Ads

সম্মানের জায়গাগুলো সংকুচিত হচ্ছে যেভাবে

।। মোঃ শরীফ হোসেন ।।

এক সময় সমাজে কিছু সম্মানীয় চরিত্র বিদ্যমান ছিল। সমাজের সবাই দল মতের উর্ধ্বে তাদের সম্মান করতো যেমন: শিক্ষক, মন্ডল (বিচার কাজে দক্ষ একদল গ্রাম্য মুরুব্বি), বয়স্ক ব্যক্তি, আলেম ইত্যাদি। তারাও তাদের সম্মানের জায়গাটা বজায় রাখার চেষ্টা করতো। সমাজ যেমন তাদের সম্মান দেখাতো তেমনি সমাজের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা ছিল। তখন মানুষ দলীয় চিন্তাভাবনা কম করতো। গত ২০ বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদের ইলেকশনে কোনো নৌকা বা ধানের শীষ ছিল না ফলে সেখানে দলীয় ব্যক্তি না হয়ে এলাকার প্রভাবশালী এবং অনেক ক্ষেত্রেই এলাকার জনপ্রিয় ব্যক্তিরাই চেয়ারম্যান বা মেম্বার হত। আজ গ্রামের একজন অশিক্ষিত লোকও নৌকা বা ধানের শীষে আক্রান্ত। দলীয় চিন্তা আর সংকীর্ণতার বাইরে ন্যায় বা সত্য নামক কোনো বস্তু চিন্তা করতে পারে না।

আমার এই লেখা মাত্রই কাল সমাজ পরিবর্তন হয়ে যাবে তা নয়, তবে দু:খবোধ হতেই পরিবর্তনের চিন্তা আসে। সেই দু:খবোধ ছড়ানোর অভিপ্রায় বলতে পারেন।

শিক্ষকদের প্রভাব ছিল ছাত্রদের উপরে বিশালভাবে। কেউ যদি বলতো আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সবাই সম্মানে দাড়িয়ে যেত। এমনকি প্রাইমারী স্কুলের একজন শিক্ষককেও মানুষ অসম্ভব সম্মান করতো। আমরাতো শিক্ষক নজরে আসলে সাইকেল হতে নেমে পড়তাম, শিক্ষকের সামনে সাইকেল চড়া (তবে এখনকার মত তখন শায়খ কম ছিল, তারা তখন ফতোয়া দেয়নি শিক্ষক দেখে সাইকেল হতে নাসা যাবে কিনা?)। আজ ঘরে ঘরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাইভেট হিসেব করলেতো জনে জনে। শিক্ষকদের মধ্যে সে সময়েও অযোগ্যতা হয়তো কিছু ছিল কিন্তু ছাত্রদের প্রতি মমত্ববোধ ছিল ১০০ তে ১০০। তারা চাইতো তার ছাত্ররা কিছু করুক। দল হিসেবে ছাত্রকে পাশ করাতে হবে এ নজীর কখনো দেখিনি। কয়েক বছর আগে বুয়েটের ভিসি তার দলীয় ছাত্রের মার্কশীট নিজ হাতে টেম্পারিং করেছিলেন। আগে ভিসিদের দুর্নিতীর ধরণ ছিল এই রকম যে সে একটা ভাল ছেলেকে শিক্ষক বানিয়ে তার মেয়েকে বিয়ে দিত বা তার বোন বা শালীর ছেলেকে সেকশন অফিসার বানাতো। এখনো আমাদের সাথে সেসব ভিসিদের পরিচয় রয়েছে তাদের সম্পদ তাই সত্যায়ন করে। ভিসির সফলতা বিচার হত তিনি শিক্ষা ও গবেষণায় কতটুকু উন্নত করেছেন।

আরও পড়ুন-সভ্যতার সারথি মুসলিমরা কেন সভ্যতাকে ভয় পায়!

এখন ভিসিরা নিয়োগ হয় নাকি টাকা দিয়ে, তারা শিক্ষা-গবেষণা নিয়ে সামান্যতম পেরেশান নন। তারা পেরেশান কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিল্ডিং বানানো যাবে। আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঝে কিছু গাছপালা ছিল এখন তা কেটে ১০-১৫ তলা বিল্ডিং উঠাতেই ব্যস্ত। সেসব টাকা নিয়ে দলীয় ছাত্রদের সাথে নিয়মিত বসসা চলে। কারণ এক সময় ছাত্র নেতারা এসব জায়গার কনট্রাকটরের নিকট হতে কিছু টাকা খেত এখন ভিসিরিা সরাসরি খান।

সমাজে বুদ্ধিজীবি নামক একটি গ্রুপ ছিল যারা হয়তো কোনো দল করতো কিন্তু দেশ ও আদর্শের প্রশ্নে দলের উর্ধ্বে থাকতেন। আজ তারাও লালায়িত হয়ে তাকিয়ে থাকে যে টাকা দিবে তার দিকে কথা বলবে। কিসের নীতি নৈতিকতা। ধানমন্ডিতে একটি প্লট কিংবা গুলশানে একটি ফ্ল্যাটের বিনিময়ে দেশ বিক্রি খুব মামুলি একটি বিষয়। তাদের চিন্তা দেশ হতে দু পায়সা কামাতে পারলেই কানাডায় পড়া ছেলে বা মেয়ে ও তার স্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দিব, দেশ দিয়ে কি হবে? আমার সন্তানতো এসব চোরের দেশে থাকবে না।

সমাজে পেশাজীবি শ্রেণির তৎপরতায় এক সময় বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়ন নামক বস্তুটি দেখা দিত। তারাও এখন ব্যস্ত, তবে ব্যক্তি স্বার্থ নিয়ে। দেশের প্রয়োজন তাদের এখন আর কাঁদায় না। এখন কোনো নতুন কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের চাইতে আমদানীকারকের আমদানীতে স্বাক্ষর দিলে গুলশানে ফ্ল্যাট হয়, রাস্তার বিটুমিন ৪০ ডিগ্রিতে গলে কিন্তু টাকার কারণেই, জ্বরের মত ঠুনকো রোগে ১৫ টা টেস্ট করতে হয় কারণ এই গরমে সেই কোম্পানি দুটো জেনারেল এসি সরবরাহ করেছে৷

আরও পড়ুন-আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কোন পথে যাচ্ছে?

আলেম সমাজের ভূমিকার কারণে নৈতিকতার চর্চা ছিল সমাজে। তারা নিজেরা আর্থিক অবস্থা নিয়ে ভাবতো না আর জনগনও তাদের আর্থিক সঙ্গতি দিয়ে বিচার করতো না। এখন সময়ের আবর্তে সেই আলেমরাও রাষ্ট্রশক্তির সাথে অনুগ্রহ লাভ করতে চাই। সুবিধার বিনিময়ে ধর্ম বিক্রি করতে সামান্য পিছপা হন না। এখন তাই আলেমদের কোনো মূল্যায়ন হয়না। তাদের কথা আমজনতা শোনে না। সবার মত তারাও বিক্রি হয়ে গেছে। রিয়ালের আকর্ষণে বহু সম্মানিত আলেম সহজেই ঈমান বিক্রি করে৷

একটি জাতি ধ্বংসের জন্য যতগুলি উপাদান লাগে সবটাই আমরা অর্জন করেছি। এখন বাকি শুধু আত্মহত্যা। আমরা একসাথে সিদ্ধান্ত নিব যে এই জাতি হিসেবে (মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট বাংলাদেশি হিসেবে) আমরা আর থাকতে চাই না। ব্যস সব হিসাব পরিস্কার। সবাই খুশি। টাকা পেলে দেশের কথা কেউ চিন্তায় আানে না। সবকিছুর উপর মূল্যায়ন হয় টাকার। যার টাকা আছে তার সম্মান আকাশসম। এখন টাকা থাকলে কোনো কুকর্মের জন্য সম্মান যায় না।

লেখকঃ উন্নয়ন গবেষক ও এফএভিপি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা,গল্প,কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক!  আপনি আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন,“তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) ।আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

ফেসবুকে লেখক মোঃ শরীফ হোসেন

আরও পড়ুন