Ads

কোরআনে বর্ণিত সন্তানের প্রতি লোকমানের দশটি নসীহত

।। রাকিব আলী ।।

লোকমান (আঃ) আল্লাহর একজন প্রিয় বান্দা যাকে আল্লাহ হেকমত বা প্রজ্ঞা দান করেছিলেন। একদিন তিনি তার সন্তানকে বেশ কয়েকটি নসীহত করেছিলেন। তার নসীহতগুলো আল্লাহর কাছে এতোটাই ভালো লেগেছিল যে, কিয়ামত পর্যন্ত মহান রাব্বুল আলামিন তার সকল অনাগত বান্দাদের জন্য এগুলো কোরআনে জীবন্ত করে রেখেছেন। এতেই বোঝা যাচ্ছে এগুলোর গুরুত্ব কতোখানি। এজন্য নিজেদের আমলের পাশাপাশি এগুলো নিজেদের সন্তানদের নসীহত করা উচিত।

১। হে বৎস! আল্লাহর সাথে শিরক করো না; অবশ্যই শিরক হচ্ছে মস্ত বড়ো যুলুম।

অর্থাৎ আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা হয়ে যায় এমন জঘন্য কাজ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। একইসাথে, লোক দেখানোর আমল তথা রিয়া যা শিরকের অন্তর্ভুক্ত সেটা থেকেও বেঁচে থাকতে হবে। শিরকের মতো ভয়াবহ গোনাহ দ্বিতীয়টি আর নেই, যুলুমের পর্যায়ের গোনাহ।

উল্লেখ্য, হে বৎস মানে ‘ও আমার সন্তান’ কিংবা ‘ও আমার সোনামণি’ বোঝায় যা খুবই চমৎকার সম্বোধন। এমন সম্বোধন হৃদয়কে শীতল করে দেয়। কাউকে নসীহত বা বোঝানোর ক্ষেত্রে সুন্দর করে সম্বোধন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় যা আল্লাহ আমাদেরকে এমন বিষয় থেকে শিক্ষা দিচ্ছেন।লোকমান (আঃ) তার সন্তানকে নসীহতের সময় তিন-তিন বার এভাবে সম্বোধন করেছেন।

লেখকের আরও লেখা পড়ুন- যুবক-যুবতীদের জন্য একটি খোলা চিঠি

২। হে বৎস! যদি তোমার কোনো আমল সরিষার দানা পরিমাণ ছোটোও হয় এবং তা যদি কোনো শিলাখন্ডের ভেতর কিংবা আসমানসমূহেও লুকিয়ে থাকে অথবা যদি তা থাকে যমীনের ভেতরে, তা-ও আল্লাহ তা’য়ালা সেদিন সামনে এনে হাযির করবেন; আল্লাহ তা’য়ালা অবশ্যই সূক্ষ্মদর্শী, সকল বিষয়ে সম্যক অবগত।

সংক্ষেপে, কোনো আমলকে ছোটো মনে করা যাবে না। অর্থাৎ নেক বা বদ যেকোনো আমলকে তুচ্ছ মনে করা যাবে না, হোউক সেটা একজন রিকশা ড্রাইভারের সাথে হাসিমুখে কথা বলার আমল, কাউকে ভালো পরামর্শ দেওয়ার আমল, কাউকে সালাম দেওয়ার আমল কিংবা রাস্তার যেখানে সেখানে থুথু না ফেলার আমল, রাস্তায় পড়ে থাকা কষ্টদায়ক কোনো কিছু সরিয়ে ফেলার আমল, অকারণে কোনো গাছের পাতা না ছেঁড়ার আমল।

৩। হে বৎস! তুমি নামাজ প্রতিষ্ঠা করো।

উল্লেখ্য, নামাজ পড়া আর নামাজ প্রতিষ্ঠা করা এক বিষয় নয়৷ নিজে নামাজ আদায় করা এবং অন্যেদেরকেও নামাজের তাগিদ দেওয়া, উদ্বুদ্ধ করা এগুলোকে নামাজ প্রতিষ্ঠা বলে।

৪। মানুষদেরকে ভালো কাজের আদেশ দাও।

কাউকে নামাজ আদায় করতে উদ্বুদ্ধ করা, পর্দার গুরুত্ব বোঝানো, কোরআন তেলাওয়াতের উৎসাহ দেওয়া, মা-বাবার অনুগত থাকার কথা বলা, শুদ্ধ করে সালাম দিতে বলা ইত্যাদি যেকোনো ভালো কাজ করতে বলাই ভালো কাজের আদেশের শামিল।

৫। মানুষদেরকে মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখো।

গীবত করা, চোগলখোরি করা, মানুষেরা হক নষ্ট করা ইত্যাদি সকল খারাপ কাজ থেকে কাউকে বিনয়ের সাথে বুঝিয়ে বিরত থাকতে বলা মন্দ কাজ থেকে হেফাজত করে রাখার অন্তর্ভুক্ত।

৬। তোমার ওপর কোনো বিপদ মসিবত এসে পড়লে তার ওপর ধৈর্য ধারণ করো;বিপদে ধৈর্য ধারণ করার- এ কাজ নিঃসন্দেহে একটি বড়ো সাহসিকতাপূর্ণ কাজ।

সংক্ষেপে, বিপদে ধৈর্য ধারণ করা।অর্থাৎ জীবনে বিপদ-আপদ আসলে ভেঙ্গে না পড়ে, হতাশ না হয়ে আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রেখে ধৈর্য ধারণ করতে হবে যা আল্লাহর দৃষ্টিতে বীরত্বের কাজ বটে। আর এর বিনিময়ও এমন কিছু হবে যা আমাদের কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যাবে।

আরও পড়ুন- ছেলের প্রতি লোকমান হাকিমের ১০ উপদেশ

৭। কখনো অহংকারবশে মানুষদের সাথে তোমার গাল ফুলিয়ে রেখে তাদের অবজ্ঞা করো না।

সংক্ষেপে, অহংকারবশত কাউকে অবজ্ঞা করো না।অর্থাৎ কোনো মানুষের সামাজিক মর্যাদা নিচু হওয়ায় কিংবা সমাজের চোখে সে প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় তাকে এড়িয়ে চলা যাবে না, অবহেলার চোখে দেখা যাবে না।এতে অহংকার প্রকাশ পাবে।

৮। আল্লাহর যমীনে কখনো ঔদ্ধত্যপূর্ণভাবে বিচরণ করো না; নিসন্দেহে আল্লাহ তা’য়ালা প্রত্যেক উদ্ধত অহংকারীকেই অপছন্দ করেন।

সংক্ষেপে, আল্লাহর যমীনে অহংকার করো না।

অর্থাৎ যমীনে চলার সময় বুক ফুলিয়ে চলা যাবে না। আপনার বিচরণ যেন মানুষের মনে ত্রাস সৃষ্টি না করে, আপনার ভয়ে মানুষ যেন আপনার অনুপস্থিতি কামনা না করে। চলার সময় যেন বিনয় প্রকাশ পায়। সহজ কথায়, এমনভাবে চলতে হবে যেন আপনি একজন মুসাফির।

৯। চলাফেরায় তুমি মধ্যম পন্থা অবলম্বন করো।

অর্থাৎ চলার সময় খুব ধীরে ধীরেও না, অলসভরেও না এবং ঠাট-বাট করে কিংবা দম্ভভরেও চলা যাবে না। অন্যভাবে, কৃপণতাও করা যাবে না আবার অপচয় অপব্যয়ও করা যাবে না, মাঝামাঝি থাকতে হবে।

১০। তোমার কন্ঠস্বর নীচু করো। কেননা সকল আওয়াযের মধ্যে সবচাইতে জঘন্য আওয়ায হচ্ছে গাধার আওয়ায।

অর্থাৎ কারো সাথে বড়ো গলায় কথা বলা যাবে না। বিনীত স্বরে কথা বলতে হবে, বিনয় হয়ে চলতে হবে। এই নসীহতে বিনয়ের গুরুত্ব স্পষ্ট। পক্ষান্তরে, চিৎকার চেঁচিয়ে তথা বড়ো গলায় কথা বলা, কর্কশ ভাষায় কথা বলা কতোটা জঘন্য তা গাধার সাথে তুলনা থেকেই সহজে অনুমেয়।

রেফারেন্সঃ

সূরা লোকমানঃ ১৩-১৯

বই : আল্লাহ টু বান্দা

লেখকঃ ইসলামী প্রবন্ধকার

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সমাজ,পরিবার ও আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা ও আর্টিকেল পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। প্রিয় লেখক! আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; প্রিয় লেখক ও পাঠক আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম এ যুক্ত হয়ে আমাদের সাথেই থাকুন । আসুন সুস্থ ও সুন্দর সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

আরও পড়ুন