Ads

আলহামদুলিল্লাহ- আমার কেবল অপেক্ষার পালা।

জিয়াউল হক 

যুবপ্রজন্ম, একটা সমাজের সবচেয়ে বড়ো শক্তি, তার প্রাণ। সমাজের উন্নয়ন, বিকাশ ও স্থায়িত্ব কোনটাই ঘটতে পারেনা তাদের মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পূর্ণতা এবং উন্নয়ন না ঘটলে। ‘বর্তমান’ সময়কালটা খুবই ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রোডাক্টিভ সময়। একে প্রোডাক্টিভ করতে পারার উপরেই নির্ভর করে তার আগামি দিনগুলো কেমন হবে, সেটি। এই প্রোডাক্টিভ সময়টা যাদের কেন্দ্র করে আবর্তিত হওয়া উচিৎ, তারা এই যুবপ্রজন্ম।

যে সমাজ তার যুবপ্রজন্মকে সঠিক ধারায় রাখতে পেরেছে, সেই সমাজের ভবিষ্যৎ উজ্জল হতে বাধ্য। 

যুবসমাজের উন্নয়ন বলতে আমরা কি বুঝি? কাকে যর্থার্থ উন্নয়ন বলে? তার রুপ ও প্রকৃতিই বা কি? কলে-কারখানায়, অফিসে-আদালতে চাকুরির নিশ্চয়তা, ব্যবসা বাণিজ্যের সুযোগ, দেশে বা প্রবাসে কর্মসংস্থান ও কাঁচা অর্থ আয়ের সুযোগ করে দিতে পারাটাই কি উন্নয়ন? 

উন্নয়ন শব্দটির রুপ ও প্রকৃতি, অভিধা ও অর্থ এসব নির্ভর করে ব্যক্তির বোধ-বিশ্বাস আর দৃষ্টিভঙ্গির উপর। জীবন, সমাজ ও বিশ্বপ্রকৃতির সাথে আমাদের সম্পর্ককে আমরা কি চোখে দেখছি, সেই দৃষ্টিভঙ্গির উপরে নির্ভর করে আমরা ভালো বা মন্দ, সফলতা বা ব্যর্থতা, উন্নয়ন বা অধোপতন এসব বিষয়কে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করি, সেটি। 

ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে, উন্নয়ন হলো মানুষ তার উৎস, গন্তব্য, দায়িত্ব ও  জীবন মিশন সম্বন্ধে পরিপূর্ণ ওয়াকিবহাল হয়ে তা পালনে দক্ষ, আন্তরিক ও পারঙ্গম হবে, সেরকম একটা মানবিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতা এবং পরিবেশের সৃষ্টি হওয়াটাই হলো উন্নয়ন। ঠিক একাজটাই আল্লাহর নবী করে দেখয়িছেন। সেটা ইতিহাস হয়ে আমাদের এবং বিশ্বের সকল মানুষের সামনেই রয়েছে।

এমন অর্থবহ উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো; প্রকৃত জ্ঞান ধারণ করা। যথার্থ জ্ঞানে ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ হওয়া। এ শর্তটা পূরণ হলেই অসাধ্য সাধিত হয়। যুবসমাজের উন্নয়ন বলতে তাদেরকে এই নিখাঁদ জ্ঞানে সমৃদ্ধ করাটাই বুঝায়। এটা করতে পারলেই তারা তাদের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য খুঁজে পাবে। স্বপ্রণোদিতভাবেই তারা নিজ নিজ অবস্থানে থেকেই করণীয় নির্ধারণ করে নিতে পারবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।

আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে তারা সক্ষমতা অর্জন করে। তারা স্বাধীনভাবে ভাবতে শেখে। আগামি দিন এই সমাজ কিভাবে, কোনপথে চলবে, তার একটা রুপরেখাও তৈরি করে নিতে পারে নিজেরাই। এই কাজটির জন্যই তাদেরকে তৈরি হতে হয়।

প্রশ্ন হলো; কোন ধরনের জ্ঞানকে আমরা প্রকৃত ‘জ্ঞান’ বলবো? সেই জ্ঞান চেনার উপায়ই বা কি? তার উৎস কোথায়? কোথায় পাওয়া যায়? জ্ঞানের উপকরণ কি? প্রকৃত জ্ঞানের পাশপাশি ‘অপ্রয়োজনীয়’ জ্ঞানই বা কোনটা? কল্যাণকর জ্ঞান কাকে বলে? সেগুলো কি কি? উৎস ও সুত্র কি? তাকে চেনার পথ কি? তার বৈশিষ্ঠগুলোই বা কি? ক্ষতিকর জ্ঞানের উপস্থিতি কিভাবে সনাক্ত করা সম্ভব? সেগুলোকে চেনা ও জানার পথ কি? সে সবের ভয়াল ছোবল থেকে বাঁচার পথটাইবা কি? 

জ্ঞানের জগত কি কলুষিত হয়? মানবজীবনের সবচেয়ে বড়ো সম্পদ জ্ঞান কি কখনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর জন্য দায় হয়ে দাঁড়াতে পারে? পারলে সেটা কিভাবে? কখন? খুব গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু কম আলোচিত প্রশ্নগুলো নিয়ে বিস্তর ও বিস্তৃত আলোচনা হওয়া উচিৎ। জ্ঞান আহরণের সবচেয়ে উত্তম সময়কাল কোনটা? সবচেয়ে সহজ, কার্যকর পথ ও পদ্ধতিই বা কি? সেগুলো কিভাবে অর্জন করতে হয়? অর্জিত জ্ঞান বিস্তারে ব্যক্তির ভূমিকা কতোটুকু? কখন একজন ব্যক্তি জ্ঞান বিস্তার ও প্রসারে তৎপর হবেন?

আমাদের পশ্চাদপদ সমাজে বিশাল একটা গোষ্ঠী নানারুপ বাস্তব কারণে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পথ মাড়াতে পরেনি, বা পারলেও সেখানে পরিপূর্ণ জ্ঞানের সন্ধান পান নি, জানা অজানা কারণে যাদের জ্ঞানের জগতটা প্রশ্নবিদ্ধ রয়ে গেছে আজও, তাদের সামনে কি প্রকৃত জ্ঞানার্জনের আর কোন পথ খোলা নেই? 

কোনপথে, কিভাবে জ্ঞানার্জনের চেষ্টায় করলে সর্বোচ্চ মানের ফলাফল আশা করা যেতে পারে? এরকম শত শত প্রশ্ন মনে আসে, উদয় হয়। ভাবুক মনকে ভাবায়। প্রশ্নগুলোর কোন কোনটা কঠিন, নি:সন্দেহে, কিন্তু সেই কঠিন প্রশ্নের উত্তরটা তো জানতেই হবে চলার পথকে সহজ ও সাবলীল করে তুলতে হলে! তাই এ প্রশ্নগুলোর উত্তর জানার দরকার। তা না হলে যুবপ্রজন্মের মনে জ্ঞান নিয়ে বিদ্যমান ধোঁয়াশা দূর হবে না। প্রকৃত ও স্থায়ী উন্নয়নও ঘটবে না, সমাজেরও মুক্তির কোন আশা নেই বর্তমান পরিস্থিতি থেকে।

আগামি প্রজন্মকে জ্ঞানচর্চা নিয়ে মৌলিক এ সব প্রশ্ন ও তার সম্ভাব্য উত্তর সম্বন্ধে সচেতন তুলতেই এই বই রচনা। উদ্দেশ্য কতোটা অর্জিত হয়েছে বা কতোটা সফল হয়েছি তো ভাবার সময় এখনও আসেনি। তা ছাড়া সে প্রশ্নের উত্তরটা আসতে হবে শ্রদ্ধেয় পাঠকবৃন্দের পক্ষ থেকেই। ছাপা হয়ে বের হয়ে আসার তালিকায় এটা তিরিশতম গ্রন্থ, আলহামদুলিল্লাহ। ধন্যবাদ ইকামাহ পাবলিকেশন্স’কে। 

আমার কাজ শেষ. এখন কেবল অপেক্ষার পালা।

লেখকঃ ইংল্যান্ডের বেসরকারি মানসিক হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ও প্রবাসী লেখক, ইংল্যান্ড 

আরও পড়ুন