Ads

মেন্টর দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট (১ম পর্ব)

।। আবু সাইফা ।।
কিস্তি – ১
কয়েক বছর আগের কথা। সন্ধ্যা প্রায় ঘনিয়ে আসছে। শামসুর রহমান সাহেব হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে বললেন — ভাই, আমাকে বাঁচান! আমি ধ্বংস হয়ে গেছি! ততক্ষণে মাগরিবের আজান পড়ে গেল। মেন্টর বললেন — চলুন, আগে সালাত আদায় করে নিই।তারপর কথা বলি। মাগরিবের পর দশ টাকার বাদাম ভাজা নিয়ে পাশের ফুটবল মাঠের এককোনায় ঘাসের উপরে নিরিবিলি বসলেন দুজনে।
— বলেন, কি হয়েছে?
— আজ সকাল দশটার দিকে একটা অজ্ঞাত নাম্বার থেকে কল আসে। আমাকে বলা হয়, আমি লটারিতে দশ লক্ষ ডলার পেয়েছি। ঐ অর্থ পেতে হলে পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ হবে। একটা বিকাশ নাম্বার দিয়ে বলে, তাড়াতাড়ি পঞ্চাশ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিন। এ কথা কাউকে শেয়ার করবেন না। তাদের দেওয়া বিকাশ নাম্বারে দুইবারে ত্রিশ হাজার টাকা পাঠিয়েছি। এমনকি আমার ব্যাংক একাউন্ট নাম্বারও তাদেরকে দিয়েছি। পরবর্তীবার যখন টাকা পাঠাতে যাই, এজেন্ট জানতে চাইলো এতো টাকা কাকে পাঠাচ্ছি? এটা প্রতারক চক্র হতে পারে। তখন আমার হুঁশ ফেরে এবং আমি বুঝতে পারি, আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি। ভাই, বড় ছেলেটাকে মালয়েশিয়ায় পড়ালেখার জন্য পাঠাবো, মেয়েটি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষে। এই মূহুর্তে এমন একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেল! এই কথা স্ত্রী সন্তান কারও সাথে শেয়ার করিনি। এখন আত্মহত্যা ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না!

 

মেন্টর বললেন — ওহ্! এই কথা। আপনার কিছুই হয়নি। আপনি শান্ত হোন। প্রথমেই ব্যাংক ম্যানেজারকে ফোন দিয়ে আপনার একাউন্ট সীল করে দিতে বলেন।
— তা বলেছি। একাউন্ট সীল্-ড। ওখানে বৈদেশিক মিশনে পাওয়া দশ লক্ষ টাকা জমা আছে, ওটা নিতে পারেনি।
— শাবাশ! ভালো কাজ করেছেন। তা আমার কাছে আসার সাজেশন কে দিয়েছে?
— কেউ না। আমার নিজেরই মনে হয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে একমাত্র আপনার কাছেই ভালো পরামর্শ পাওয়া যাবে। তাই ছুটে এসেছি।
— ভালো করেছেন। আপনার কিছুই খোয়া যায়নি। আপনার ত্রিশ হাজার টাকা আমি তুলে দেবো। আপনি চোখ বন্ধ করে বসুন। আমি না বলা পর্যন্ত চোখ খুলবেন না।

 

শামসুল রহমান চোখ বন্ধ করলেন। মেন্টর এবার বলতে শুরু করলেন — এবার নিবিষ্ট মনে ভাবুন, আকস্মিক দুর্ঘটনায় আপনার দুটো পা ই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেছে। দেহের ঊর্ধাংশ রক্ষা করার জন্য পা দুটো গোড়া থেকে কেটে বাদ দিতে হয়েছে। আপনি হাসপাতালের বেডে পড়ে আছেন। সামনের জীবনটুকু হুইলচেয়ারের উপর ভরসা করে কাটাতে হবে। আপনি হাঁটাচলা কিছুই করতে পারবেন না। আপনার সাধের পৃথিবী হুইলচেয়ারে বন্দী।
— কী বিভৎস! ভাই, আমি আর ভাবতে পারছি না।
— আচ্ছা। এবার যদি ত্রিশ হাজার টাকার বিনিময়ে আপনার পা দুটি ফিরে পান, কোনটা লাভজনক?
— নিঃসন্দেহে আমার পা দুটোই চাইবো।
— তাহলে কিছুই হারায়নি এখনো। ঠিক আছে। এবার ভাবুন, কোনো দুর্ঘটনায় আজই আপনার চোখ দুটি চিরদিনের জন্য অন্ধ হয়ে গেছে। আপনার সন্তানাদি, আপনার পরিবার, আত্মীয়স্বজন, আলো ঝলমলে এই রঙিন দুনিয়া আর কোনদিন দেখতে পাবেন না। পুরো পৃথিবী অন্ধকারে ছেয়ে গেছে। এখন কেমন লাগছে?
— ওহ্! আমি আর ভাবতে পারছি না। কী ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন! চারিদিকে অন্ধকার!

 

এবার মেন্টর বললেন, — এখন মাত্র ত্রিশ হাজার টাকার বিনিময়ে যদি আপনার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেওয়া হয়, কোনটা নেবেন?
শামসুর রহমান আনন্দে চিৎকার করে উঠলেন।
— আমি ত্রিশ লক্ষ টাকার বিনিময়েও যদি আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাই, তবে আমি তাই ই নেবো।
— আপনার ত্রিশ হাজার টাকা হারিয়ে গেছে ; কিচ্ছু হারায়নি। আপনি আলহামদুলিল্লাহ বলে চোখ খুলুন।
শামসুর রহমান আলহামদুলিল্লাহ বলে চোখ খুললেন।
মেন্টর বললেন — আপনার মতো শিক্ষিত, সচেতন মানুষের জন্য এমন একটা লেসনের অভাব ছিলো। যা শিখেছেন, তার জন্য ত্রিশ হাজার টাকা একটু বেশি মূল্য হয়ে গেছে। দু, চার, পাঁচ হাজার টাকা হলে ঠিক ছিলো।
শামসুর রহমান বললেন — আপনার সাথে কথা না বললে, হয়তো আমি নিজের কোনো মারাত্মক ক্ষতিই করে ফেলতাম। আপনার জন্য শুকরিয়া।

 

( বিঃ দ্রঃ এটি একটি ধারাবাহিক লেখা। যতদিন সম্ভব, ততদিন লিখে যাবো। সমাজে এমন কিছু ব্যক্তি আছে, যাদের নিজের জীবন অবিন্যস্ত হলেও তাদের পরামর্শ, যুক্তি অনস্বীকার্য। মেন্টর দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট এমনই একজন ব্যক্তি। আমাদের এই মেন্টরের জন্য একটা উপযুক্ত নাম দরকার। বন্ধুদের কাছে তার একটা নামের জন্য পরামর্শের আবেদন রইল। শমসের নামটি রাখা যাচ্ছে না, কারণ সবজান্তা শমসের আগে থেকেই আমাদের আছে।)
(চলবে)

 

লেখকঃ কবি, গল্পকার ও মহীয়সীর উপদেষ্টা সম্পাদক

 

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সমাজ, পরিবার ও নিজেকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য নানা ধরণের

আর্টিকেল পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi এ লাইক দিন  এবং

আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম এ যুক্ত হয়ে আমাদের সাথেই থাকুন ।

আরও পড়ুন