Ads

ভাঙনের আওয়াজ……

আব্দুল্লাহ আরমান

“ইসলাম স্ত্রীকে স্বামীর মা-বাবার সেবা করতে বাধ্য করেনি” এ কথা নিঃসন্দেহে সত্য! স্ত্রী হিসেবে নারী জীবনকে সহজ করতে ইসলাম এক্ষেত্রে উদারনীতি অবলম্বন করেছে। কিন্তু উগ্র নারীবাদী ও তাদের দোসরদের মুখরোচক কথায় প্ররোচিত হয়ে অনেক নারীর মানসিক দৈন্যতা আজ এতটাই নিম্নাভিমুখী যে চিরাচরিত পারিবারিক ও সামাজিক সৌহার্দ্য নষ্ট করতে তারা ইসলামের এই ‘উদারনীতির’ অপব্যবহার করছে! পুত্রের সাথে মা-বাবার দূরত্ব সৃষ্টিতে এই উদারনীতি আজ তাদের মোক্ষম অস্ত্র। শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সেবাকে তারা নিজেদের ‘দয়া বা করুণা’ হিসেবে মূল্যায়ন করে পারিবারিক সৌহার্দ্যের মূলে কুঠারাঘাত করছে!

বৃদ্ধ মা-বাবা সংসার যুদ্ধের অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক। শরীরের কুঁচকে যাওয়া চামড়া,মাথার শুভ্র কেশ ও অসুস্থ ভঙ্গুর শরীর তাদের ওপারে যাওয়ার এক একটি নির্ভূল বার্তা! জীবন সায়াহ্নে এসে তাঁরা পরিবারের ভালোবাসার ছায়ায় অবশিষ্ট জীবন কাটিয়ে ওপারে যাওয়ার প্রহর গুণতে থাকেন!

বৃদ্ধ মা-বাবার দেখভাল করার দায়িত্ব তাঁদের নিজ সন্তানের। কন্যা বিয়ের পর নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সংগত কারণেই মা-বাবার যথাযথ খেদমত করতে পারে না। অনেকটা অঘোষিত ভাবে সামাজিক প্রথানুযায়ী এ দায়িত্ব কেবল ছেলের উপরই বর্তায়। এদিকে ছেলেও তার স্ত্রী-সন্তান ও মা-বাবার ভরণপোষণের জন্য অধিকাংশ সময় নানামুখী কর্মে ব্যস্ত থাকায় মা-বাবাকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারে না বা সম্ভব হয়ে ওঠে না। “সেবা করতে বাধ্য নয়” মূলনীতিতে বিশ্বাসী বউমাও তাঁদের খোঁজ না নিলে অসহায় এ মানুষগুলোর বৃদ্ধাশ্রম ছাড়া তাদের ভিন্ন কোনো আশ্রয় আছে কি?
একাকীত্বের পাথর বুকে চাপিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে জানালার গ্রীল ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা বৃদ্ধ মা-বাবার দু’গাল বেয়ে ঝরে পড়া অশ্রুর প্রতিটি ফোঁটায় যে দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে থাকে আল্লাহর কাছে তা কি মূল্যহীন? স্বামীর মা-বাবাকে দীর্ঘশ্বাসের সাগরে ডুবিয়ে স্বামীকে নিয়ে সুখী হওয়া আদৌ সম্ভব কি?

নানা কারণে একজন মেয়ে নিজ মা-বাবার খেদমত করতে পারে না আবার উদারনীতির অযুহাতে শ্বশুর শ্বাশুড়ির খেদমতেও যদি তার অনীহা থাকে তাহলে সেই সমাজের অবস্থা কেমন হবে একবার কল্পনা করুন! উদার নির্দেশনার সুযোগে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ কি একজন মুসলিমের নিকট কাম্য?

ইসলামের আরেকটি মূলনীতি এখানে উল্লেখ করতে চাই । চার মাযহাব সহ অধিকাংশ বিদ্বানরা একমত যে “স্ত্রীর ঔষধ ও চিকিৎসার খরচ বহন করতে স্বামী মোটেই বাধ্য নয়”,বিস্তারিত দেখুনঃ
আরবী shorturl.at/sJRX0
ইংরেজিঃ shorturl.at/lAHLR

ইসলাম চাপিয়ে না দিলেও স্বামীরা এই উদারনীতির অযুহাতে কখনোই স্ত্রীর চিকিৎসা করতে পিছুপা হয় না। দায়িত্ববোধ,মনুষ্যত্ব ও কমনসেন্সের তাড়নায় একজন স্বামী নিজের সবটুকু উজাড় করে দেয় স্ত্রী সুচিকিৎসার জন্য। এটাকে সে স্ত্রীর প্রতি “দয়া বা করুণা” হিসেবে মূল্যায়ন করে না,মূল্যায়ন করে ‘ভালোবাসার দায়িত্ব’ হিসেবে। চিকিৎসার খরচ যোগাতে ব্যর্থ হলে চরম পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার পুরুষটিও এটাকে নিজের ‘ব্যর্থতা’ হিসেবে মূল্যায়ন করে তবু উদারনীতিকে ‘অযুহাত’ হিসেবে দাঁড় করিয়ে ভালোবাসার অপমান করে না! কিন্তু শ্বশুর শ্বাশুড়ির খেদমতের কথা বললে নারীবাদী মানসিকতার ‘কতিপয়’ স্ত্রী উদারনীতিকে অযুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে মোটেও দ্বিধা করে না।

নফল নামাজ/রোজা,তাহাজ্জুদ,সদকা,যিকির,তেলাওয়াত ইত্যাদি করতে ইসলাম একজন মুসলিমকে বাধ্য করেনি কিন্তু এগুলো ছাড়া ভালো মুসলিম হওয়া সম্ভব কি? তেমনই উদারনীতির সুযোগ নিয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ কখনোই একজন সত্যিকারের মুসলিমের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না।

রাসূল সাঃ বলেছেনঃ
وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ فِي بَيْتِ زَوْجِهَا وَمَسْؤولَةٌ عَنْ رَعِيَّتِهَا
ভাবার্থঃ প্রত্যেক স্ত্রী তার স্বামীর সংসারের দায়িত্বশীল,পরকালে সে এই দায়িত্ব সম্পর্কে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হবে। (আদাবুল মুফরাদঃ২১১ নং হাদীস)

স্বামীর অপারগতা কিংবা অনুপস্থিতিতে তার মা-বাবার দেখভাল করা কি সেই সাংসারিক দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত নয়?
স্বামীর মা-বাবার দেখভাল করা কি স্বামীর প্রতি ভালোবাসার অংশ নয়?
মা-বাবার সাথে সদ্ব্যবহার ওয়াজিব ও জান্নাত লাভের অন্যতম কারণ। তাই জান্নাতের পথে স্বামীকে সহযোগিতা কি স্ত্রীর কর্তব্য নয়?
স্ত্রীর নিজের মা-বাবার সাথে ভাইয়ের স্ত্রী এমন আচরণ করলে তিনি নিশ্চয়ই খুশি হবেন না,তবে স্বামীর মা-বাবার ক্ষেত্রে তাদের কেন এই দ্বিমুখীতা?

তাই আসুন তাদের জীবনের শেষ বেলায় সেবার নামে করুণা নয় বরং এটাকে ভালোবাসা ও দায়িত্ব হিসেবে মূল্যায়ন করি। একইভাবে স্ত্রী বা পুত্রবধূকে সেবাদাসী নয় তাকে হৃদয় রাজ্যের রাণী ও কণ্যার মতো মূল্যায়ন করি। পারস্পরিক মূল্যায়ন ও সহযোগিতাপূর্ণ মানসিকতাই পারে সমাজের আমূল পরিবর্তন ঘটাতে।

আমাদের এই মানসিক দৈন্যতা কাটিয়ে উঠতে না পারলে পারিবারিক সম্প্রীতি ভাঙনের যে আওয়াজ আমরা শুনতে পাচ্ছি তা দিন দিন হয়তো তা আরও প্রকট হয়ে উঠবে!

লেখক: ইসলামী বিষয়ে কলাম লেখক ও অনলাইন অ‍্যাকটিভিস্ট

আরও পড়ুন