তানিম ইশতিয়াক
সাব্বির জাদিদের গল্পগ্রন্থ ‘একটি শোক সংবাদ’ পড়লাম। ফেসবুকে বিচ্ছিন্নভাবে তার লেখা পড়ি। তবে বেশিরভাগ সময় বড় লেখা পড়ার ধৈর্য হয় না। অনর্থক ব্যস্ততার ‘জরুরি স্ক্রলিং’ অনেককিছু স্কিপ করে ফেলে। এখন বই আকারে পড়তে গিয়ে লেখককে নতুন করে আবিষ্কার করা হলো।
গল্পের প্লট সাজাতে সাব্বির জাদিদ বেশ গভীরে ডুব দেন। সাধারণ আটপৌরে জীবনের গল্পের মধ্যেও একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে দেন। এই গ্রন্থের প্রতিটি গল্পেই সেই পরিকল্পনা ও মুন্সিয়ানা দেখা গেছে। তবে গল্পগুলোর শুরু একেবারেই গতানুগতিক ও চমকপ্রদহীন লেগেছে। পড়তে গেলে প্রথমদিকে ছোটগল্পের টান বা আকর্ষণ অনুভব হয় না। বলা যায়, উপন্যাসের মতো ধীর নির্মাণের নির্বিকার ও নিষ্প্রভ প্রস্তুতি। কিছুদূর পড়ার পর বিশেষত্ব টের পাওয়া যায়।
গল্পগুলো পড়তে পড়তে পাঠক চরিত্র ও পরিবেশের সাথে নিজের জীবনকে মেলাতে পারেন। যেন খুব কাছে থেকে দেখতে পারেন কীভাবে একজন মানুষের চিন্তা ও আচরণ আরেকজনের জীবনে জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে প্রভাব ফেলে, সেই স্বভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির সৌন্দর্য কিংবা কদর্যতা নিয়ে পাঠক ভাবনার অবকাশ পান। সেই অনুভূতির সাথে নিজেকে একাত্ম করতে পারেন। এই ব্যাপারে লেখক বেশ সূক্ষ্ম ও নিবিঢ় ছোঁয়া দিয়েছেন। গল্পের চরিত্রগুলো স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত হলেও তিনি নির্দিষ্ট গতিপথ দিয়েছেন।
বইটিতে মোট ১০টি গল্প আছে। নামগল্প ‘একটি শোক সংবাদ’ আত্মোপলব্ধির দারুণ উপলক্ষ হয়ে উঠেছে। এই গল্পের শুরুটা শোকসংবাদের প্রচারবাণী থেকে না হয়ে ‘মাইকে নিজের মৃত্যুসংবাদ শুনলেন কেরামত মণ্ডল’ এরকম কোনো বর্ণনায় চমক ও কৌতূহল সৃষ্টি করা যেত বলে মনে হয়েছে। আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে ‘একটি পুঁজিবাদী গল্প’ ও ‘যতিচিহ্ন’। ‘দূরত্ব’ গল্পটি আগের পড়া থেকে মনে ছিল, তাই বইয়ে আর শেষ করিনি। এই গল্পটিও চমৎকার। ধর্মীয় ফেরকাবাজির সূত্র ও সঙ্কট গণ্ডির বাইরে থেকে উপলব্ধি করা যায়।
সাব্বির জাদিদ ব্যক্তিজীবনে একজন আলেম ও ইমাম। সাহিত্য রচনায় তিনি সাবলিল ও অকপট। লেখক হিসেবে কোনো সীমাবদ্ধতায় কলম আটকাননি। গল্পগুলোর বেশকিছু বর্ণনা দারুণ উপমাসমৃদ্ধ ও ব্যঞ্জনাময়।
লেখকঃ সাহিত্যিক ও প্রভাষক, পটুয়াখালি সরকারী কলেজ
আরও পড়ুন –