Ads

নায়রি (পর্ব-২)

ফারহানা শরমীন জেনী

মৃদুমন্দ বাতাসে হাটতে তৃণার বেশ ভালো লাগে। আর তারপরে যদি হয় নদীর কোল ঘেষে গড়ে ওঠা গ্রাম!আজ এক সপ্তাহের মাঝেই হাটতে বের হয়ে সাক্ষাৎ হয়েছে অনেক নাম না জানা নতুন নতুন দৃষ্টি নন্দিত পাখির সাথে। কিন্তু আজ তৃণার অনুভূতি বিষণ্ন,ক্লান্ত একটু আলাদা। রাতে ঘুম না আসা এবং খুব কাছে থেকে একটা বুক কাঁপানো আর্তনাদ কেমন যেন চিন্তা অনুভূতি সব ভোতা করে দিয়েছে।  সকল আকর্ষণ উপেক্ষা করে শুয়ে থাকলো তৃণা।বাসা থেকে মা ফোন দিয়েছিল।মা সকাল হতে হতেই একবার ফোন দেয়। আর বাবা ঠিক ফজরের সময়। আসলে তৃণা এর আগে কখনও বাইরে থাকেনি এজন্য বাবা মায়ের মন এত উচাটন।  একসময় আপা এসে ডেকে তুললেন।জানতে চাইলেন শরীর খারাপ করেনি’ত? খিচুড়ি, আঁচাড় আর আলুভর্তা নাস্তা দিয়ে গেলেন।নাস্তা দিতে এসে  হঠাৎ তৃণার মুখের দিকে তাকিয়ে উনি চমকে উঠলেন। মাথায় হাতদিয়ে বললেন ” বাড়ির জন্য মন খারাপ? ” মাথাটা একদিকে কাইত করে না সূচক ইঙ্গিত করলো ।কারণ কে কি ভাববে বা তারই মনের ভ্রম কিনা সেটা নিয়েই ভাবছে সে।

স্কুল টাইম হয়ে গেল, গোসল করে রেডি হয়ে আন্জু আপা আর তৃণা নৌকা ঘাটে যেয়ে নৌকায় চড়ে বসলো। নৌকায় বসে তৃণা আন্জু আপার মনোভাব বোঝার জন্য বললো আপা ডিঙি নৌকা গুলোর অপর নাম নায়রী,সাম্পান এগুলো বেশ সুন্দর তাইনা? আকাশ মেঘে ঢাকা নৌকাও নদীর ঢেউয়ে বেশ দোল খাচ্ছে!  আপা উত্তর দেয়ার আগেই হঠাৎ মাঝি বলে উঠলো “ওমা কি বুইলছেন আপা নৌকার নাম নায়রী হা হা।আমাদের গুচ্ছ গেরামে নায়রী পাগলা আছে গে?যেদিন আকাশে ম্যাঘ লাগভে সেদিনই নায়রী পাগলা নোকা লিয়্যা নদীর এপার আর ওপার যাভে আর আসপে?আর এমন চিকড়িভে নায়রী নায়রী কইর‍্যা!মাঝির কথা শোনা মাত্র তৃণা আরও মনোযোগি হয়ে উঠলো বিষয়টা নিয়ে।কিন্তু এর মাঝেই নৌকা পৌঁছে গেল নদীর ওপারের ঘাটে। নৌকা থেকে নেমে উৎসুক্য চেপে না রেখে আন্জু আপাকে তৃণা বলেই ফেললো রাতের ঘটনা। আন্জু আপা মুহূর্তেই বুঝে গেল সকালে কেন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল তৃণাকে।আন্জু আপা বেশ সজাগ হলেন।কারণ তৃণা এখানে নতুন,পরিবেশ একদম অপরিচিত।প্রথমেই ভয় পেলে সমস্যা। এজন্য মুখে হাসি টেনে বললেন নায়রী পাগলের ইতিহাস বেশ করুণ।তার এই বর্ষণ মুখর রাতের আর্তনাদ পূর্ণ কান্নার সাথে আমরা সবাই পরিচিত।এর সাথে অশরীরি কোন বিষয় জড়িত নয়।ভয় পাওয়ার কিছু নেই বলে পিঠ চাপড়ে দিলেন।তৃণার যেন তর সইছেনা গল্পটা শোনার জন্য। কিন্তু ঘন্টা পড়ে গেছে ক্লাস নিতে হবে।যে যার মতো চলে গেল ক্লাসে। কিন্তু রাতের ঘটনায় সৃষ্ট অবসাদ কিছুতেই অবসান হয় না।তৃণার এত অস্থির লাগছে কেন বিষয়টি কিছুতেই বোধগম্য হচ্ছে না।আসলে রাতে ভালো ঘুম না হওয়াও একটা কারণ।তাছাড়া তৃণার সবসময়ই অজানাকে জানার প্রবল আগ্রহ।
একসময় স্কুল শেষ হলো।ফেরার পথে তৃণা আন্জু আপাকে আবারও জিজ্ঞেস করলো নায়রীর কি হয়েছিল?  আন্জু আপা বললেন অবশ্যই বলবো পাগলি মেয়ে।তার আগে এই এলাকাকে চেন জানো।তবু নাছোড়বান্দা তৃণা ছাড়ে না কিছুতেই।নৌকায় উঠে বসলো দুজনে।মাথার ওপর সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে।নদী পারাপারে সময় বেশি লাগে না।দশ মিনিটে পৌছে গেল নৌকা ঘাটে।নৌকা থেকে নামতে যেয়ে তৃণার চোখ পড়লো অদূরে বাবলা গাছের নিচে বসে থাকা শূন্যদৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এক জীর্ণ পোশাক পরিহিত এলোমেলো মানুষ।কখনও বাচ্চারা হয়তো দূর হতে ঢিল ছুড়ছে মজা করছে।লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে আসতে চাইছে লোকটি।আপা আমাকে আস্তে করে বললেন ভয়ের কিছু নেই।

চলবে….

প্রথম পর্বের লিংকঃ

নায়রি (পর্ব-০১)

ফারহানা শরমীন জেনী কবি ও সাহিত্যিক।

আরও পড়ুন