Ads

মিশরীয় সভ্যতায় নারীদের জীবনযাপনের চিত্র

।। মুস্তফা আজাদ ।।

পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতাগুলোর অন্যতম হলো প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা। পৃথিবীর শুরু থেকেই অনেক রহস্য নিয়ে গড়ে উঠেছে এই নীলনদ আর পিরামিডের দেশ। কয়েক হাজার বছর পূর্বে বিশ্বের সকল সভ্যতায় নারীদের যখন তুচ্ছ করে দেখা হতো তখন কেবল মিশর দিয়েছে নারীদের অগ্রাধিকার।  প্রাচীন মিশরে স্বাধীনতা, সামাজিক মর্যাদা, অধিকার ও ক্ষমতায় নারীরা ছিল পুরুষের সমান। সেইসময় মিশরে অনেক প্রভাবশালী পদেও নারীরা ছিল।

প্রাচীন মিশরে বিশ্বাস করা হতো যে, একজন নারীই পরিবার ও জীবনকে আলোকিত করে রাখে। জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে নারী ভূমিকাই বেশি।  তাই মিশরের ইতিহাসে নারীদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।  প্রায় ৫০০০ বছর পূর্বে মিশরে ফারাওদের শাসন শুরু হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ পর্যন্ত ফারাওদের শাসন ছিল মিশরে।  সাধারণ মানুষদের কাছে ফারাওরা ছিল ঈশ্বরতুল্য। ফারাওদের স্ত্রীরাও ছিল দেবীর আসনে। তারাও ফারাওদের সম্পদে ভাগ পেত।  কেবল পুরুষরাই না নারীরাও ফারাও হতে পারত।  ফারাওদের অবর্তমানে তাদের স্ত্রীরা রাজা হতে পারত। খ্রিষ্টপূর্ব ২৯৭০ এ রানী মারনেইথ প্রথম নারী হিসেবে মিশরের ইতিহাসে ফারাও বা নারী শাসক হন। মিশরের তিন হাজার বছর ইতিহাসে ১৭০ জন ফরাওয়ের মধ্যে ৭ জন ছিলেন নারী ফারাও।  মারনেইথ ছাড়াও এর মধ্যে হাতশেপসুত, নীথহোটেপ ছিলেন অন্যতম। হাতশেপসুত তার সুশাসনের জন্য ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন।  ফারাওয়ের  সর্বোচ্চ কর্মকর্তাকে বলা হতো উজির।  এই উজির পদেও ছিল নারীদের স্থান।

প্রাচীন মিশরে নারীদের পুরুষের সমান মনে করা হতো। সামাজিকভাবে ও আইনগতভাবে নারীদের মর্যাদা ছিল পুরুষদের সমান।  নারীরা তাদের সম্পত্তির পূর্ণ মালিকানা পেত।  বিবাহের পর সম্পত্তি তাদের স্বামীর কাছে হস্তান্তর করতে হতো না।  তারা চাইলে সেই সম্পত্তি বিক্রি করতে বা অন্য কাউকে দিতে পারত। বিবাহবিচ্ছেদের পূর্ণ অধিকার ছিল নারীদের।  আবার সন্তানের ভরণপোষনের জন্য স্বামীর সম্পদের এক অংশ দাবি করার অধিকার ছিল তাদের।  মিশরের নারীরা লেখাপড়া জানত। প্রায় সব শ্রেণীর নারীরাই লিখতে পারত। বাড়ির কাজ করার পাশাপাশি তারা ইচ্ছে করলে বাইরের কাজও করতে পারত। আবার কাজের জন্য তাদের বেতনও দেয়া হতো। চাইলে ব্যবসা-বাণিজ্যও করার অধিকার ছিল তাদের।

আরও পড়ুন- প্রাচীন বাঙলার সমাজে নারীদের জীবনযাপনের চিত্র

সেসময়ে নারীদের নিরাপত্তার জন্য আইন কঠোর ছিল।  কোনো নারীকে উত্তক্ত করা হলে উত্তক্তকারীর বিরুদ্ধে বিচার ও শাস্তির বিধান ছিল।  ধর্ষণেরও ছিলো কঠোর শাস্তি।  কোনো নারীকে ধর্ষণ করা হলে আইনগতভাবে অস্ত্রোপাচারের মাধ্যমে ধর্ষণকারীকে খোজায় পরিণত করা হতো।  এ থেকে বোঝা যায় নারীদের জন্য আইনি ব্যবস্থাও অনুকূল ছিল। এভাবে প্রায় ৩০০০ বছর প্রাচীন মিশরে নারীরা তাদের অধিকার ধারণ করে ছিল।  জানা যায়, ৪১৫ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী হাইপেশিয়ার মৃত্যুর পর মিশরে নারীর সমঅধিকারও শেষ হয়ে যায়।  সেইসময় মিশরীয়রা উপলব্ধি করেছিল নারী-পুরুষের সমঅধিকার ছাড়া সমাজিক ও জাতিগত উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই তারা নারীদেরও পুরুষদের সমান মর্যাদা বজায় রেখেছিল।

বিশ্বের অন্যসব দেশে যখন নারীরা অবহেলিত ছিল, পিছিয়ে ছিল; প্রাচীন মিশর তখন নারীকে সম্মান, পদমর্যাদা, সমঅধিকার দিয়ে এগিয়ে এনে পুরো বিশ্বের কাছে, সভ্যতার কাছে  দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল।

মিশরের ধর্মও নারীর পূর্ণ স্বীকৃতি দেয়।  মিশরীয় পুরাণমতে ওরেসিস হলেন জীবন, মৃত্যু ও উর্বরতার দেবতা।  তার স্ত্রী আইসিস হলেন মাতৃত্ব, যাদু ও উর্বরতার দেবী।  মিশরীয়রা বিশ্বাস করত, সৃষ্টির পর পৃথিবী শাসন করত ওরেসিস এবং আইসিস। তারা মানত যে আইসিস নারী ও পুরুষকে সমান শক্তিতে তৈরী করেছেন।  তাই নারী-পুরুষ সমান।  নারীদেরও পূর্ণ নাগরিকতা ছিল প্রাচীন মিশরে।

কিন্তু এতসব আয়োজন, অধিকার সবকিছু ফিকে হয়ে গিয়েছিল অবাধ যৌনাচারের কাছে। সেইসময় মিশরে অবৈধ যৌনসম্পর্ক ছড়িয়ে পড়েছিল মারাত্মকভাবে। পুরুষ ও নারী যে কেউ চাইলে ইচ্ছেমতো বিবাহপূর্ববর্তী যৌন সম্পর্ক করতে পারত।  সেসময়ে ‘ভার্জিন’ বলে কোনো শব্দ ছিল না মিশরে।

লেখকঃ সাহিত্যিক, গবেষক ও কলাম লেখক

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সমাজ,পরিবার ও আত্মউন্নয়ন মূলক অসাধারণ লেখা ও আর্টিকেল পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi এ লাইক দিয়ে ফেসবুকে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন।প্রিয় লেখক! আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; প্রিয় লেখক ও পাঠক আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম এ যুক্ত হয়ে আমাদের সাথেই থাকুন ।

আরও পড়ুন