Ads

মহীয়সীর কলামঃ বাঘিনী মমতা!

(হার না মানা এক মহীয়সীর গল্প)

নুরে আলম মুকতা

অভিজাত ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন নারী মমতা ব্যানার্জী। দক্ষিণ কোলকাতার ঘিঞ্জি এলাকা হরিশ চ্যাটার্জী স্ট্রিটের একটি টালির ছাদ যুক্ত বাড়িতে বসবাস। একটু বৃষ্টি হলে তাঁর বাড়ির সামনে পানি জমে যায়। ইটের ওপর পা রেখে রেখে হেঁটে ঘরে ঢুকতে হয়। বীরভুমে মামার বাড়ি । ছোটবেলায় মায়ের সাথে বেড়াতে গেলে, ধানের ক্ষেতের আলে বসে খেলেছেন। ২০১২ সালে টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ জন মানুষের মধ্যে স্থান করে নেন। একই তালিকায় বারাক ওবামা,হিলারি ক্লিনটন, ওয়ারেন বাফেট, টিম কুক দের মতো মানুষের পাশে তিনি! একই বছর ব্লুমবার্গের বিশ্বের ৫০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকাতেও জায়গা করে নেন মমতা। অসামান্য ত্যাগী, হার না মানা এ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নিয়ে তৈরী চলচ্চিত্রের নাম “বাঘিনী।” পরিচালনা করেছেন নেহাল দত্ত। মমতা ব্যানার্জীর জন্ম ১৯৫৫ খৃষ্টাব্দের ০৫ জানুয়ারী। কোলকাতার নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে । মমতার নয় বছর বয়সে স্কুল শিক্ষক বাবা প্রমিলেশ্বর ব্যানার্জী পরলোক গমন করেন চিকিৎসার অভাবে। মা গায়েত্রী দেবী অনেক কষ্টেসৃষ্টে মমতাকে মানুষ করে তুলেছেন। চিরকুমারী মমতা ব্যানার্জী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমন করে একবার বলেছিলেন, নিজের স্ত্রীর দিকে কোনদিন ভালো করে দেখেছেন?  আপনি কি করে জানবেন মায়ের কথা, বোনের কথা, সংসারের কথা ?

দ্রুতগামী মহীয়সী

প্রচুর হাঁটতে পারেন। গল্প করতে করতে ১০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারেন মমতা। হাঁটি হাঁটি পা পা করে চোখে এক বিশাল স্বপ্ন নিয়ে এ মহীয়সী নারী আজ ভারত বর্ষের একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তি। কোলকাতার যোগমায়া দেবী কলেজ থেকে ইতিহাস বিষয়ে অনার্স পাশ করে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। শ্রী শিক্ষায়তন থেকে শিক্ষাদানের বিষয়ে বিশেষ ডিগ্রী রয়েছে মমতার। যোগেশচন্দ্র চৌধুরী আইন কলেজ থেকে আইন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেছেন এ লড়াকু মহীয়সী।
মমতা ব্যানার্জীর রাজনীতিতে অভিষেক হয় ছাত্র অবস্থায়। রাজনীতিতে আসার আগে কোম্পানির সেলসগার্ল,  স্টেনোগ্রাফার, প্রাইভেট টিউশনি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতাও করেছেন মমতা।

বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী মমতা ১৯৭৮-৮১ জেলা কংগ্রেসের সেক্রেটারি নিযুক্ত হন। ১৯৮৪ তে সর্বভারতীয় যুব কংগ্রেসের সেক্রেটারি ও লোকসভার সদস্য নিযুক্ত হন। ১৯৯১-৯৩ কেন্দ্রে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রীর পদ অলঙ্কৃত করেন। ১৯৯৭ সালে মমতা তৃণমুল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন এবং এ দলটির চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন। ১৯৯৮ এ চতুর্থবারের মতো লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৩ অক্টোবর ১৯৯৯-২০০১ তিনি রেল দপ্তরের ক্যাবিনেট মন্ত্রী হন। ২০০৪ সালে কয়লা মন্ত্রী নিযুক্ত হন। তিনিই প্রথম কোন মহিলা এ মন্ত্রণালয় সামলেছেন। মমতা ব্যানার্জী মোট সাতবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভারতীয় লোকসভার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ৩৪ বছরের দীর্ঘ বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে প্রথম নারী হিসেবে পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর পদ অলঙ্করণ করেন। এ ইতিহাস সৃষ্টির আগে তিনি মানব সম্পদ উন্নয়ন রাষ্ট্রমন্ত্রী,যুবকল্যাণ, নারী ও শিশুকল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।

বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী মমতা ১৯৭৮-৮১ জেলা কংগ্রেসের সেক্রেটারি নিযুক্ত হন। ১৯৮৪ তে সর্বভারতীয় যুব কংগ্রেসের সেক্রেটারি ও লোকসভার সদস্য নিযুক্ত হন। ১৯৯১-৯৩ কেন্দ্রে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রীর পদ অলঙ্কৃত করেন। ১৯৯৭ সালে মমতা তৃণমুল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন এবং এ দলটির চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন। ১৯৯৮ এ চতুর্থবারের মতো লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৩ অক্টোবর ১৯৯৯-২০০১ তিনি রেল দপ্তরের ক্যাবিনেট মন্ত্রী হন। ২০০৪ সালে কয়লা মন্ত্রী নিযুক্ত হন। তিনিই প্রথম কোন মহিলা এ মন্ত্রণালয় সামলেছেন। মমতা ব্যানার্জী মোট সাতবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভারতীয় লোকসভার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ৩৪ বছরের দীর্ঘ বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে প্রথম নারী হিসেবে পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর পদ অলঙ্করণ করেন। এ ইতিহাস সৃষ্টির আগে তিনি মানব সম্পদ উন্নয়ন রাষ্ট্রমন্ত্রী,যুবকল্যাণ, নারী ও শিশুকল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৬ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে মমতা পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পুনরায় নির্বাচিত হন। ২০২১ সালের অতি মারী করোনা স্মরণীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে হ্যাট্রিক করেছেন এ মহান রাজনৈতিক নেতা।
বিরোধী দলে থাকার সময় অনেক অত্যাচার সহ্য করেছেন মমতা। ১৯৯০ সালে তাঁকে আক্রমণ করে মাথার খুলি ক্ষতিগ্রস্ত করে। সেবার তাঁকে একমাস হাসপাতালে কাটাতে হয়েছিল। ১৯৯৩ সালে তিনি আবার প্রচন্ড মার খান। মহা করণ অভিযানের সময় তাঁর দলবলের লোকের ওপর পুলিশ গুলি চালিয়ে দেয়। আর এবারের নির্বাচনের কালে মমতার পা ভাঙ্গার বিষয়টি তো সবাই জানেন। বাম পা ডান পা বিতর্ক আর পায়ের প্লাস্টার নিয়ে হুইল চেয়ারে বসে নির্বাচনী প্রচারণা সবাই দেখেছি আমরা।
প্রতিপক্ষের মানসিক অত্যাচারের টার্গেটও তিনি কম না। তাঁকে হেয় করার জন্য “কালীঘাটের ময়না” “ঠাকুমা” ইত্যাদি নামেও ডেকেছে।
মমতা ব্যানার্জী তথা বন্দোপাধ্যায় একজন দারুন ছড়াকার, লেখক, চিত্রশিল্পী। বিশাল জনসভায় ছোট্ট ছোট্ট ছড়ায় প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করে মুহুর্মুহ কর তালিতে মাতিয়ে দেন পরিবেশ। নিজের আঁকা ছবি বিক্রি করে পুরো টাকা পার্টির তহবীলে দান করে দেন।
সদালাপী সহজ ভাষী এ বাংলা ভাষাভাষী নেতা নজরুলের কবিতা আর রবী বাবুর গানের ভক্ত।
মমতা ব্যানার্জীর লেখা তিনটি উল্লেখযোগ্য বই হলো,* My unforgettable Memories, *Struggle for Existence, *Slaughter of Democracy. পুরস্কার অর্জন করেছেন CNN-IBN Indian poltician Indian Of The Year In Politics.

এ মহীয়সী নারী মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন, তিনি পশ্চিম বঙ্গের মানুষের জন্য নিবেদিত।

তথ্যসূত্র ও ছবিঃদৈনিক যুগান্তর, ০৩.০৫.২০২১ সংখ্যা ।

নুরে আলম মুকতাঃ কবি,সাহিত্যিক,অনুবাদক ও সহ-সম্পাদক,মহীয়সী।
আরও পড়ুন