Ads

আবু বকর রা. এর প্রথম ভাষণ থেকে বিশ্বনেতাদের শিক্ষা

।। জামান শামস ।।

পৃথিবীর ইতিহাসে বিশ্বনবির পর অনন্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, মাধুর্য ব্যবহার, ব্যক্তিত্বের বলিষ্ঠতা, অগাধ জ্ঞানের গভীরতা, কালজয়ী আদর্শিক একনিষ্ঠতা, কুরআনের নীতি-জ্ঞানে পরিপক্বতা, দায়িত্ব পালনে কর্তব্য-নিষ্ঠা, অধিকার বস্তবায়নে ত্যাগের মহিমা আর নিঃস্বার্থ প্রজা পালনে সমগ্র পৃথিবীব্যাপী যত রাষ্ট্রনায়ক সুখ্যাতি অর্জন করেছেন তাঁদের মধ্যে সর্বপ্রথম যাঁর নামটি শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয়, তিনি হলেন ইসলামি খিলাফাতের প্রথম খলিফা, হজরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু।

রাসূল (সাঃ)-এর মিরাজের (উর্ধ্বগমন আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের জন্য) কথা শোনামাত্র বিনা বাক্যে বিশ্বাস স্থাপন করার কারণে রাসুল (সাঃ) হযরত আবু বকর (রাঃ) কে সিদ্দিক উপাধি তে ভূষিত করেন। হযরত আবু বকর (রা) রাসুল (সাঃ)-এর জীবনসহচর ও ইসলামের একনিষ্ঠ সেবক ছিলেন। নেতৃস্থানীয় ও বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে তিনি সর্বপ্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি আশারায়ে মুবাশ্বারাগণেরও একজন। ইসলামে দানশীলতায় তাকে কেউ এখন পর্যন্ত অতিক্রম করতে পারেনি।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় তিনিই ছিলেন গোটা মুসলিম উম্মাহর নেতা। তাঁর ওফাতের পর দাফন শেষ হওয়ার আগেই পরবর্তী খলিফা নির্ধারণ নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। মদিনার আনসাররা ‘সাকিফা বনু সায়িদা’ নামক স্থানে একত্রিত হয়। সেখানে কিছু সংখ্যক মুহাজিরও ছিলেন। আনসাররা অভিমত দিলেন যে, পরবর্তী খলিফা তাঁদের মধ্য থেকেই নির্বাচিত হোক। মুহাজিররা এর প্রতিবাদ জানালেন। দু’পক্ষ থেকে দু’জন খলিফা নির্বাচনের দাবিও কেউ কেউ জানালেন। এভাবে একটি গুরুতর পরিস্থিতির সৃষ্টি হল।

খবর পেয়ে আবু বকর, উমর ও আরো কয়েকজন মুহাজির সাহাবী সেখানে গেলেন। আবু বকর (রাঃ)একটি চমৎকার ভাষণ দিলেন। তাঁর ধীরতা ও যুক্তি-প্রমাণের কাছে সবাই নতি স্বীকার করল। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু খলিফা হিসাবে আবু বকরের নাম প্রস্তাব করলেন ও প্রথমেই তাঁর হাতে বাইয়াত নিলেন। এরপর সকলেই বাইয়াত নিলেন। এভাবে ইসলামের প্রথম খলিফা মনোনীত হলেন আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু।

খলিফা মনোনীত হওয়ার পর তিনি একটি সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন, যাতে একজন খলিফার দায়িত্ব এবং জনগণের কর্তব্য সম্পর্কে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। পাশাপাশি এই ভাষণটিতে রয়েছে বিশ্বের সমস্ত নেতৃবর্গের জন্য উত্তম শিক্ষা। তিনি বললেন,

“হে লোকসকল, আমাকে তোমাদের উপর কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আমি তোমাদের সর্বোত্তম ব্যক্তি নই। সুতরাং যদি আমি সঠিক কাজ করি তবে আমাকে সাহায্য করবে, আর যদি ভুল করি তবে আমাকে সংশোধন করে দিও।

সততা একটি পবিত্র আমানত এবং মিথ্যা হচ্ছে বিশ্বাসঘাতকতা। তোমাদের দুর্বলরা ততক্ষণ পর্যন্ত সবল যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তাকে তার অধিকার আদায় করে দেই ইনশাআল্লাহ এবং তোমাদের শক্তিশালীরা ততক্ষণ পর্যন্ত দুর্বল যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তাদের কাছে থেকে পাওনা আদায় করে দেই ইনশাআল্লাহ।

কোনো জাতি জিহাদ ত্যাগ করলে অবশ্যই আল্লাহ তাকে লাঞ্ছিত করে ছাড়বেন। কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়লে আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে পরীক্ষায় ফেলবেন। আমাকে ততক্ষণ মেনে চলো যতক্ষণ আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে মেনে চলি। যদি আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে মেনে না চলি, তাহলে আমার প্রতি তোমাদের আনুগত্যের কোনো বাধ্যবাধকতা থাকবে না।”

আবু বকর খলিফা হওয়ার আগে মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্বে ছিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। একজন নবির নেতৃত্ব ও উম্মতের নেতৃত্বের মাঝে পার্থক্য আছে। নবীর প্রদর্শিত পথে একজন সাধারণ মানুষ কিভাবে নেতৃত্ব দেবে তা দেখিয়ে গেছেন আবু বকর। যেসব মূলনীতি তাঁর ভাষণের মধ্য থেকে বেরিয়ে আসে, তা উম্মাহর নেতাদের জন্য সর্বকালে অনুসরণীয়।

আবু বকর (রা.) স্পষ্টতই বুঝিয়ে দিলেন যে শরিয়তের উৎস কুরআন ও সুন্নাহ। আনুগত্য ততক্ষণ, যতক্ষণ কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নেতৃত্ব ছিল প্রশ্নাতীত, কারণ আল্লাহ নিজে তাঁকে নির্দেশ দিয়েছেন,নিয়ন্ত্রন তরেছেন ও সংশোধন করেছেন। মুসলিম নেতা জবাবদিহি করবে উম্মাহর কাছে, উম্মাহর দায়িত্ব নেতাকে সঠিক পথে চালানো। সুবিচার ও সমতা হবে ইসলামি রাষ্ট্রের ভিত্তি। নেতা ও জনতার মাঝে সম্পর্ক হবে সততা ও বিশ্বস্ততার।

আজ মুসলিম অধ্যুসিত রাষ্ট্রসমূহ ইসলামী কানুনের ভিত্তিতে পরিচালিত নয়,এমনকি ইসলামী অনুশাসনের প্রতি অনেকেরই আস্থা নেই। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে মুসলিম জাতি রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে হয় ধর্ম নিরপেক্ষ নতুবা বিজাতীয় মতবাদে প্রভাবিত।ফলে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বপালনে কারো মধ্যেই আল্লাহকে ভয় করে চলার নীতি দৃশ্যমান নয়। পরকালের ভীতি থাকলে স্বভাবতঃই একজন ব্যক্তি দায়িত্বশীল ও দুর্নীতিমুক্ত হতে বাধ্য। বাংলাদেশসহ বিশ্বের আরো রাষ্ট্রে যেখানে ইসলামী চরিত্রের লোকেরা যে কয়দিন শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলো,তাদের কারো বিরুদ্ধে কোন দুর্নীতির কোন অভিযোগ না থাকাই একথার প্রমাণ বহন করে।

আল্লাহ আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনায় নিযুক্ত দায়িত্বশীলদের সহীহ বুঝ দিন।আমিন।

 

লেখকঃ  জামান শামস, লেখক ও প্রাক্তন এএমডি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি

 

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সমাজ,পরিবার ও আত্মউন্নয়ন মূলক অসাধারণ লেখা ও আর্টিকেল পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi এ লাইক দিন।

প্রিয় লেখক ! আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected]

প্রিয় লেখক ও পাঠক আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম এ যুক্ত হয়ে আমাদের সাথেই থাকুন ।

 

আরও  জানুন-

আবু বকর সিদ্দিক রা

আরও পড়ুন