Ads

বাংলাদেশে শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর পারফর্মেন্স কেমন?

।। জামান শামস ।।

বাংলাদেশে শরীয়াহভিত্তিক বা ইসলামী ব্যাংকিং এর বয়স চল্লিশের উপরে।প্রথম প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ব্যাংক ১৯৮৩ সালে আত্মপ্রকাশ করে।এটি দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ইসলামি ব্যাংকও বটে। সেবায় যুক্ত হচ্ছে আরো প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলো। এই সেবার প্রতি গ্রাহকদের অব্যাহত চাহিদা ও হালাল বিনিয়োগের সুযোগ থাকায় ব্যাংকগুলো এদিকে ঝুঁকছে। কেউ পূর্ণাঙ্গ, কেউবা উইন্ডো খুলে সেবা দিচ্ছেন। দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানত ও বিনিয়োগের দিক থেকে মোটামুটি ২৫ শতাংশই ইসলামিক ব্যাংকগুলোর দখলে রয়েছে। রেমিটেন্স আহরণেও বিশেষ ভূমিকা পালন করছে ইসলামিক ব্যাংকগুলো। বিনিয়োগ-আমানত ও সম্পদের বড় সূচকগুলোতে শক্ত অবস্থানে রয়েছে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক। তবে সার্বিক ব্যাংক ব্যবস্থাপনার চাপ ইসলামী ব্যাংকগুলোর উপরও কমবেশী বিরাজমান।

ইসলামী ব্যাংক, বন্ড, মিউচুয়াল ফান্ড ও ইন্স্যুরেন্সের মতো সেবা বৈশ্বিক আর্থিক খাতে এখন বিশিষ্ট একটি স্থান অর্জন করে নিয়েছে। ঝুঁকি ভাগাভাগি, অন্তর্ভুক্তি ও প্রকৃত সম্পদভিত্তিক লেনদেনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সম্প্রসারিত হচ্ছে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা। বৈশ্বিক এ প্রবণতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও এখন দিনে দিনে আরো শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলছে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত সহায়তাও খাতটির বিকাশে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক ছিল ১০টি। সারা দেশে ১ হাজার ৬৭০টি শাখার মাধ্যমে কার্যক্রম চালাচ্ছে ব্যাংকগুলো। অন্যদিকে একই সময়ে দেশের পুরো ব্যাংক খাতে শাখা ছিল ১১ হাজার ২৮৩টি।

আরও পড়ুন-ইসলামী ব্যাংকিং পেশায় তিন যুগ (১৯৮৪-২০১৯)।। প্রথম পর্ব

১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংকের পাশাপাশি প্রচলিত ধারার ১৫টি গতানুগতিক ধারার ব্যাংকের ৩০টি ইসলামী ব্যাংকিং শাখা কাজ করছে। এছাড়া ১৬টি প্রচলিত ধারার বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৬২৪টি ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো এখন বাংলাদেশে ইসলামী আর্থিক সেবা দিচ্ছে।

বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে ইসলামী ব্যাংকিং। প্রচলিত ব্যাংকগুলোর কাছেও তা ধীরে ধীরে আকর্ষণীয় ও লাভজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে ইসলামী ব্যাংকিংয়ে মোট আমানত ছিল ৪৪৩৪.০৩ বিলিয়ন টাকা।পূরো ব্যাংক ইন্ডাষ্ট্রিজ এর আমানত ছিল ১৭৪৯১.৯০ বিলিয়ন টাকা।সে হিসাবে ইসলমী ব্যাংকিং এর আমানত ২৫.৩৫% যা ২০২২ অন্তে ছিল ২৫.৮১. ডিসেম্বর ২০২২ এ আমানত ছিল ৪০৯৯.৯৯বিলিয়ন টাকা। পত্র-পত্রিকাজুড়ে অব্যাহত নেতিবাচক প্রচারণা সত্তেও ইসলামী ব্যাংকসমূহ তাদের বাজার মোটেও হ্রাস হতে দেয়নি,অন্ত পরিসংখ্যন তাই বলে।

২০২৩ অন্তে ইসলামী ব্যাংকগুলোর আমানত বিশ্লেষণে আমরা দেখি-ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এর এককভাবে ৩৪.৭২%,ফার্স্ট সিকিউরিটি ১০.২৬%, এক্সিম ১০.১০%, আল আরাফা ৯.৮৯%, সোশ্যাল ইসলামী ৭.৮০%,শাহজালাল ৫.৬৩%,ইউনিয়ন ৫.০৯%,স্ট্যান্ডার্ড ৪.৪৩%,এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের আমানত ইসলামী ব্যাংকগুলোর মধ্যে ২.৯৮%। প্রায় কাছাকাছি অনুপাত ২০২২ অন্তেও আমরা দেখতে পাই।

ব্যাংকাররা সব সময় নিখরচা বা কম খরচের আমানত নিতে আগ্রহী হলেও ইসলামী ব্যাংকগুলোতে ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায় আর সেটা হল এখানে বড় খরচের মেয়াদী আমানত বেশী। আমনত বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায় হাইকষ্ট এমটিডিআর ৪৫.৮৬%, মুদারাবা সঞ্চয় ১৯.২১%, স্পেশাল পেনশান স্কীম ৭.৪০%, কম খরচের এসএনডি ৪.৭৬% এবং অন্যান্য আমানত ১৭.২৪%।

আরও পড়ুন-ইসলামী ব্যাংকিং পেশায় তিন যুগ (১৯৮৪-২০১৯)।। দ্বিতীয় পর্ব

২০২৩ অন্তে বিনিয়োগ পোর্টফলিওতে ব্যাংক ইন্ডাষ্ট্রির ১৭৪৯১.৯৫ বিলিয়নের বিপরীতে ইসলামী ব্যাংকগুলোর সম্মিলিত বিনিয়োগ ৪৪৪৯.৭৪ বিলিয়ন টাকা যা ২৮.৮৯%।পূর্বের বছর এটি ছিল ২৯.২০%।এর মধ্যে মুরাবাহা বা চুক্তিভিত্তিক বিক্রয় পদ্ধতি ৪৭.৫৭%,বাই মুআজ্জাল বা বাকীতে বিক্রয় পদ্ধতি ২২.৫০%, হায়ার পারচেজ বা ভাড়াক্রয় পদ্ধতি ১৭.৮৮%,ইজারা ৪.০৮%,বাই সালাম বা অগ্রিম ক্রয় পদ্ধতি ১.৭০%।সবচেয়ে মজার বিষয় হল লাভ লোকশান অংশীদারিত্বের মুশারাকার অবদান মাত্র ০.৩২% (এক পার্সেন্টও নয়)ব্যাংকারদের কাছে এর অনেক ব্যাখ্যা থাকলেও এটাই সত্যি যে গেল চার দশকেও ইসলামী ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের মন মানসিকতায় দৃশ্যমান নৈতিক কোন পরিবর্তন আনতে পারেনি।

অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে মোট আমদানি পেমেন্ট হয়েছে ৮০৬.৪৩ বিলিয়ন টাকা, রপ্তানীতে বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে ৫৫২.৫২ বিলিয়ন টাকা।অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০২৩-এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকিং দ্বারা মোট রেমিট্যান্স সংগ্রহ করা হয়েছে ৩৫৩.৪৮ বিলিয়ন টাকা যা পূর্বের বছর একই প্রান্তিকে ছিল ২৫৬.৯১ বিলিয়ন টাকা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইসলামী ব্যাংকগুলোর বাজার হিস্যা ক্রমেই বেড়েছে।এককভাবে সারা দেশের রেমিট্যান্সের তুলনায় শুধু ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি.এর রেমিট্যাস হিস্যা ৪০.৭৪%।অন্যান্য ইসলামী ব্যাংক ও উইন্ডো বিবেচনায় নিলে এই হিস্যা প্রায় ৫৩% মধ্যপ্রাচ্যসহ যেসব দেশ থেকে সাধারনত রেমিট্যান্স প্রবাহ হয়,এটা ধরে নেয়া যায় যে ইসলামী ব্যাংকিং এর উপর এখনো প্রবাসী গ্রাহকদের আস্থা অব্যাহত আছে।

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক শতাব্দী পুরাতন অর্থনীতি বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘দ্য ব্যাংকার’ এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে ২০১২ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা এক যুগ ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডকে বিশ্বের ১,০০০ শীর্ষ ব্যাংকের তালিকায় একমাত্র ও প্রথম বাংলাদেশী ব্যাংক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে।

রেফারেন্সঃ 

Data Source: Quarterly Report on Islami Banking

Islamic Banking Wing.Research Department.Bangladesh Bank

 

লেখকঃ জামান শামস, কলাম লেখক এবং সাবেক এডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প, কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক!  আপনি আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ;  মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই ।  আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

আরও পড়ুন