Ads

আপনার শিশুর আপনিই শিক্ষক

।। শহীদ সিরাজী ।।

সন্তানকে ভলবাসে না এমন কি কেউ আছে। এ ভালবাসা এতোটায় মুল্যবান যে গণিতের কোন ফর্মুলায় কোন আংকিকের পক্ষে তার হিসাব করা সম্ভব নয়। এমন ভালবাসা নিয়েও এখন অনেক মা-বাবা জুয়া খেলছে; আবার অনেকে উদাসীন। হয়তো কেউ কেউ এ কথাকে হাস্যকর বলছেন ।  নিজের সন্তানকে ভালবাসবো না তা-কি হতে পারে? না-কি এর হিসাব দেওয়া যাবে? তবে যদি আপনারা এর ভালবাসার নমুনা দেখতেন তো নির্ঘাত আঁতকে উঠতেন। একবার দেখেই নিন না আপনি সন্তানকে কতটা ভালবাসেন? নিচের প্রশ্নের নির্মোহ জবাব দিলে তার উত্তর হয়তো কিছুটা পেয়ে যাবেন –

– আপনি আপনার সন্তান নিয়ে কি উদ্বিগ্ন?

– আপনি কি আপনার সন্তানকে সময় দিচ্ছেন?

– আপনি তাদের কি পড়াচ্ছেন? কোন শিক্ষকের কাছে পড়াচ্ছেন?

– আপনার সন্তান কোন ধরনের বন্ধুর সংগে মিশছে তা কি খেয়াল করছেন?

– আপনি কি আপনার সন্তানের বয়স বিবেচনা করে যথাযথ ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা দিচ্ছেন?

– আপনি কি তার নৈতিক শিক্ষা নিশ্চিত করছেন?

– সন্তানের হাতে কি মোবাইল তুলে দিচ্ছেন? কিংবা দিলেও তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করছেন?

– তাকে বাসায় একা রেখে কি বাইরে যাচ্ছেন? কিংবা বাসার কাজের মেয়ের তত্বাবধানে ছেড়ে  দিচ্ছেন?

এ সব প্রশ্নের উত্তর কি আপনার সন্তোষজনক? না হলে তো বলতেই হবে সন্তান নিয়ে আপনি জুয়া খেলছেন কিংবা আপনি উদাসীন। এমন যদি হয় তো তা  আপনার সন্তান ও আপনার জন্য যেমন আত্মঘাতি তেমন হবে দেশ ও জাতির জন্যেও সর্বনাশের বিষয় । এতকিছু সতর্কতায় হয়তো আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করতে পারে তবে উদাসীন হলেই সর্বনাশ নিশ্চিৎ হয়ে যাবে। সন্তান আপনার ভাল লাগা, ভালোবাসা, আনন্দ! তাকে আপনি অবহেলা করতে পারেন না কিংবা উদাসীনও থাকতে পারেন না। তাকে যথাযথ শিক্ষা দেয়া আপনার দায়িত্ব। আর এজন্য আপনাকে জানতে হবে অনেক কিছু ।

আপনাকে যা জানতে হবে –

বিশেষজ্ঞদের মতে,শিশুর বুদ্ধির বিকাশ তার মগজের নিউরনের ওপর নির্ভরশীল। তা শুধু গর্ভকালীন ও প্রথম পাঁচ বছরই সম্পন্ন হয়। গবেষণায় দেখা যায় মানুষের ৯০ ভাগ মস্তিষ্ক গঠন হয়ে যায় পাঁচ বছর বয়সের মধ্যেই। তাই শুরু থেকেই মানে শিশু বয়স থেকেই মস্তিষ্ক গঠনে ও বৃদ্ধিতে যত্ন নিতে হবে। এজন্য, জন্মের পর প্রথম এক হাজার দিন প্রতিটা শিশুর জন্যই কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝতে হবে । এটিই তাদের বেড়ে ওঠা, শেখার সময়। এসময় শিশুরা হামাগুড়ি দেয়া, দাঁড়ানো, হাঁটা, দৌড়ানো, কথা বলা, কানে শোনা, ঘ্রাণ নেয়া এগুলো শেখে। অনেক গবেষক বলেন শিশু বড় হলে সে কি হবে বা কেমন হবে তা নির্ধারণ হয় তার তিন থেকে ছয় বছর বয়সে। এ জন্য এ সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় অসচেতন থাকলে পরবর্তীতে তা আর পুরণ করা যায় না ।

তাই এ সময় সচেতন থাকতে হবে। বাবা বা মা হিসাবে এ সময়ে আপনি তাকে কি শেখাচ্ছেন সেটা মুখ্য বিষয়। কিভাবে তাকে গড়ে তুলছেন তার উপর নির্ভর করছে আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ। এ বয়সেই বিকাশ ঘটে তার বুদ্ধিমত্তা, আচার- আচরণ, আত্মবিশ্বাস, চরিত্রের নানা দিক। গঠন হয় শিশু জীবনের পাটাতন। এরপরে তার উপরে ধীরে ধীরে তৈরি হয় জীবন প্রাসাদ। এরপরে আপনি নিজে, পরিবারের সকলে, সমাজ বা শিক্ষা ব্যবস্থা সকলে মিলে যত চেষ্টায় করুক না কেন তার ভেতরে স্থায়ী হয়ে যাওয়া দৃষ্টিভঙ্গি, বুদ্ধিমত্তা, আচার-আচরণ, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আর পুরো বদলে ফেলতে পারবেন না। কথায় বলে ‘গোড়ায় গলদ’! আপনি যদি উদাসীন থাকেন কিংবা অন্যের উপর সন্তানের শিক্ষার ভার দিয়ে ঘুমিয়ে যান তাহলে আপনার এই গলদই সন্তানের জীবন বদলে দেবে।

আরও পড়ুন- সঠিকভাবে সন্তান লালান-পালনের ৮ টি উপায়

 সন্তানকে আপনি কেমন দেখতে চান?

তো প্রশ্ন হচ্ছে আপনার সন্তানকে আপনি কেমন দেখতে চান? বড় হয়ে সে একজন খুনি হোক কিংবা সন্ত্রাসী বা ধর্ষক হোক ; নিশ্চয় তা চান না। কোন বাবা-মা’ই এমন নিকৃষ্ট সন্তান চান না। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলছেন মানুষ পৃথিবীর সেরা জীব তবে কিছু মানুষ রয়েছে যারা নিকৃষ্ট। তিনি বলছেন – ‘তারা (মানুষ হয়েও) পশুর মতো,বরং পশুর চেয়েও বেশি নিকৃষ্ট।’ ( সুত্র: আরাফ – ১৭৯)

তার মানে সব মানুষই সৃষ্টির সেরা নয় কিছু মানুষ এমন। প্রশ্ন হচ্ছে কারা এমন নিকৃষ্ট? কেনই বা নিকৃষ্ট? আমাদের খুঁজে দেখতে হবে। কারা মানুষ এবং কারা পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট। এদের মধ্যে মূল পার্থক্যই বা কি! মহান আল্লাহই এর পার্থক্য করেছেন। বলেছেন পার্থক্য হচ্ছে অন্তর। সত্য-মিথ্যা যাচাই করার অন্তর। আল্লাহ বলেন – ‘তাদের অন্তর আছে অথচ তারা তা দ্বারা উপলব্ধি করে না’ (সুত্র: আরাফ ১৭৯)

প্রকৃত অর্থে এটাই হলো মানুষের মনুষত্বের পরিচয়। তার মানদণ্ড হলো সত্যকে উপলব্ধি করা। তারাই প্রকৃত জ্ঞানী। আবু জেহেল জ্ঞানী হয়েও তার অন্তর সত্যকে উপলব্ধি করতে পারেনি। এজন্য আবুল হাকাম থেকে আবু জেহেল মানে মূর্খদের পিতা। আসলে সে মুর্খদের পিতাতে পরিণত হয়েছিলো। প্রকৃতপক্ষে এ জ্ঞান বা উপলব্ধি না থাকলে তারা পশুর সমান বরং তার চেয়েও অধম।

আপনি যেহেতু আপনার সন্তানকে ভালবাসেন এবং তার কল্যাণ চান; তো এ সব বিষয় আপনাকে জানতে হবে। জানতে হবে আপনার সন্তান কিভাবে ভালো মানুষ হতে পারে । আবার কি কারণেই বা নিকৃষ্ট মানুষে পরিণত হতে পারে। বাস্তবতা প্রমাণ করছে এ ব্যাপারে অনেক পিতা-মাতার মধ্যে যথেষ্ট ঘাটতি আছে।

নিজের ব্যাপারে আপনি যতটা যত্নশীল, আপনার সন্তানের ব্যাপরে কি ততটা যত্নশীল? এ প্রশ্ন আসতেই পারে। কারণ – আপনি চাকরি পাওয়ার জন্য ঘাম ঝরিয়েছেন। এখন তা রক্ষা ও প্রমোশনের জন্য ঘাম ঝরাচ্ছেন। ব্যবসায়ী হলে ব্যবসার প্রসারে দিন রাত পরিশ্রম করছেন। কাড়ি কাড়ি অর্থ জমাচ্ছেন। গাড়ি বাড়ি কিনছেন। সব ঠিক আছে ! তবে বাবা হিসাবে আপনি সন্তানকে কতটুকু সময় দিয়েছেন!

এ নিবন্ধের শুরুতে যে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল সেসব কতটুকু পূরণ করছেন? আবার কোন কোন মা খেয়ালের বসে কিংবা নেশায় (অন্য কারণও থাকতে পারে) সন্তানকে কাজের বুয়ার জিম্মায় বাসাতে রেখে চাকরি করছেন। তো আপনার সন্তানের ভালো সন্তান হবার সম্ভাবনা কতটুকু; তা কি ভেবে দেখেছেন?

এছাড়াও রয়েছে পারিপার্শ্বিক প্রতিবন্ধকতা 

শিশুর জন্মের পর পাঁচ বছর পর্যন্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে তার মস্তিস্কের ৯০% বৃদ্ধি হয়। তার বুদ্ধিমত্তা, আচার-আচরণ, আত্মবিশ্বাস, চরিত্রের নানাদিকের বিকাশ ঘটে অথচ সে সময় অনেক মা তার সন্তানের যথাযথ ব্যবস্থা না নিয়ে কাজের লোকের কাছে বাসাতে রেখে চাকরিতে বেরিয়ে যায়। সন্তান এতিমের মত বড় হতে থাকে।

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছিলেন, ‘তোমরা আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতি দেবো।’ Give me an educated mother, I shall promise you the birth of a civilized, educated nation./Let France have good mothers, and she will have good sons.

আমাদের শিক্ষিত মায়েরা প্রকৃত অর্থে সে ভুমিকায় রয়েছে কি-না তা একবার ভেবে দেখতে হবে। আপনার সন্তান কাদের সাথে মিশছে, সহপাঠিরা কেমন তা আপনাকে জানতে হবে। তারা খারাপ বন্ধু বা পরিবেশ পেলে বখে যেতে পারে। যদি সে বখাটে ছেলের সাথে মিশে তবে বখাটে হবে। নেশাখোরের সাথে মিশে তাহলে নেশাখোর হবে। চোরের সাথে মিশলে চোর হবে। আড্ডাবাজের সাখে মিশলে আড্ডাবাজই থবে। এটাই তো বাস্তবতা। আপনি যদি সে সুযোগ দেন বা খেয়াল না করেন তাহলে সন্তানের ক্ষতি ঠেকাতে পারবেন না। হাদিস অনুসারে উট বেঁধে রেখেই তো আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে।

আরও পড়ুন- বাবা-মা সন্তানের মোবাইল বা স্ক্রিন আসক্তি তৈরি করছে যেভাবে

আপনি সন্তানকে কি শেখাবেন?

সন্তান আপনার; আপনি তাকে কি শেখাবেন। কোথায় শেখাবেন। নিজে শেখাবেন বা কাকে দিয়ে শেখাবেন। এসব বিষয়ে আপনাকে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সন্তানের শিক্ষা কারিকুলাম, পাঠ্যবই এসবও আপনাকে দেখতে হবে। কোন অসংগতি আছে কিনা তা জানতে হবে। কতৃপক্ষকে জানাতে হবে। এসব ব্যাপারে উদাসীন থাকলে আপনার অজান্তেই অপূরনীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। যা আপনার সন্তানের জীবনকে ধ্বংস করে দিতে পারে। এর লক্ষণও দেখা যাচ্ছে।

এখন উন্মুক্ত মিডিয়ার যুগ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, টিকটক, নানা রকম ভিডিও ক্লিপে সবকিছুই দ্রুত গতিতে সকলের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। বর্তমান শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে নানান কথা হচ্ছে। যেমন –

১. সপ্তম শ্রেণির সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের শরিফ থেকে শরিফা হওয়ার গল্প নিয়ে চলছে আলোচনা, পর্যলোচনা, সমালোচনা। বলা হচ্ছে এসব ছেলেমেয়েদের মগজে ঢুকিয়ে তাদের লিঙ্গ সচেতনা করা হচ্ছে বা লিঙ্গভেদ তুলে দেয়া হচ্ছে। এটাতো ভয়বহ! এসব শিখে পরবর্তিতে তারা সমকামিতায় জড়াবে। লিভটুগেদার করবে, ব্যাভিচারে লিপ্ত হবে। সমাজ ধ্বংস হবে। এটা তো বাস্তবতা। কোমলমতি ছেলেমেয়েদের এসব কেন শেখানোর চেষ্টা চলছে? এতকিছু বিষয় থাকতে ছোট বাচ্চাদেরকে কেন ট্রান্সজেন্ডার শেখানো হচ্ছে?

এসব ভেবে অভিভাবকরা অন্তহীন দুশ্চিন্তায় হাবুডুবু খাচ্ছে। আপনি সন্তানকে ভালবাসেন, তার কল্যাণ চান বলে দাবি করলে এসব বিষয় জানতে হবে। সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

২. ষষ্ঠ শ্রেণির স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বইয়ের ৯৬ পৃষ্ঠাতে একটি ছেলে বন্ধু তার মেয়ে বন্ধুকে স্পর্শ করাকে নিরাপদ স্পর্শ বলা হয়েছে। কি ভয়ানক কথা। এটা  কি নিরাপদ! যৌনতা একটা উন্মাদনা। ভয়ানক নেশা। না হলে ধর্ষণ হচ্ছে কেন? কোন বরফ টুকরা কি আগুনের স্পর্শে না গলে বরফ হয়ে থাকতে পারে?

শুধু কি তাই! এই বইয়ের একটা পাঠের শিরোনাম হচ্ছে (পৃষ্ঠা ৮৯) চলো বন্ধু হই। সেখানে ছেলে ও মেয়ের ছবি দিয়ে বলা হয়েছে প্রয়োজনে না বলি, কী চাই তা বলি, অনুভূতি প্রকাশ করি। পুরো পাঠ পড়লে যে কেউ বুঝবে বিয়ে বহির্ভূত অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের দিকেই ইঙ্গি দিচ্ছে।

এ সব দেখে অবিভাবকগণ তো হতবাক। তারা বলতে বাধ্য হচ্ছে , কি ভয়নক ব্যাপার! দুধের শিশুদের এসব কি শেখানো হচ্ছে। কেন তাদের যৌন বিষয়ে শিখিয়ে কৌশলে পাপের দিকে, ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এ যেন আপনার সন্তানের সামনে দুধের পেয়ালা রেখে বলছে বিড়াল তুমি খেও না! বিস্ময়কর! ইংরেজীতে প্রবাদ আছে – When wealth is lost nothing is lost; when health is lost something is lost; when character is lost all is lost.

আপনি নিশ্চয় চান না আপনার সন্তানের অমুল্য সম্পদ চরিত্র ধ্বংস হোক। নষ্ট হয়ে যাক। তা সমাজ পরিবেশকে নষ্ট করুক। জাতি নষ্ট হয়ে যাক। এসব বিষয় আপনাকে জানতে হবে। তাদের কি পড়ানো হচ্ছে সে খবরও রাখতে হবে। নিজের সন্তানের শিক্ষক নিজেকেই হতে হবে। এছাড়াও ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বইয়ে ছেলেমেয়েদের বয়:সন্ধিকালীন স্পর্শকাতর বিষয়গুলোকে এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যাতে স্বভাবজাত লজ্জ্বা শরম কারো মাঝে থাকবে না।

আরও পড়ুন-সন্তানের সামনে নিজেরা কখনও লড়বেন না

ছেলেমেয়ে বিয়ে বহির্ভূত অবৈধ সম্পর্কে জড়ালে শাসন করা উচিৎ নয় বলে তাদের সাহস যোগানো হচ্ছে; যেন তারা নির্ভয়ে এ সব করে পরিবার সমাজকে নষ্ট ভ্রষ্ট করে জাহান্নাম বানাতে পারে। এছাড়াও মাদরাসার বইয়ের প্রচ্ছদে পর্যন্ত বাদ্য-বাজনার ছবি, ভেতরে হিজাব বিহীন ছবি, কখনো মহিলাদের অশ্লীল ছবি দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায়ও কি বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে দায়িত্ব শেষ করবেন? সেখানে কি পড়ানো হচ্ছে শিক্ষার কারিকুলাম কি তা আপনি জানবেন না? যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন না। তো আপনার সন্তান কি আদর্শ সন্তান হয়ে উঠবে? সে ব্যাপারেও আপনাকে সচেতন হতে হবে। এসব বিষয় শুধু জানাই যথেষ্ট নয়, তা রোধও করতে হবে। পাশাপাশি আপনার সন্তানের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ঘাটতি যা হচ্ছে তা পূরণের জন্য নিজেই শিক্ষা দিতে হবে।

সন্তানকে যে শিক্ষা দিতে হবে –

যে শিক্ষা বয়ে আনে কল্যাণ সন্তানকে সে শিক্ষা প্রদান করতে হবে। শিশুকাল থেকেই মূল্যবোধ ও নৈতিক শিক্ষা দিতে পারলে শিশু কল্যাণের পথে জীবন গড়ার সুযোগ পাবে। দেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের শিক্ষা দিলে কোমলমতি শিশু ধীরে ধীরে দেশের প্রতি ভালোবাসা ও সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে। তাদেরকে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, ধর্ম, সাহিত্য ইত্যাদি সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে; এতে দেশের প্রতি মমত্ববোধ সৃষ্টি হবে ।

মহান আল্লাহর প্রথম বাণী ছিল ‘পড়’। তিনি জীবনের সঠিক পথ পেতে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই আপনার সন্তানের প্রথম পাঠ হবে নিজ পরিবার থেকে এবং তা হবে মূল্যবোধের মৌলিক শিক্ষা। শিশুরা মা-বাবা, আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকেই প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ নেয়। চারপাশে যা কিছু দেখে তাই শিখে। তার বোধ-বুদ্ধি-বিশ্বাস অনুযায়ী তার আচরণবিধি গড়ে ওঠে। এসব শিক্ষা তাদের দিতে হবে।

পারিবারিক শিক্ষা দেয়া কতটা জরুরি এখন

এখন পারিবারিক শিক্ষা আরও বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে। সকলে বলছে বর্তমান শিক্ষা কারিকুলাম ধর্মহীনতার শিক্ষা দিচ্ছে। ভুল তত্ত্ব ও তথ্যে ভরপুর বই পড়ানো হচ্ছে। কোমলমতি ছেলেমেয়েদেরকে হাতে কাল্পনিক ও প্রমাণহীন তথ্যে ভরপুর বই দেয়া হচ্ছে।

এরপরেও রয়েছে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার। পড়াশোনার পরিবর্তে তারা মোবাইল ও নেট দুনিয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। এরপর রয়েছে পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন। পরীক্ষা না থাকা বা থাকলেও নামেমাত্র থাকা। সবকিছু মিলিয়ে আপনার সন্তানেরা ক্রমেই বইয়ের জগৎ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এতে তৈরি হচ্ছে মেধাশুন্য জাতি। এর প্রভাবও দেখা যাচ্ছে। সমাজে তৈরি হচ্ছে অস্থিরতা।তরুণ সমাজের মাঝে দেখা যাচ্ছে পারস্পরিক শ্রদ্ধাহীনতা; সম্মানবোধ ও সম্প্রীতির অভাব। এর কারণ আর কিছু নয়; ভুল বই পড়িয়ে ভুল শিক্ষা দেয়া ।  মূল্যবোধের শিক্ষা না দিয়ে কৌশলে অনৈতিক দেয়া। মূলত: এখন যে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে তা যথেষ্ট নয়; বলা যায় আংশিক এবং বৈষয়িক। এ শিক্ষায় আপনার সন্তান আদর্শ সন্তান হতে পারে না। এর পাশাপাশি সন্তানকে অবশ্যই আত্মিক শিক্ষাও দিতে হবে।

আপনার সন্তানের শিক্ষক আপনিই –

যেহেতু প্রতিষ্টান যথাযথ শিক্ষা দিচ্ছে না তো আপনাকেই এর দায়িত্ব নিতে হবে। সন্তানকে সর্বদা নজরে রাখতে হবে। আপনার সন্তান কী করছে, কী দেখছে, কার সংগে বন্ধুত্ব করছে, কী খাচ্ছে, পড়ছে কি-না, কী পড়ছে ইত্যাদি প্রতিটি বিষয় মনিটরিং করতে হবে।

এছাড়াও সন্তানকে সময় দিতে হবে। তার কথা শুনতে হবে, বকাবকি করা যাবে। কখনো কখনো সাথে নিয়ে খেলতে হবে। সাথে করে ঘুরতে যেতে হবে। গল্প করতে হবে। সাথে মসজিদে নিয়ে যেতে হবে। কোন কাজ খারাপ কোন কাজ ভাল তা শেখাতে হবে। আত্মবিশ্বাসী হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। ভাল বন্ধু হতে হবে। ভাল পরামর্শ দিতে হবে। শুধু প্রাতিষ্টানিক শিক্ষা নয় নৈতিক শিক্ষাও দিতে হবে।

আজকে এ সমাজ বা পরিবেশ থেকে সন্তানরা যে শিক্ষা পাচ্ছে তা যেমন পূর্ণ নয় তেমন যথাযথও নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে তা আরও ক্ষতি ডেকে আনছে। আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সিলেবাস ও পদ্ধতির সময়ে সময়ে পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন বা বিয়োজন তো আছেই। তাছাড়া শিক্ষা কারিকুলামের নানা অসংগতি, ভুল তথ্য, আপত্তিকর পাঠ ও সিলেবাস যখন সকলকে ভাবিয়ে তুলছে তখন আপনার সন্তানের শিক্ষার দায়িত্ব শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর ছেড়ে দিয়ে বসে থাকলে চলবে না, আপনাকেই নিতে হবে।

আরও পড়ুন-সন্তানের বয়ঃসন্ধিকালে মাদের করনীয়

তাই বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠের অসংগতি যতটা সম্ভব দূর করতে হবে। পাশাপাশি আমাদের প্রিয় নবিজির দেয়া শিক্ষাকে গ্রহন করতে হবে। তিনি তিনটি বিষয়ে সন্তানকে শিক্ষা দিতে বলেছেন –

ক. ঈমান বিষয়ক:

আল্লাহ, ফেরেশতা, নবি-রাসূল, তাকদির, পরকাল, জান্নাত-জাহান্নাম, হিসাব-নিকাশ ও অন্যান্য অদৃশ্য বিষয়সংক্রান্ত বিশ্বাসের ধারণা দিতে হবে।

খ. ইসলাম বিষয়ক:

নামায, রোজা ইত্যাদি বিষয়ক ধারণা ও বয়স হলে প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

গ. শরী‘আত বিষয়ক

ইসলামের আকিদা, ইবাদাত, আখলাক, বিধি-বিধান সম্পর্কে তাদের মধ্যে মৌলিক ধারণা দিতে হবে। বয়স অনুসারে কুরআন, সুন্নাহ, সিরাত ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা দিতে হবে।

আপনি সন্তানকে ভালবাসেন, তার কল্যাণ চান, তার সুন্দর ভবিষৎ চান, তো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার উপর পুরো নির্ভর না করে বরং পাশাপাশি উপরে উল্লেখ করা নবিজির শিক্ষাও আপনার সন্তানকে দিবেন। সকল অভিভাবক যদি নিজের শিশুর নিজেই শিক্ষক হন তবে আপনার সন্তান অবশ্যই আদর্শ সন্তান হবে। আল্লাহভীরু দেশ প্রেমিক নাগরিক হিসাবে গড়ে উঠবে। তারাই আদর্শ সমাজ উপহার দিবে। সন্তানকে সমাজের গড্ডালিকা প্রবাহে ছেড়ে দিবেন না।

লেখকঃ লেখক এবং সাবেক এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সমাজ,পরিবার ও আত্মউন্নয়ন মূলক অসাধারণ লেখা ও আর্টিকেল পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi এ লাইক দিয়ে ফেসবুকে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন।প্রিয় লেখক! আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; প্রিয় লেখক ও পাঠক আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম এ যুক্ত হয়ে আমাদের সাথেই থাকুন ।

আরও পড়ুন