে গমনের এই ব্যবস্থা বহাল ছিল।

ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বক্বর (রা:) এর যুগে মুসলিম নারীরা নিয়মিত জামাতে শরীক হয়ে সালাত আদায় করতেন। হযরত উমার (রা) মহিলাদের মসজিদে গিয়ে সালাত আদায়ের জন্য পৃথক মসজিদের দরজার ব্যবস্থা করেন। নারীদের মসজিদে গমন করে জামায়াতে শরিক হতে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে পছন্দ না করলেও তিনি কাঁর স্ত্রীকে মসজিদে যেতে বারণ করেননি। তাঁর স্ত্রী আতিকা সালাত আদায়ে মসজিদে যেতেন। অপছন্দনীয় হওয়ার পরও উমার (রাঃ) নিজের স্ত্রীকে বাধা দেননি। কারণ তিনি নিজের পছন্দ অপছন্দের উপর রাসূল (সাঃ) এর অভিপ্রায়কে অগ্রাধিকার দিতেন। আর এ চেতনাটাই সঠিক ও যথাযথ।

নারীদের মসজিদে গমনের বাধা দেওয়ার প্রতিজ্ঞা করায় ইবনু উমার (রাঃ) তাঁর পুত্রকে শাসন করেছিলেন। যে সব সাহাবী রাসূলের (সাঃ) এর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন ইবনু উমার (রাঃ) তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। রাসূল (সাঃ) নারীদেরকে মসজিদে গমনের অনুমতি সংক্রান্ত হাদীসটি তিনি বর্ণনা করেছেন। তার এক পুত্র এই হাদীস জানা থাকা সত্ত্বেও প্রাসঙ্গিক অবস্থার বিচারে নারীদের মসজিদে গমনে বাধা দেওয়ার সংকল্প করলে তিনি তাকে শাসন করেছিলেন।
(সহীহ মুসলিমে কিতাবুস সালাত অধ্যায়ে খ.১, পৃ. ৩৩৮ )

যে যুক্তিতে তিনি নারীদেরকে মসজিদে যেতে বারণ করেছিলেন তা হলো-‘তাহলে তারা ফাসাদ সৃষ্টি করবে।’—পুত্রের এ আশঙ্কা যৌক্তিক হলেও ইবনু উমার তাকে শাসন করেছিলেন। কারণ রাসূলের সুস্পষ্ট নির্দেশনার বিপরীতে কোনো যুক্তিকে প্রাধান্য দেওয়া যায় না। আর এটাই নির্ভেজালভাবে রাসূলের প্রতি আনুগত্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ ঘটনার পর পুত্রটির সাথে ইবনু উমার (রাঃ) আমৃত্যু কথা বলেন নি। এ জন্য শাইখ উসাইমিন ইবনু উমার ও তার পুত্রের ঘটনাকে উল্লেখ করে দাবী করেছেন যে, এটি অবশ্যই পালণীয় নির্দেশ। নারীকে নিষেধ করা হারাম হবে। [আশশারহুল মুমতি আলা যাদিল মুসতাকনি, খ. ৪, পৃ. ২৮৪]

বর্তমান সময়েও এক দল আলেম মনে করেন, নারীরা মসজিদে গেলে ফিতনার বিস্তার ঘটবে।তাদের মতে, ইবাদত পালনের উদ্দেশ্যে বের হয়ে অনাসৃষ্টি মেনে নেওয়া যায় না।

অনেক স্কলার মনে করেন নারীদের ক্ষেত্রে এ মনোভাব পোষণ করা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পড়ে। এতে রাসুল সাঃ ও সাহাবাগণের রাঃ উইজডমকে খাটো ও হেয় করা হয়।মনে হয় যে মসজিদে নারীদের উপস্থিতিজনিত ফেতনার বিষয়ে উনাদের বুঝজ্ঞান অপর্যাপ্ত ছিলো।নাউযুবিল্লাহ।এর ফলে এই ধারনাও সুপ্রতিষ্ঠিত হয় যে নারীরা তাবৎ ফেতনার উৎস।এটা নারীজাতিকে হেয় করার নামান্তর।

রাসূলের (সা) যুগে,সাহাবী ও তাবেয়ীনগণের সময়ে মসজিদে যদি নারীদের যাতায়াত ও অবস্থান থাকে, তাহলে শুধুমাত্র কল্পিত ফেতনার আশংকায় এখন নারীদেরকে মসজিদে প্রবেশে বাধা দেওয়ার কারণ কি ? আল্লাহর ঘরে ফেতনার আশংকায় হাদীসের আমল রদ বা স্তগিত করার এখতিয়ার কারো আছে কি ?

লেখকঃ সাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বিশিষ্ট ব্যাংকার

আরও পড়ুন