।। মু. শামসুজ্জামান ।।
পেশা হিসাবে ব্যাংকিং যেমন চ্যালেন্জের তেমনি কঠিন পরিশ্রমের। এখনকার মতো তখনও এই সেক্টরে চাকরির চাহিদা বেড়েই চলেছিলো। কেন ? হিসাবটা সহজ। ব্যাংকের চাকরি কঠিন হলেও এখানে প্রাপ্তিও কম নয়। ব্যাংক জবে বেতন কাঠামো যেমন স্মার্ট অ্যামাউন্ট। বিশেষ করে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ভালোমানের সেলারি দিয়ে থাকে, তেমিন এ পেশার সামাজিক মর্যাদাও বেশি। ব্যাংকের জব বরাবরই সম্মানজনক একটা পেশা। তা ছাড়া অন্য করপোরেট হাউসগুলো থেকে ব্যাংক এমপ্লয়িদের ভালো সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে।
ঠিক এমন চিন্তা থেকে নয়,আমার ব্যাংকে প্রবেশের কারণ একদমই ভিন্ন। ছাত্রজীবনের উল্লেখযোগ্য সময়ই হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের সময়টা।মূলতঃ সবার মনেই তখন থেকে ভবিষ্যত পেশা উঁকি দিতে থাকে। ব্যক্তিগতভাবে আমি সবসময়ই নির্মল চাঁপা স্বভাবের।হৈ-হুল্লোড় একদমই পসন্দ নয়। তবু বন্ধুবান্ধব কম ছিলো না। প্রতিদিনই কম-বেশী লাইব্রেরি ওয়ার্ক করতাম। রাজনীতি বিজ্ঞান পড়ার সাবজেক্ট হলেও অর্থনীতি ও ব্যাংকিং এ ঝোঁক ছিলো । বিশেষ করে ইসলামী অর্থনীতির বাস্তবায়নের উপর তখন থেকেই পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিলো।
আরও পড়ুন- পেশা হিসাবে ব্যাংকিং কতটা নির্ভরযোগ্য ?
এমনই এক প্রেক্ষাপটে ১৯৮৩ সালের ৭ মে দৈনিক বাংলাদেশ অবজার্ভার পত্রিকায় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড প্রথম ব্যাচ প্রবেশানারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। যথারীতি আবেদন করি। ২৩ জুলাই ১৯৮৩ ঢাকা কলেজে প্রায় তিন হাজার আবেদনকারীর লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। একই সময় পরদিন,মনে আছে; আমাদের মাস্টার্স দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা ছিলো। ফলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আশা ঝুঁকি বিধায় অনেকেই আসতে পারেন নি। আমার ছাত্রজীবনের অন্যতম বন্ধু এবং পরে ইসলামী ব্যাংকের সহকর্মী সৈয়দ নাসিরের অণুপ্রেরণা ও সে জোর না খাটালে হয়তো আমারও আসা হতো না।
তখন ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে তিনজোড়া রেল চলতো। রাতে ঢাকা মেইল,দুপুরে গ্রীন এরো আর প্রভাতে উল্কা এক্সপ্রেস। সিদ্ধান্ত হলো আগের দিন রাতের ট্রেনে করে পরদিন প্রভাতে ঢাকা পৌছবো। পরীক্ষা শেষে ঐ দিনই বেলা সাড়ে বারোটার গ্রীন এরো ধরে চট্টগ্রাম পৌছবো। তাই হলো। পরীক্ষার তেমন প্রস্ততি না থাকলেও ছাত্রজীবনে পড়া ইসলামী সাহিত্য বেশ কাজ দিয়েছিলো।
ঠিক ছ’মাসের মাথায় রেজাল্ট হয়। ১৯ জানুয়ারী ১৯৮৪ তারিখে এপয়েন্টমেন্ট হয় ২৯ জনের। বলে নিই,এর আগে ১৬ নভেম্বর ১৯৮৩ মৌখিক সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। সেটি জীবনের প্রথম চাকুরীর সাক্ষাৎকার। কাজেই ভীষণভাবে নার্ভাস তো অবশ্যই। ভাইবা বোর্ডে বারোজন পরিচালক ও তখনকার ইপি এম এ করিম ও ইভিপি আজিজুল হক স্যার মিলে অনেক শক্তিশালী। আমি পলিটিক্যাল সাইন্স বলাতে সব স্যারই কেমন যেনো নড়ে চড়ে বসলেন মনে হলো। প্রশ্ন সবাই করলেন তবে “সভরেইনিটি” নিয়েই প্রশ্ন ছিলো বেশী। কেবল আজিজুল হক স্যার ইসলামী ইকোনমির কার্যকর কয়েকটি বৈশিষ্ট সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। দীর্ঘ ভাইবা শেষে অপেক্ষমানরা জিজ্ঞাসা করলে কিছুই বলতে পারিনি।
তখন “বিআরসি” এর বিজ্ঞাপনে সমান্তরাল সরকারী ব্যাংক গুলোতেও নিয়োগ হয়। আমারও জনতা ব্যাংকে পিও হয়েছিলো। কিন্ত ইসলামী ব্যাংক ছিলো পছন্দ ও আরাধ্যের সর্বাগ্রে। ব্যাংকে নিয়োগপত্র পেয়ে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। যে চাকুরীর জন্য বহু তাহাজ্জুত,নফল রোজা আর কুরআন খতম জমা করেছিলাম তার ফলাফল হাতে পেয়ে কার না খুশি লাগে ! মনে পড়ে, আমার বাবা সবচেয়ে বেশি খুশি হয়ে সেদিন শুকরানা নামাজ আদায় করেছিলেন।
যোগদানের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি অবধি ছিলো । তবুও প্রথম দিন অর্থাৎ ৫ ফেব্রুয়ারিই বেশিরভাগ যোগ দেয় । আমিও তাদের মধ্যে ছিলাম। এইচ আর হেড শ্রদ্ধেয় তাজুল ইসলাম স্যার অমায়িক ও সুন্দর আচরণ দিয়ে ভুলিয়েই দিয়েছিলেন- কর্মকর্তা আর কর্মচারী সম্পর্ক। সামান্য ব্রিফ শেষে হেড অফিস থেকে আমাদের পাঠিয়ে দিলেন লোকাল অফিসে। তখনকার একমাত্র শাখা এটি । এখন এটি আয়তন ও পারফরম্যান্সে আমাদের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির সবচেয়ে বড় শাখা । কেউ কেউ বলেন, ‘এটি আলাদা একটি ব্যাংক।’
-চলতে থাকবে ইনশাআল্লাহপরবর্তী পর্ব-ইসলামী ব্যাংকিং পেশায় তিন যুগ (১৯৮৪-২০১৯) ।। দ্বিতীয় পর্ব
লেখকঃ মু. শামসুজ্জামান, সাবেক এডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি
ফেসবুকে লেখক–Zaman Shams
মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সমাজ,পরিবার ও আত্মউন্নয়ন মূলক অসাধারণ লেখা ও আর্টিকেল পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi এ লাইক দিয়ে ফেসবুকে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন।প্রিয় লেখক! আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে- [email protected] ও [email protected] ; প্রিয় লেখক ও পাঠক আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম এ যুক্ত হয়ে আমাদের সাথেই থাকুন ।