।। ডা. ফাহমিদা শিরীন নীলা ।।
স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে কোন সমস্যা?
“জি না ভাই ও বোনেরা, রক্তের গ্রুপ এক হলে সন্তানের কোন সমস্যা হয় না।”
আমি ঠিক করেছিলাম, চেম্বারের সামনে বেশ বড়সড় করে উপরোক্ত কথাটা লিখে একটা বিলবোর্ড বানিয়ে রাখবো।
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আমরা ক্লান্ত। এদেশের ধাত্রীবিদদের প্রতিনিয়ত এই একই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়।
-ম্যাডাম, আমাদের দু’জনের রক্তের গ্রুপ তো এক। বাচ্চার কোন সমস্যা হবে কি ?
আমার দেশে অদ্ভূত কিছু মিথ প্রচলিত আছে। তন্মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় মিথ এইটি। প্রায় প্রতিটি ননমেডিকেল পারসনের ধারণা এ ব্যাপারে বদ্ধপরিকর যে, স্পাউসের ব্লাডগ্রুপ এক হলে বাচ্চা অস্বাভাবিক হয়। এই ধারণাটি ভুল।
আরও পড়ুন-স্বামী–স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে কি সন্তানের জটিলতা হয়?
রক্তের গ্রুপের ক্ষেত্রে লেটার বা অক্ষরের চেয়ে চিহ্ন অর্থাৎ পজেটিভ(+) না নেগেটিভ(-) এটি বেশী গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন, দুজন স্পাউসেরই রক্তের গ্রুপ এ(A), এটা কোন সমস্যা না। কিন্তু যদি দেখা যায় স্ত্রীর এ নেগেটিভ(A-) কিন্তু স্বামীর এ পজেটিভ(A+), এক্ষেত্রে বাচ্চার সমস্যা দেখা দিতে পারে, বিশেষতঃ প্রথম বাচ্চার পর হতে। এর মূল কারণ হল, প্রথম বাচ্চা যদি বাবার থেকে Rh এন্টিজেন পায়, তাহলে সে হবে পজেটিভ রক্তগ্রুপ। এই পজেটিভ রক্ত অনেক সময় মায়ের রক্তের সাথে মিশে যায়। ফলে মায়ের শরীরে এই এন্টিজেনের বিপরীতে এন্টিবডি তৈরী হয়ে থাকে। পরবর্তীতে আবার সন্তানধারণ করলে এবং ঐ সন্তানও পজেটিভ রক্ত হলে শুরু হয় ঝামেলা। মায়ের রক্তের সাথে থাকা Rh এন্টিবডি বাচ্চার শরীরে ঢুকে Rh এন্টিজেনের সাথে লাগিয়ে দেয় যুদ্ধ। ফলাফলে বাচ্চার রক্তকণিকাগুলো ভেঙে যেতে থাকে। এবং বাচ্চা ধীরে ধীরে রক্তশূণ্য হতে থাকে। দেখা দেয়, নানা ধরনের জটিলতা। এই বাচ্চাগুলো বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই বাঁচে না।
আরও পড়ুন- স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ এক হলে সন্তানের কী ঝুঁকি?
এর ঠিক বিপরীতটা হলে অর্থাৎ স্ত্রী পজেটিভ রক্ত গ্রুপ কিন্তু স্বামী নেগেটিভ হলে কোন সমস্যাই হয় না। কেননা বাচ্চা যদি বাবার মতো নেগেটিভ ব্লাড গ্রুপও হয়,এর অর্থ হল তার রক্তে Rh এন্টিজেন অনুপস্থিত। এতে কোন সমস্যা হয় না। কেননা বাচ্চার রক্ত কোনভাবে মায়ের পজেটিভ রক্তে মিশলেও এন্টিজেন না থাকার কারণে কোনরকম এন্টিবডি তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
সুতরাং, আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, স্বামী-স্ত্রী উভয়ের রক্তের গ্রুপ এক হলে কোন সমস্যা হয় না। তবে পরবর্তী সময়ে জটিলতা এড়াতে বিয়ের পূর্বেই বর-কনে উভয়েরই ব্লাডগ্রুপ পরীক্ষা করে নেয়া জরুরী। কথায় আছে না, সাবধানের মার নেই।
লেখকের আরও লেখা পড়ুন-
ডিপ্রেশন বা হতাশাঃ খুঁজে বের করুন ভাল থাকার উপায়
নাস্তিকতা বনাম অসাম্প্রদায়িকতা
লেখকঃ ডা. ফাহমিদা শিরীন নীলা
এমবিবিএস; বিসিএস(স্বাস্থ্য);
এফসিপিএস(অবস্ এন্ড গাইনী)
ফিগো ফেলো(ইটালী)
গাইনী কনসালটেন্ট,
পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বগুড়া।
ডক্টরস ক্লিনিক, বগুড়া।