Ads

সমস্যা ও চ্যালেঞ্জঃ জীবনের জন্য একটি ধ্রুবক

।। ইব্রাহিম নাজ ।। 

বাস্তবিকভাবে আমাদের একটি জিনিস বুঝতে হবে যে—জীবন একটি পরীক্ষাগার। যেখানে জীবনকে নিয়ে গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা অথবা সফলতা-ব্যর্থতার কার্য সম্পাদন করা হয়। সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ এটি জীবনের জন্য স্বাভাবিক ব্যাপার। তারা বিভিন্ন আকারে এবং বিভিন্ন সময়ে আসে। প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু সমস্যা আছে। সুতরাং আপনি দুর্ভাগ্যবান নন বা আপনি অভিশপ্ত নন এবং আল্লাহ আপনাকে ঘৃণা করেন-এমনটাও নয়। মানুষের জীবনে সমস্যা আছে—থাকবেই। কিন্তু তাই বলে সমস্যার কাছে নত হয়ে পরাজয় বরণ করলে সমস্যা কখনোই কমবে না, সমস্যা কে কিভাবে পরাজিত করতে হবে সেই রাস্তা খুজে বের করতে হবে।

একবার আকাশে ঝড় শুরু হল, তখন সব পাখিরা আশ্রয়ের খোঁজে এদিক সেদিক ছোটাছুটি শুরু করল, শুধু একটি পাখি সোজা উপরের দিকে উড়তে শুরু করল এবং উড়তে উড়তে সে মেঘকে অতিক্রম করে ফেলল। বুঝতেই পারছেন; মেঘকে অতিক্রম করা মানে ঝড়কেও অতিক্রম করা।

অন্য পাখিরা কি পারত না এটা করতে! অবশ্যই পারত। কিন্তু তারা ভিন্ন ভাবে না ভেবে সবাই যা করল তাই করা শুরু করেছিল। আমরা যদি সেই পাখিটির মত হওয়ার চেষ্টা করি—যে কিনা মেঘকে ছাড়িয়ে উপরে গিয়েছিল; আমাদের প্রতিদিনের সমস্যা গুলোকে যদি মেঘ ভেবে নিতে পারি তাহলে আমরাও সীমান্ত পেরিয়ে বহুদুর যেতে পারব ।

যেহেতু আমরা জীবনের এই ধ্রুবক (সমস্যা) এড়াতে পারছি না, তাই আমরা যা করতে পারি তা—হল আমাদের মনোভাব নিয়ে কাজ করা এবং পরীক্ষার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করা। আর তখনই প্রয়োজন হয় ধর্মের। দেখুন ধর্ম আমাদের কি বলে-  “কসম আসমানের এবং যিনি একে কায়েম করেছেন, তাঁর।”- সূরা আশ শামস : ০৫ ।

“মানুষ কি মনে করে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ শুধু এটুকু কথা বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে, আর তাদেরকে কোনো পরীক্ষা করা হবে না?”- সূরা আনকাবুত : ০২ ।

“যদি তোমাদেরকে কোন আঘাত স্পর্শ করে থাকে তবে তার অনুরূপ আঘাত উক্ত কওমকেও স্পর্শ করেছে। আর এ দিনগুলোকে আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে আবর্তন ঘটিয়ে থাকি। এভাবে আল্লাহ জানতে চান কারা ঈমানদার আর তিনি তোমাদের কিছু লোককে শহীদ হিসাবে গ্রহণ করতে চান। আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে ভালবাসেন না।”- সূরা আলে ইমরান : ১৪০

“হে মানুষ! তোমরাই আল্লাহর মুখাপেক্ষী। আর আল্লাহ তো অভাবমুক্ত ও নিজে নিজেই প্রশংসিত।” সূরা ফাতির : ১৫ ।

কোনো শর্টকাট পদ্ধতি নেই এগুলো থেকে এড়িয়ে যাওয়ার। প্রতিদিন ধর্মের (ইসলাম) অনুশীলন এবং বিশেষ করে কুরআন ও সীরাত সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমেই সমস্যার মোকাবিলা করা সম্ভব। জীবন থেকে কিছু বাস্তব শিক্ষা—

১. জীবন সব সময়ই সচল। আপনি এখন যে কর্মস্থলে কাজ করছেন ভাবছেন আপনি ছাড়া সব অচল। ভুল ভাবছেন, আসলে তা কিন্তু না। আপনি যদি আজ কাজ ছেড়ে দেন তাহলে কর্মস্থলে হয়তো সাময়িক সমস্যা তৈরি হবে, কিন্তু খুব দ্রুত আপনার উপস্থিতি সবাই ভুলে যাবে। তেমনি আজ আপনি হয়তো বন্ধুমহলে বেশ জনপ্রিয়। আপনাকে ছাড়া কোনো আড্ডাই জমে না। জেনে রাখুন, আপনি না থাকলেও আড্ডার রং কোনো অংশেই মলিন হবে না।

২. কোনো কিছুই জীবনে চিরস্থায়ী নয়। আবেগ, অনুযোগ কিংবা অভিযোগ-কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়। সামাজিক সম্পর্কগুলো সব সময়ই এক রকমের গাঢ় হবে না। আজ আপনার কাছে যাকে ভালো লাগছে, কালকে তাকে আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে। আজ যিনি প্রশংসা করছেন, কাল তিনি আপনার কঠোর সমালোচক হতেই পারেন।

৩. নিজেকে কখনোই অন্যদের সঙ্গে তুলনা করবেন না। নিজেকে নিজের সঙ্গে তুলনা করতে শিখুন। বন্ধুর ভালো চাকরির খবর শুনে নিজেকে হেয় করবেন না, বন্ধুকে উৎসাহ দিয়ে নিজের পথ নিজেই গোছানোর চেষ্টা করুন।

৪. আর্থিক স্বাধীনতা আপনার জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেয়। ধার করার অভ্যাস কিংবা ঋণে নিজেকে জড়াবেন না। চেষ্টা করুন নিজের হাতে আয় করতে। যতটা আয় করবেন, তা বুঝে ব্যয় করতে শিখুন। প্রয়োজনের বাইরের ব্যবহারের জিনিসপত্র কেনা থেকে বিরত থাকুন। অভিজ্ঞতা অর্জনের চেষ্টা করুন। দামি মুঠোফোনে যতটা আনন্দ দেয় হয়তো মঞ্চনাটক দেখার অভিজ্ঞতা আরও আনন্দ দেবে। বস্তুগত আনন্দের চেয়ে অভিজ্ঞতা, স্মৃতি জমানোর দিকে মনোযোগ দিন।

৫. যত বড়ই দুঃখ আসুক না কেন, তা মলিন হবেই। প্রেমিকাকে হারানোর বেদনা, ভালো চাকরির সুযোগ বা পরীক্ষায় ভালো ফল-নানা কারণে ব্যর্থতা আর শোক জীবনে আসতে পারে। জেনে রাখুন, সব দুঃখই ধীরে ধীরে হালকা হতে থাকে। একদিন সব দুঃখ কাটিয়ে সাধারণ জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ব আমরা।

৬. শুধু পরিশ্রমেই জীবনে সাফল্য আসে না। পরিশ্রমের সঙ্গে বুদ্ধিবৃত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সৃজনশীলতাকে যোগ করতে হয়। বছরের পর বছর একই কাজ করতে করতে জীবনকে কখনোই একঘেয়েমির বৃত্তে আটকে ফেলবেন না। সিদ্ধান্ত নিয়ে ঝুঁকি নিতে শিখুন। ঝুঁকি নেওয়ার একটা সুবিধা হচ্ছে, আপনি জানেন না সামনে কী আসবে। এই অচেনা আর অজানা পথ সামনে নতুন দ্বার খুলে দেয়।

৭. সাফল্য কিংবা ব্যর্থতাই জীবনের সবকিছু না। সময়কে নান্দনিক উপায়ে রাঙিয়ে বেঁচে থাকাই জীবন।

৮. অন্যের মতামতকেই জীবনের সব বলে ভাববেন না। একই বই কারও কাছে ভালো লাগতে পারে, কারও কাছে খারাপ লাগতে পারে। তেমনি আপনার কাজ কারও কাছে ভালো লাগতে পারে, কারও কাছে খারাপ লাগতে পারে-সব সময় নিজের সঙ্গে বোঝাপড়ার মাধ্যমে কাজ করুন।

৯. মুঠোফোন বা সামাজিক দুনিয়াই জীবনের সব না। বন্ধুর সাফল্যের ছবি ফেসবুকে দেখে মন খারাপ হতেই পারে আপনার। আবার দিনের অনেকটা সময় মুঠোফোনের পেছনে ব্যয় করার ফল কিন্তু ইতিবাচক হয় না। নিজের দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করুন। নিজের শখকে গুরুত্ব দিন।

১০. নিজের পথ নিজেকেই তৈরি করতে হয়, এবং সে অনুযায়ী পথও চলতে হয়। অন্যরা আপনাকে দারুণ পছন্দ করে হয়তো, কিন্তু দিন শেষে আপনার পথ আপনাকেই অতিক্রম করতে হবে। প্রত্যেক মানুষের এগিয়ে চলার গল্প, কষ্টের গল্প ভিন্ন হয়-তাই আপনাকে কেউ এগিয়ে নেবে তা ভেবে কখনোই বসে থাকবেন না।

লেখকঃ লেখক ও ছাত্র

 

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সমাজ,পরিবার ও আত্মউন্নয়ন মূলক অসাধারণ লেখা ও আর্টিকেল পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi এ লাইক দিন।

এবং প্রিয় লেখক ! আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected]

প্রিয় লেখক ও পাঠক আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম এ যুক্ত হয়ে আমাদের সাথেই থাকুন ।

আরও পড়ুন