ফাহমিদা নীলা
ইসলামে মেয়েদের জন্য নির্দিষ্ট করে কোন পোশাকের উল্লেখ নাই বলেই জানি। বলা আছে,মেয়েরা পর্দা করবে। এবং তাদের পোশাক হবে ঢিলেঢালা, শালীন, ছতর ঢাকা। কোরআনের কোথাও বোরকা বা ওড়না বা অন্য কোন পোশাকের নাম আছে বলে শুনিনি। আমার জানার ভুল থাকতে পারে। যদি কেউ জানেন, দয়া করে রেফারেন্সসহ জানাবেন। তাহলে প্রশ্ন আসে বোরকাকে কেন ইসলামী পোশাক বলে ধরে নেয়া হয়? কারণ, বোরকা ঢিলেঢালা, শালীন ও আরামদায়ক পোশাক।
এখন, কেউ যদি ফিটিং বোরকা পরে আর অন্য একজন ঢিলেঢালা সাধারণ পোশাক পরে;কোনটা গ্রহণযোগ্য হবে?
উত্তরের অপেক্ষা থাকে না। এটা নিয়ে বিশদ আলোচনায় যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখছিনা। আশেপাশে যা দেখছি হরহামেশা তা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে মাথা নষ্ট হয়ে যাবে।
আমার প্রসঙ্গ আজ আলাদা। অবশ্য তা অনেকেরই পছন্দ হবে না। তবু বলি। মেয়েদের পোশাকের সুনির্দিষ্ট কোন বর্ননা না থাকলেও পুরুষের দৃষ্টির উপর কি রকম পোশাক রাখতে হবে সে সম্পর্কে যথার্থই উল্লেখ আছে। যতোবার মেয়েদের পর্দার কথা বলা হয়েছে, ততোবারই পুরুষের চোখের পর্দার কথা উল্লেখ করা হয়েছে পবিত্র গ্রন্থে। আফসোস, সবাই মেয়েদেরটা নিয়ে আলোচনা করে, ছেলেদেরটা আমলেই নেয় না। যেহেতু সবাই মেয়েদের পর্দা বিষয়ে ওয়াকিবহাল হয়েই আছেন ততোধিক আলোচনায়,তাই আমি আজ ছেলেদের পর্দা নিয়ে একটা গল্প বলবো।
একদিন এক যুবক একজন আলেমের কাছে এসে বলল,
“হুজুর,আমি একজন তরুণ যুবক । কিন্তু সমস্যা হল, আমার মাঝে প্রবল খায়েশ কাজ করে । আমি যখন রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করি, তখন আমি মেয়েদের দিকে না তাকিয়ে পারি না। আমি এখন কি করতে পারি ?”
তখন ঐ আলেম কিছুক্ষন চিন্তা করলেন । চিন্তা করার পর তাকে একটা দুধ ভর্তি গ্লাস দিলেন । গ্লাস পুরোটায় দুধে কানায় কানায় পরিপুর্ণ ছিল ।
অতঃপর ঐ আলেম তাকে বললেন,
“আমি তোমাকে বাজারের একটি ঠিকানা দিচ্ছি, তুমি এই দুধটুকু সোজা সেখানে পৌঁছিয়ে দিয়ে আসবে।”
ঐ আলেম তাকে আরও নির্দেশ দিলেন যে, গ্লাস থেকে একফোঁটা দুধও যাতে না পড়ে । অতঃপর ঐ আলেম, উনার এক ছাত্রকে ঐ যুবকের সহযোগী করে আদেশ দিলেন,
“তুমি এই যুবকের সাথে বাজারে যাও এবং সে যদি যাওয়ার সময় এই গ্লাস থেকে এক ফোঁটা দুধও ফেলে দেয়, তাহলে তুমি তাকে চরমভাবে পিটাতে থাকবে ।
ঐ যুবকটি সহজেই দুধটুকু বাজারে পৌছিয়ে দিল এবং এই সংবাদ হুজুরকে জানানোর জন্য দৌড়ে ছুটে আসল ।
হুজুর জিজ্ঞাসা করলেন,
“তুমি যাওয়ার সময় কয়টি মেয়ের চেহারা দেখেছ?”
যুবকটি সবিস্ময়ে বলল,
“হুজুর, আমি তো বুঝতেই পারিনি আমার চারপাশে কি চলছিল। আমি তো এই ভয়েই তটস্থ ছিলাম যে,আমি যদি দুধ ফেলে দিই তবে রাস্তায় সমবেত সকল মানুষের সামনে আমাকে মারা হবে।”
হুজুর হাসলেন এবং বললেন,
“মুমিনরা ঠিক এভাবেই আল্লাহকে ভয় করে । এবং মুমিনরা সবসময় চিন্তা করে,যদি সে আল্লাহর উপর বিশ্বাস ঐ দুধের ন্যায় ছিটকে ফেলে তবে তিনি সুবহানাহুওয়া তায়ালা কিয়ামত দিবসে সমগ্র সৃষ্টিজগতের সামনে তাকে অপমানিত করবেন । এভাবে সর্বদাই বিচার দিবসের চিন্তা, মুমিনদের গুনাহ্ হওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখে ।”
(চলবে)
লেখকঃ সাহিত্যিক ও চিকিৎসক