Ads

সন্তানকে দ্বীনদার হিসেবে গড়ে তুলবেন যেভাবে

।। জামান শামস ।।

আমরা যতটা শিশুদের মনোদৈহিক গঠন নিয়ে ভাবি ততটা বোধকরি তার দ্বীন শিখা নিয়ে ভাবি না।একইভাবে শিশু ভূমিষ্ট হবার পর থেকে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে যাবৎ প্লান করি কিন্ত তাকে বিশ্বাসী ও আল্লাভীরু বানাবার কোন প্লানই করি না। বস্তুবাদিতার করাল গ্রাসে আমরা ভুলেই আছি যে আমরা প্রত্যকেই দুনিয়া শেষে আল্লাহর কাছে ফিরে যাবো এবং আমাদের সন্তানেরাও।

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক সন্তানই ইসলামী ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে থাকে। অতঃপর তার মাতা-পিতা তাকে ইয়াহুদী, নাসারা অথবা অগ্নিপূজক বানিয়ে ফেলে। যেরূপে চতুষ্পদ জন্তু পূর্ণাঙ্গ জন্তুই জন্ম দিয়ে থাকে, এতে তোমরা কোন বাচ্চার কানকাটা দেখতে পাও কি? এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিলাওয়াত করলেনঃ

فِطْرَةَ اللهِ الَّتِيْ فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لَا تَبْدِيْلَ لِخَلْقِ اللهِ ذلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ

’’আল্লাহর ফিতরাত, যার উপর তিনি মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টি রহস্যে কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল প্রতিষ্ঠিত দীন।’’ (সূরাহ্ আর্ রূম ৩০: ৩০)

[বুখারী ১৩৫৮, মুসলিম ২৬৫৮, আহমাদ ৭১৮১, ইরওয়া ১২২০, সহীহ আল জামি‘ ৫৭৮৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ১২৯।

সুতরাং এটা মাতা পিতার দায়িত্ব তাকে দ্বীনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া।এটা ফরজ দায়িত্ব এবং এটাই প্যারেন্টিং। হাদীসের ভাষ্যমতে,পিতামাতাই তাকে ইহুদী খ্রীষ্টান বানায়- কত সাংঘাতিক কথা। এর সঙ্গে রিলেট করা আয়াতটি দেখুন-আল্লাহ ফিতরাতের উপর মানবজাতিকে বানিয়েছেন। তার মানে মানব শিশুর স্বভাবগুণ এমন যে তাকে যা কিছু শিক্ষা দিবে সে সেটাই গ্রহন করবে। আল্লাহর কথা কত বাস্তব !!

আরও পড়ুন- আপনার শিশুর আপনিই শিক্ষক

মুসলিম বাবা-মা হিসেবে কখন থেকে বাচ্চাকে ইসলাম সম্পর্কে ধারণা দিবো? যত দ্রুত তত উত্তম। মনে হতে পারে বাচ্চা বুঝবে না, কিন্তু ব্রেইন ঠিকই ক্যাচ করে নিবে। এখানে একটা রাফ গাইডলাইন দেয়া হচ্ছে এখানে বাচ্চার ১৮-৩৬ মাস বয়সী হলেই এই কাজগুলি শুরু করে দিতে পারেন ইনশা আল্লাহ ।

১.ঈমান সম্পর্কিত শিক্ষা

এ পর্যায়ে মানুষের সৃষ্টি,আকাশ ও জামিনসহ সকল সৃষ্টির উদ্দেশ্য তার কাছে গল্পের আকারে উপস্থাপন করুন। আল্লাহ কে, তিনি কোথায় থাকেন এবং তাঁর গুণাবলী বলুন। কোন কোন বিষয়ের উপর আমাদের বিশ্বাস আনতে হয় তা বলুন।

২.আযকার/ ডেইলি দু’আ শিক্ষা

ঘুম থেকে উঠার দু’আ, ঘুমাতে যাওয়ার আগের দু’আ।খাওয়ার আগের দু’আ, খাওয়ার পরের দু’আ।হাঁচি দিলে কি বলতে হয়,সালামের প্রচার শেখানো, ছোট-বড় সবাইকে সালাম দেয়া। বাথরুমে যাওয়ার দু’আ, বের হওয়ার দু’আ,বাসা থেকে বের হওয়ার দু’আ,সব কাজ করার আগে বিসমিল্লাহ বলা,যে কোন কাজ করবো বলার আগে ইনশা আল্লাহ বলা, সুন্দর কিছু দেখলে মাশা আল্লাহ বলা, কোন কিছু গিফট পেলে জাযাকাল্লাহু খায়ির বলা।

৩.কুরআন শিখানো

রেগুলার কুরআন বাচ্চাকে সাথে নিয়ে পড়ুন। আপনি যখন পড়বেন বাচ্চাকে তখন পাশে বসিয়ে রাখতে পারেন।এতে সে কুরআনের প্রতি আগ্রহী হবে। ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসী, সূরা ফাতিহা, কূল যুক্ত সূরা বাচ্চাকে সাথে নিয়ে পড়েন। খুব দ্রুত দেখবেন বাচ্চা আপনার সাথে পড়ছে।

৪.আখলাকের বিষয়গুলো জানানো

খাবার এবং পানি ডান হাতে খাওয়া, বসে খাওয়া এবং বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া।যে কোনও কাজ করার আগে বাবা-মায়ের পারমিশন নেয়া, “প্লিজ” বলতে শেখানো। ভুল হলে “সরি”। যত ছোট বয়সই হোক, পোশাক বদলানোর সময় লজ্জ্বার ধারণা দেয়া। অন্যদের সামনে বাচ্চার ডায়াপার চেইঞ্জ করবেন না।

আরও পড়ুন- বাবা-মা সন্তানের মোবাইল বা স্ক্রিন আসক্তি তৈরি করছে যেভাবে

৫.শেয়ারিং শেখান

যে কোন কিছু অন্যদের সাথে শেয়ার করলে প্রশংসা করুন। ভালো কাজগুলোকে এপ্রিশিয়েট করুন এবং এভাবে রিলেট করুন, আল্লাহ এটা পছন্দ করেন, রসূল (সাঃ) এভাবে বলেছেন…মন্দ কাজগুলো সম্পর্কে ধারণা দিন এবং সেগুলোতে না বলতে শিখান।

৬. নবী সাঃ ও সাহাবীগণের সিরাহ বলুন

রসূল (সাঃ) এবং সাহাবীদের গল্প বলুন।ছোট হাদীসগুলো গল্পের মতো করে বলুন।কুরআনের ঘটনাগুলো নিজের ভাষায় গুছিয়ে বলুন।

৭.ইবাদাহগুলোর সাথে পরিচয় করান

নামায বাচ্চাকে সাথে নিয়ে পড়ুন। আপনি একা নামাজ পড়লে বাচ্চাকে পাশে রাখুন। মসজিদে হলে তাকে সঙ্গে করে নিন এবং পাশে রাখুন।না দাঁড়ালেও খেলার এরিয়া যাতে আশেপাশে থাকে।

বাবা-মায়েদের জন্য টিপস-

এই বয়সী বাচ্চাদের ধরে-বেঁধে শেখানোর কিছু নেই। নিজেদের লাইফে প্র্যাকটিস করলে, বাচ্চারা দেখেই শিখবে। নিজের লাইফে নাই কিন্তু আশা করি, বাচ্চাকে শেখাতে পারবো-এই চিন্তা থেকে বের হয়ে আসুন। আমি যদি চাই বাচ্চা ইসলামিক মাইন্ডের হবে, তাহলে আগে নিজেকেই সেই ছাঁচে গড়ে নিতে হবে। বাড়িতে নামায পড়ার ক্ষেত্রে, সূরা জোরে পড়তে পারেন যাতে বাচ্চা শুনতে পায়। মাসনূন দু’আগুলো বাচ্চাকে সাথে নিয়ে পড়ুন। বাচ্চারা শুনতে শুনতেই শেখে। আলাদা করে শেখানোর দরকার নেই। সর্বোপরি বাচ্চাকে ভালো মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করুন, সাথে দোয়াও অব্যাহত রাখুন।বাই প্রোডাক্ট হিসেবে ভালো মানুষ সে এমনিতেই হবে, ইনশা আল্লাহ।

লেখকঃ জামান শামস, কলাম লেখক এবং সাবেক এডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা,গল্প,কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক!  আপনি আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন,“তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) ।আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

আরও পড়ুন