Ads

সময়ের সাথে পাল্টাতে হবে জীবনধারা

।। এস এম মুকুল ।।

জীবনযাত্রার ব্যয় হু হু বাড়ছেই। বড়লোকের (ধনী) সমস্যা নাই! কারণ তাদের বৈধ-অবৈধ আয়ের সীমা নাই। গরীবেরও সমস্যা নাই! কারণ তাদের খরচ তুলনামূলকভাবে কম, আয়ের ক্ষেত্র বেশি। গভীর সঙ্কটে মধ্যবিত্তরা। মধ্যবিত্তরা চিরকালের না ঘরকা-না ঘটকা অবস্থা। ৫০ হাজার টাকা আয় করেও ঢাকা শহরে জীবন চালানো কঠিন। প্রশ্ন হচ্ছে- ৫০ হাজার টাকা কয় জনে মাসে আয় করতে পারে? এমতাবস্থায় তাহলে কী করবে মধ্যবিত্তরা?

অনেকের ধারণা- এমন পরিস্থিতিতে খরচ কমাতে হবে। তা না হলে টিকে থাকা যাবেনা! আমি একমত নই। প্রকৃত পক্ষে খরচ কমিয়েও আসলে আমরা টিকতে পারব না। কারণ খরচ ক্রমাগতভাবে বাড়বে- এটাই স্বাভাবিক। বরং আমি মনেকরি,

টিকে থাকার জন্য খরচ কমানোর চেয়ে আয় বাড়ানো জরুরি। একইসাথে মিতব্যয়চর্চা, সঞ্চয় প্রবণতা থাকা আবশ্যক। তবে আপনার ব্যয় যদি আয়ের তুলনায় বেশি হয়- তাহলে মিতব্যয় কিংবা সঞ্চয় কিভাবে চর্চা করবেন?

আমার মনে হচ্ছে- সময় পাল্টেছে। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী, সামাজিকতা, খাদ্যাভ্যাস পাল্টাতে হবে। পরিবারের একজনের আয় দিয়ে ব্যয় নির্বাহ সম্ভব হবে না। তাই গৃহিনী থেকে সন্তানরাও আয়মূলক কাজের সাথে শিক্ষাজীবনেই সম্পৃক্ত হতে হবে। এখন আ্উটসোর্সিং অনলাইনভিত্তিক কাজ করার সুযোগ অবারিত। আগামি ১০ থেকে ২০ বছরে ইকমার্স বাণিজ্য কেন্দ্রিক ডিজিটাল সোসাইটি গড়ে উঠবে। প্রতিটি পরিবারে ২-৪ জন কমবেশি আয়ের সাথে সম্পৃক্ত হবে । ঢাকায় এককভাবে বাসা নিয়ে থাকার মানসিকতার পরিবর্তন হবে। সাবলেট বা শেয়ারিং অবস্থানের দিকে ঝুকবে মানুষ। খাবার-দাবার অনলাইন অর্ডারের মাধ্যমে বা রেস্টুরেন্টে খাবারে অভ্যস্ত হবে। কারণ সময় থাকবে না। সপ্তাহান্তে হয় বাসায় রান্না করে খাবে নতুবা ভ্রমণে চলে যাবে। কর্মক্ষেত্রগুলো ডে নাইট ভিত্তিক হতে থাকবে। হোম অফিস হবে। তখন নতুন নতুন পেশার সৃজন হবে।

আমার কাছে মনে হয়, আমাদের এখন থেকেই এসব চর্চায় মনযোগ দেয়া দরকার। ঘন্টা হিসেবে কাজ, সাপ্তাহিক পেমেন্ট এগুলোও চালু হবে। আমরা সপ্তাহে একদিন হোম অফিস চর্চা করতে পারি (যেসব কাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য)। কাজের ধরণ বুঝে কোনো অফিস সকাল সাতটায় শুরু হবে, কোনো অফিস আটটায়, কোনো অফিস নয়টাই কোনোটা দশটাই। অর্থাৎ সকাল সাতটা থেকে দশটা পর্যন্ত কাজের ধরণ অনুযায়ী অফিস শুরুর সময় চালু হতে পারে। যানযট কিছুটা হলেও কমবে। কারণ একসাথে অধিক লোকের অফিস বা বাসায় ফেরার চাপ কমে যাবে। নাইট অফিসও চালু করা যায়। সে চর্চা এখন থেকে শুরু হতে পারে। মাসে একদিন দিয়ে নাইট অফিস চর্চা শুরু হোকনা। ধরা যাক বৃহষ্পতিবারে নাইট অফিস নির্ধারণ করা হলো। তারমানে অফিসকর্মী বুধবারে সকাল থেকে টানা দুই শিফট কাজ করবেন। সকাল ১০টায় অফিস হলে সন্ধ্যা ৬টায় শেষ। আবার রাত ৮টায় শুরু হয়ে রাত ৩টায় শেষ। ২-৩ ঘন্টা অফিসে রেস্ট নিয়ে ভোরে বাসায় ফিরবেন। যেহেতু বুধার রাতে অফিস করেছেন একারণে বৃহষ্পতিবার ছুটি এবং শুক্রবার আপনার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় টানা দুই দিন আপনি বাসায় পরিবারকে সময় দিতে পারছেন এবং প্রয়োজনীয় কাজ আর বিনোদন সবই করতে পারছেন। আরেকটা বিষয় আমার কাছে মনে হয়- শুক্রবার কেন সব অফিস বন্ধ থাকবে? অফিসের সাপ্তাহিক ছুটিও ভিন্ন ভিন্ন দিনে হতে পারে। আবার পুরো সপ্তাহই খোলা থাকবে কর্মীরা অল্টারনেট ডে-তে ডে-অফ বা ছুটি কাটাবে। যেভাবে মিডিয়া হাউজগুলো যুগে যুগে চলে আসছে। আমাদের তো সমস্যা হয় না।

সে অনুযায়ী মার্কেটগুলোর শুরু ও শেষ টাইম নির্ধারণ করতে হবে। মাকের্টটগুলো এলাকাভিত্তিক সাপ্তাহিক বন্ধ নীতি মেনে চলবে। এরিয়া স্কুলিং পদ্ধতি চালু হলে উত্তরার বাসিন্দারা বাধ্য হয়েই মতিঝিলের স্কুলে বাচ্চাকে পড়াতে আসবে না। অফিস বা কাজের ধরণ ভেদে দুই শিফটে কাজ হবে। ধরুন একটা গামেন্টেসে ৫০০ জন কাজ করে। তাদের ডিউটি টাইম সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা বা ১০টা পর্যন্ত। যদিও ৫টা পর অভার টাইম দেয়া হয় তবুও একজন মানুষ একটানা ১০-১২ ঘন্টা কাজ করলে তার পক্ষে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব না। অপরপক্ষে দুই শিফটে কাজের সুযোগ থাকলে আরো বেশি মানুষের কমংস্থান হবে।

(চলবে)

লেখক এস এম মুকুল

লেখকঃ লেখক, গবেষক, উন্নয়নকর্মী ও বিভাগীয় সম্পাদক, হইচই, বাংলাদেশের খবর

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সমাজ,পরিবার ও আত্মউন্নয়ন মূলক অসাধারণ লেখা ও আর্টিকেল পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi এ লাইক দিন।

এবং প্রিয় লেখক ! আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected]

প্রিয় লেখক ও পাঠক আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম এ যুক্ত হয়ে আমাদের সাথেই থাকুন ।

আরও পড়ুন