Ads

যে দেশের গলিতে গলিতে হাফেজ

।। রাইক রিদওয়ান ।।

মৌরিতানিয়া বেড়ানো হয়েছে গত এক সপ্তাহ। পশ্চিম আফ্রিকার এই আরবি ভাষা বলা দেশকে তেমন অনেকেই না চিনলেও, তাদের একটা মারাত্মক ট্রেডিশান আছে যার কথা না বললেই নয়।

সাহারা মরুভুমির এই এলাকায় টিকে আছে এক মারাত্মক ট্রেডিশান – ছেলে-মেয়ে উভয়কেই পাঠানো হয় ছোট বেলায় কোরআন স্কুলে। মাহদারাহ নামের এই স্কুলগুলো সাধারনত হয় মরুভুমির মাঝে ছোট ছোট গ্রামে, যদিও শহরেও কিছু আছে। দেশের প্রায় প্রত্যেকটা বাচ্চাকেই হাফেজুল কোরআন হতে উৎবুদ্ধ করা হয়। এক বড় অংশ হয় ও। মৌরিতানিয়ান টেকনিকের কথা অনেকে জানলেও জানতে পারেন, বেশ দ্রুত কোরআন (ও অন্যান্য টেক্সট ও) মুখস্থ করার একটা কৌশল আছে এখানে।

তাই বেড়াতে এসে দেখবেন হোটেলের রিসেপশানিস্ট একজন হাফেজ, যে ট্যুর গাইড সেও হাফেজ, যে বাসে উঠলেন তার ড্রাইভার ও হাফেজ, অসুস্থ হয়ে যে ডাক্তারের কাছে যাবেন সেও হাফেজ, বাসার পাইপ যে ঠিক করতে আসবে সেও হাফেজ, যে মহিলা হোটেলের মালিক সেও হাফেজা ইত্যাদি ইত্যাদি। তাদের রাষ্ট্রপতি ওয়ালিদ ঘাজওয়ানি, যে এক সময় আর্মি জেনারাল ছিল, সেও একজন হাফেজ। আমরা এক রাত ক্যাম্পিং করেছিলাম। ট্যুর গাইড আর ড্রাইভার খাবার কয়লার উপর বসিয়ে রান্না হতে হতে দেখি কোরআন রিভাইস করছে। প্রতিদিন সকালে নাস্তার টেবিলে আমাদের ট্যুর গাইড কিছু কোরআন পড়ত যাতে মেইন্টেইনড থাকে তার স্মৃতি। বাসে চড়তে চড়তে তাহিরা দেখেছে তার আসপাশের মহিলারা প্রায় সবাই একটু আকটু করে কোরআন পড়ছে প্রায় পুরা জার্নিতেই।

ট্যুর গাইড কে জিজ্ঞাসা করলাম – সবাই এমন? বলে আমরা আমাদের সব বাচ্চাদের কেই হাফেজ হতে পাঠাই। অনেকের কষ্ট হয় তাই করেনা, কোন জোড় নাই। আর বড় হয়ে সেটা কেউ ধরে রাখবে কিনা এটা তাদের নিজেস্ব ব্যাপার। তারা ২ বোন, ৫ ভাই সবাই হাফেজ। তার পরিচিত আস পাশের পরিবারের প্রায় সবাই ও এমন(তারা বড় হয়েছিল মরুভুমির অন্যতম বড় শহর যোইরাত এ)। তাদের স্কুলেও দেরি হয়না হাফেজ হওয়ার কাফরে। ১৮ জায়গায় হয়ত ১৯-২০ এ কলেজ কয়েকজনের শেষ হতে পারে বেশি হলে।

আরও পড়ুন- নিয়ন্ত্রণযোগ্য বিষয়ে ফোকাস করতে শিখুন

এর বাইরেও মৌরিতানিয়ার একটা মারাত্মক ট্রেডিশান আছে মুখস্থ করে শেখার। ইসলামি জ্ঞানের বই ও তারা মুখস্থ করেই শিখে। মরুভুমির মাঝে ছাগল চড়াচ্ছে যেই মহিলা, সেও শুধু হাফেজা না বটে, দেখা যাবে সাথে আরো কিছু হাদীস, গ্রামার, আক্বীদার টেক্সট ও মুখস্থ বলতে পারবে, পড়াতেও পারবে!

এর এফেক্ট ও দেখেছি জীবনে। মারাত্মকভাবে গরীব এই দেশে মরুভুমিতে যেই ৪ রাত হোটেলে ছিলাম, এক রাত ও তালা দেয়া লাগেনাই। দুইটা হোটেলে তালাই ছিলনা দর্জায় লাগানোর – চুরি হবে এ কথাই ভাবতে পারেনা তারা। সবাই অতিরিক্ত আপ্যায়ন করে – চা না খেয়ে উঠাই যায় না কোথা থেকে – ওদের ট্রেডিশানে এক বসায় ছোট ৩ কাপ চা! আমাদের খুশি করার জন্যে পারলে ঝাপিয়ে পড়ছে সবাই। বড় শহরে এমনটা না হলেও, সাহারার লোকজন অনেক অমায়িক।

এর মানে এই না যে সমস্যা নাই। দুর্নীতি আছে, দারিদ্রতা আছে, আরো অনেক সমস্যাই আছে, থাকবেও। কোন সোসাইটিই পারফেক্ট না, এবং এক্সপেক্ট ও করিনা। কিন্তু তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস দেখলাম, মেডিসিন ফ্যাকাল্টির বিল্ডিং ও – অনেক ইনভেস্টমেন্ট হচ্ছে।

এখানের পড়ালেখার ট্রেডিশানের এক লম্বা ইতিহাস আছে প্রায় ১০০০ বছর আগের। আগামিকাল এমন এক শহর নিয়ে লিখব আর ছবিও শেয়ার করব ইন শা আল্লাহ

লেখকঃ প্রবাসী ডাক্তার, ইউকে 

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সমাজ,পরিবার ও আত্মউন্নয়ন মূলক অসাধারণ লেখা ও আর্টিকেল পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi এ লাইক দিয়ে ফেসবুকে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন।প্রিয় লেখক! আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; প্রিয় লেখক ও পাঠক আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম এ যুক্ত হয়ে আমাদের সাথেই থাকুন ।

আরও পড়ুন