নুরে আলম মুকতা
রোজা মুলত ফার্সি শব্দ। সিয়াম আরবী শব্দ। এটি বহুবচন, একবচনে সাওম। আমাদের সমস্যা হলো আমরা না জেনে না পড়ে অনেক কথা বলি। রোজা আর সাওম দুটো শব্দের মুল অর্থ হলো বিরত থাকা। কি থেকে বিরত থাকা? খাদ্য আর পানাহার, শারিরীক হালাল সম্পর্ক আর বাঁকীগুলো এমনিতেই হারাম বা মাকরুহ। এরমধ্যে জোরে চিৎকার, অশালীন আচরন ইত্যাদি মন্দ কাজ সমূহ অন্তর্ভুক্ত । ইসলাম ধর্মের মুল বিষয়গুলো একদম বিজ্ঞান সম্মত।
রোজা মুলত ফার্সি শব্দ। সিয়াম আরবী শব্দ। এটি বহুবচন, একবচনে সাওম। আমাদের সমস্যা হলো আমরা না জেনে না পড়ে অনেক কথা বলি। রোজা আর সাওম দুটো শব্দের মুল অর্থ হলো বিরত থাকা। কি থেকে বিরত থাকা? খাদ্য আর পানাহার, শারিরীক হালাল সম্পর্ক আর বাঁকীগুলো এমনিতেই হারাম বা মাকরুহ। এরমধ্যে জোরে চিৎকার, অশালীন আচরন ইত্যাদি মন্দ কাজ সমূহ অন্তর্ভুক্ত । ইসলাম ধর্মের মুল বিষয়গুলো একদম বিজ্ঞান সম্মত। এখানে কোনরকমের কুসংস্কার আর বাতিল কোন রকমের সংশ্লিষ্টতা নেই। বাতিল বলা হলো এজন্য যে, পবিত্র কুরআন নাজিল হবার পূর্বে যে বিধানগুলো ছিলো তা বাতিল হয়ে গিয়েছে। এগুলো আমাদের স্পষ্টভাবে জেনে রাখতে হবে। বিষয়টি জটিল করে ভাবার কোন অবকাশ নেই। পবিত্র কুরআন সর্বশ্রেষ্ঠ ও কিয়ামত পর্যন্ত জীবন বিধান। এখানে এটি আলোচনার কারন হলো, হযরত মুহম্মদ (সাঃ) পরলোক গমনের পরে বেশ কিছু ফিৎনা সৃষ্টি হয়েছিলো। এগুলো হওয়ার কারন ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাওয়া সাহাবী আর খিলাফত। মধ্যপ্রাচ্য পুরো বিভিন্ন জাতি,উপজাতি আর গোষ্ঠীতে বিভক্ত । তারা বিভিন্ন রকম সংস্কৃতির ধারক আর বাহক । পবিত্র কুরআন এমন একটি বিধান যা কোনদিনই বিকৃত হবার সম্ভাবনা নেই। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নিজেই এটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। মুসলমান তথা বিশ্বাসীদের জন্য এটি মহা আনন্দ আর স্বস্তির বিষয়। মাঝে মাঝে কিছু মানুষের কুপমন্ডুক কাজের জন্য হাসি পায়। কে কোথায় কুরআন বিকৃত করার চেষ্টা করছে বা বাতিল করার চেষ্টা করছে তা নিয়ে হই চই করার কোন কারন নেই। বরং নিজের দিকে তাকিয়ে এ কেতাবের সাথে সংশ্লিষ্টতা পরখ করে নেয়া যেতে পারে। আজ যে আলোচনা করতে উদ্যত হয়েছি সেদিকে যাই। মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাজিল হবার আগে তিনটি কিতাব সহ একশোটি সহিফা বাতিল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এগুলোর অনুসারী তো আছে। তারাও উপবাস করে থাকেন। এগুলো বিভিন্ন পন্থায়। আমরা জানি আমিরুল মুমিনীন হযরহ ওমর (রাঃ) বিভিন্ন সময়ে নফল রোজা রাখার বিষয়ে অত্যান্ত কঠোরতা অবলম্বন করেছিলেন। এগুলো আমাদের মনে রাখতে হবে। এখানে একটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য যে, আমরা যেন কোন ক্রমেই ফরজের কাছাকাছি কোন এবাদত সামিল না করে দিই। আরো সহজ ভাষায় বলা যায়, কোন নফল বা সুন্নাত নিয়ে বাড়াবাড়ি করা যাবে না। করলে ভালো না করলে দোষের কিছু নেই । মহানবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) পবিত্র কুরআন লাভ করার আগে যে সকল গ্রন্থ নাজিল হয়েছিলো তারাও রোজা পালন করতেন। কিন্তু সালাত আর রোজার সর্বোত্তম আর পরিশীলিত পর্যায় তারা লাভ করেনি। মুহম্মদ (সাঃ) যে সারা বিশ্বের মানবতার মুক্তির সনদ কুরআন লাভ করবেন এবং তিনি হবেন এর ধারক আর বাহক এ বিষয়ে বিতর্কের অবসান হয়েছে অনেক আগে। বিশ্বের কয়েকটি ধর্মগ্রন্থ থেকে আমরা একটু আলোকপাত করতে পারি,
বেদ-পুরাণ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মগ্রন্থ। এ ধর্মগ্রন্থটির বয়স নির্ধারন করা দুষ্কর। কিন্তু একবাক্যে বলা যায় কুরআনের আগে অবতীর্ণ সহিফা। পরবর্তীকালে বিভিন্ন সময়ে মানুষের দ্বারা পরিবর্তিত। এখানে কি মেসেজ ছিলো দেখি, ” হতোর মিদ্রো হোতোরমিদ্রো মহাসুরিন্দ্রাঃ অল্লো জ্যেষ্ঠ্যং শ্রেষ্ঠং পরমং পুর্নং ব্রহ্মাণ অল্লাম।। আদল্লাহরসুরমহমদবকং বরস্য অল্লো অল্লাম। আদল্লাবুকমে ককম অল্লাবুক নিখাতকম।। ৩,বেদ পুরাণ -অন্নোপণিষদ—-ভাবার্থ,আল্লাহ সকল গুণের অধিকারী। তিনি পূর্ণ ও সর্বজ্ঞানী। মুহম্মদ(সাঃ) আলাহর রসুল।আল্লাহ আলোকময়,অক্ষয়,এক,চিরপরিপূর্ন এবং স্বয়ম্ভু।
বুদ্ধ আর আনন্দের কথোপকথনঃ বৌদ্ধ শাস্ত্র “দিঘা নিকায়া” য় বুদ্ধ আনন্দ কে বলছেন,আমিই একমাত্র বুদ্ধ বা শেষ বুদ্ধ নই,যথাসময়ে আর একজন বুদ্ধ আসিবেন,আমার চেয়েও তিনি পবিত্র ও অধিকতর আলোকপ্রাপ্ত,তিনি একটি পূর্নাঙ্গ ধর্মমত প্রচার করিবেন। তাঁর নাম হইবে মৈত্রেয়। এ শান্তি ও করুনার বুদ্ধ যে মুহম্মদ (সাঃ) তাতে কোন সন্দেহ নাই
পবিত্র কুরআনে মুহম্মদের (সাঃ) বিশেষণ অবিকল একই রকম। তাঁকে কুরআনে বলা হয়েছে, রহমতুল্লিল আলামিন অর্থাৎ সমস্ত বিশ্বের জন্য মূর্ত করুনা ও আশীর্বাদ।
পার্শী ধর্মগ্রন্থ জেন্দাবেস্তায় কি বলেছে দেখি, Zend-Avesta,part l,Translated by Max Muller,p-260 এ বলা হয়েছে,” আমি ঘোষণা করিতেছি, হে ষ্পিতাম জরথ্রুস্ট, পবিত্র আহমদ (ন্যায়বানদিগের আশীর্বাদ)অবশ্যই আসিবেন,যাঁহার নিকট হইতে তোমরা সৎ চিন্তা,সৎ বাক্য,সৎ কার্য এবং বিশুদ্ধ ধর্ম লাভ করিবে। তাওরাত মুসার (আঃ) কিতাব যা ইহুদিরা অনুসরণ করেন আর বাইবেল বা ইঞ্জিল ঈসা(আঃ) এর প্রাপ্ত কেতাব যা খ্রিষ্টান সম্প্রদায় অনুসরণ করেন। এগুলোতে মুহাম্মদ বা আহম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে যা মেসেজ আছে তা বলা বাহুল্য।
পার্শী ধর্মগ্রন্থ জেন্দাবেস্তায় কি বলেছে দেখি, Zend-Avesta,part l,Translated by Max Muller,p-260 এ বলা হয়েছে,” আমি ঘোষণা করিতেছি, হে ষ্পিতাম জরথ্রুস্ট, পবিত্র আহমদ (ন্যায়বানদিগের আশীর্বাদ)অবশ্যই আসিবেন,যাঁহার নিকট হইতে তোমরা সৎ চিন্তা,সৎ বাক্য,সৎ কার্য এবং বিশুদ্ধ ধর্ম লাভ করিবে। তাওরাত মুসার (আঃ) কিতাব যা ইহুদিরা অনুসরণ করেন আর বাইবেল বা ইঞ্জিল ঈসা(আঃ) এর প্রাপ্ত কেতাব যা খ্রিষ্টান সম্প্রদায় অনুসরণ করেন। এগুলোতে মুহাম্মদ বা আহম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে যা মেসেজ আছে তা বলা বাহুল্য।
এগুলো আলোচনা করার কারন হলো হয়রত মুহাম্মদ (সাঃ) সমগ্র জীবন আর কর্মের সাথে সাথে মানবতার মুক্তির উপায় সন্নিবেশিত হয়েছে। শবে মেরাজ এখন আমাদের কাছে অলীক কাল্পনিক বিষয় নয়। যুক্তিবাদীরা ইলেকট্রো ম্যাগনেটেিক অয়েভ এ ছবি সম্প্রচার, ভিডিও প্রেরণ, জুম মিটিং বর্তমান সময়েই সুলভ সবকিছু উপভোগ করছেন। এখানে সন্দেহাতীত প্রমাণিত যে মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট তবে কি পরিমান উন্নত প্রযুক্তি জমা আছে তা মানুষের পক্ষে কল্পনা করাও সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে বার বার যে, তোমরা সীমালঙ্ঘন কোরো না, আর তোমাদের দৃষ্টি ফিরে ফিরে আসবে তোমার নিজের দিকে, তোমরা যখন তাকাবে আমার সৃষ্টির পানে।
যারা বিশ্বাস এনেছে এবং ঈমামদার তাদের কোন সমস্যা তো নেইই। রয়েছে বিশেষ পুরস্কার ইহকাল আর পরকালে। মানসিক শান্তির জন্য অন্য কোন পন্থা তালাশ করার দরকার নেই। সালাত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মতের জন্য পরম নেয়ামত আর সাওম বা রোজা দারুন একটি বিজ্ঞান সম্মত বিধান। ধর্মীয় শিষ্টাচার বা বিধি আনন্দদায়ক হলে মানসিক তৃপ্তি আর অনাবিল শান্তি পাওয়া যায়। পবিত্র কুরআন প্রাপ্ত হয়েছেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বিশ্বের সমগ্র মানব সম্প্রদায়ের জন্য। কুরআন শুধু মুসলমানদের নয়। বিশ্বের মানবতার মুক্তির সনদ। মহানন্দের বিষয় হলো, এটি পূর্নাঙ্গ আর রক্ষক সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং। এটি আর কেউ ইচ্ছে করলেই এ্যামেন্ডমেন্ড করতে পারবেন না। স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছেন যে কুরআনের একটি আয়াত বা বাক্যও কারো দ্বারা সংযোজন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন সম্ভব নয়। বিজ্ঞানের সকল উৎকর্ষতার শেষ ও সমাপ্তি মেসেজ এখানে সন্নিবেশিত। আমরা বর্তমান সময়কে বিজ্ঞানের সর্বশেষ আর উৎকৃষ্ট সময় ধরলে ভুল হবে
কারন জেনেটিক্যালি ক্রোমোজোম এর স্থায়ীত্বের সময়টি সূর্যের তাপ বিকিরণ এর ওপর যদি ছেড়ে দিই তবে বিজ্ঞান যুগ সন্ধিকালের মধ্য পর্যায়ে আছে ধরা যেতে পারে মনে হয়। কারন, সুর্যের তেজ ও নীচে নামার সাথে সাথে মানব দেহের ক্রোমোজোম আর জিন সংকোচনের বিষয় যুক্ত । মানুষ শেষ পর্যন্ত অতি ক্ষুদ্রকায় হয়ে বাঁচবে । নামাজ আর সালাত যে মহা বিজ্ঞান ময় তা অনেক আগে প্রমানীত সত্য। পাঁচবার ওজু মুসলমান তো করেনই, পারলে আরো বেশি করেন। তাহলে একজন মুসলমানকে করোনা থেকে বাঁচার জন্য বার বার হাত ধুতে বলা লাগেনা। হালাল খানা, পাক পবিত্র থাকা,পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি এত সুনির্দিষ্ট ভাবে কুরআন হাদীস ছাড়া অন্য কোথাও বলা নেই। এবার রোজার বিষয়ে আলোকপাত করা যেতে পারে, প্রায় সব ধর্মের রেফারেন্স টানার প্রয়োজন হলো এজন্য যে, মুহাম্মদের অনুসারীরা ছাড়াও পূর্বে সাওম বা রোজা পালন করা হতো কিন্তু এগুলো কুরআন দ্বারা বাতিল করা হয়েছে। মুহাম্মদ(সাঃ) উম্মতদের জন্য রমজান মাসের তিরিশটি রোজা অবশ্য পালনীয় বা ফরজ করা হয়েছে। এখানে একটি বিষয় স্মর্তব্য যে, উপকারভোগীর জন্যেই ফরজ করা হয়েছে। সৃষ্টি কর্তা আল্লাহ কোন রোগ শোকে ভুগেন না, তাঁর জন্ম নেই, মৃত্যু নেই, শরীক নেই, অভাব নেই।
রোজা রাখলে কি কি উপকার পাওয়া যেতে পারে চলুন দেখা যাক আমরা কতটুকু জানি, ২০১৬ সালে জাপানী বিজ্ঞানী “ইয়োশিনোরি ওহসোমি” রোজা রাখা মানব দেহের জন্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ তা আবিস্কার করে নোবেল অর্জন করেছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন কতগুলো রোগ ১২-২৪ ঘন্টা পানাহার থেকে বিরত থাকলে দূরে সরে যাবে। টোকিও ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির এ অধ্যাপক দেখাতে সক্ষম হয়েছেন কোষ কিভাবে নিজেই নিজের দুরারোগ্য ব্যাধি আর বার্ধক্য রোধ করার জন্য কোষ নিঃসৃত আবর্জনাগুলো খেয়ে ফেলে। অটোফেজি হলো গ্রীক শব্দ, যার অর্থ আত্মভক্ষণ। রোজা রাখলে কোষ এ আত্মভোজন চালানো শুরু করে।
রোজা রাখলে কি কি উপকার পাওয়া যেতে পারে চলুন দেখা যাক আমরা কতটুকু জানি, ২০১৬ সালে জাপানী বিজ্ঞানী “ইয়োশিনোরি ওহসোমি” রোজা রাখা মানব দেহের জন্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ তা আবিস্কার করে নোবেল অর্জন করেছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন কতগুলো রোগ ১২-২৪ ঘন্টা পানাহার থেকে বিরত থাকলে দূরে সরে যাবে। টোকিও ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির এ অধ্যাপক দেখাতে সক্ষম হয়েছেন কোষ কিভাবে নিজেই নিজের দুরারোগ্য ব্যাধি আর বার্ধক্য রোধ করার জন্য কোষ নিঃসৃত আবর্জনাগুলো খেয়ে ফেলে। অটোফেজি হলো গ্রীক শব্দ, যার অর্থ আত্মভক্ষণ। রোজা রাখলে কোষ এ আত্মভোজন চালানো শুরু করে।
সালাত বা নামাজ মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য দারুন এক আত্মরক্ষার হাতিয়ার আর রোজা দারুন আত্মশুদ্ধি, শিষ্টাচার শিখন, নিজেকে পূনর্গঠন,রোগমুক্তি, চিরযৌবন ইত্যাদি তৈরীর উত্তম বিজ্ঞানসম্মত উপায়। আনন্দের বিষয় হলো এর বিকল্প কোনদিন আর সৃষ্টি হবে না। বর্তমান কোভিড-১৯ এর ভ্যারিয়েন্ট থেকে বাঁচার জন্য ইসলামি জীবন ব্যবস্থাই সর্বাধুনিক ও সর্বশ্রেষ্ঠ হাতিয়ার।
লেখকঃকলাম লেখক,কবি,সাহিত্যিক ও সহ-সম্পাদক,মহীয়সী।