Ads

নতুন মায়েদের আত্মবিশ্বাসী হওয়ার সাত উপায়

মূলঃ সারাহ গ্যালন
অনুবাদঃ মিজান রহমান

আপনার যখন সন্তান হয়নি, তখন আপনার একটা আলাদা জীবন ছিল, আলাদা রুটিন ছিল, আলাদা কাজের ধরণ ছিল, হয়তো সেসব কাজে ছিল আলাদা রকম আত্মবিশ্বাস। হয়তো আপনার একটা চাকুরী ছিল, সেই চাকুরীতে বেশ ভালো দক্ষতা ছিল, চাকুরীতে উন্নতির জন্য বেশ চেষ্টাও হয়তো করেছিলেন, সব মিলিয়ে আপনি ছিলেন প্রাণ চাঞ্চল্যে ভরপুর। তারপর যে-ই না একজন নতুন অতিথী এলো আপনার জীবনে, তখন থেকে আপনি বেশ নাভিশ্বাস অনুভব করতে শুরু করেছেন। অনুভব করেন নানা রকম সংশয়, সংকট!

একজন মায়ের সন্তান জন্মের পরপরই শুরু হয় এক নতুন জীবন। কঠিন যুদ্ধের মতো। সন্তানকে দুধপান করানো থেকে শুরু করে, তার ভিজিয়ে ফেলা কাপড় বদলানো, ঘুমের রুটিন ঠিক করা, নানা রকম কাজ। এই সময়ে এতো নতুন নতুন অভিজ্ঞতা সামনে আসতে থাকে যে, প্রস্তুতি ছাড়াই যেনো লড়াইয়ে নেমে পড়ার মতো ব্যাপার। এরকম সময়ে কিন্তু বিচলিত হলে চলে না।

একজন নতুন মা হিসেবে এরকম সময়ে অবিচল থাকার হয়তো অনেক উপায়ই আছে। আমি আপনাকে সাতটি উপায়ের কথা বলি।

এক. এরকম সময়ে শিশুদের ব্যাপারে আপনার জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করুন
এই কাজটা একটু সময় সাপেক্ষ। এ জন্য দরকার হবে একটু পড়াশোনার। গর্ভধারণ থেকে শুরু করে, সন্তান জন্মদান, নবজাতকের নানা রকম গুরুত্বপূর্ণ যত্ন, বিশেষ সচেতনতা এসব বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ আপনার আত্মবিশ্বাসকে বাড়াবে এতে সন্দেহ নেই।
ম্যারিজ এন্ড ফ্যামিলি থেরাপিস্ট ক্যাটি জিসকিন্ডের পরামর্শ,

“এই সময়ে আত্মবিশ্বাসী হতে নানা রকম বই পড়ুন, ভিডিও দেখুন, ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করুন, নিজস্ব চেষ্টা থেকে শিখুন।”

সন্তান প্রতিপালন বিষয়ক বই পড়া, প্যারেন্টিং বিষয়ক ওয়েবসাইটে ঢু মারা সন্তান প্রতিপালন সম্পর্কে আপনার প্রাথমিক জ্ঞানকে বেশ সমৃদ্ধ করবে। আপনি যে মাধ্যম থেকেই শিখুন না কেনো, যতই শিখবেন ততই আপনার আত্মবিশ্বাস সমৃদ্ধ হবে এতে মোটেও সন্দেহ নেই।

দুই. কঠিন সময়ে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলুন
আজকাল প্যারেন্টিং এক্সপার্ট কিন্তু পেয়ে যান হাতের নাগালেই। তবে এ ক্ষেত্রে একটু সাবধান থাকাই ভালো। যখন আপনার সন্তানের জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক কোনো সমস্যার পরামর্শের দরকার হবে তখন সাধারণ প্যারেন্টিং এক্সপার্টের সঙ্গে কথা বলে লাভ হবে না সে তো বুঝতেই পারছেন। এ সময়ে একজন অভিজ্ঞ শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই উচিত।

তিন. ইতিবাচক ধারণা রাখুন (নিজের প্রতি যত্ন নিন)
নিজের সঙ্গে আমরা কীভাবে যোগাযোগ করি তার ধরণ আমাদের আত্মবিশ্বাসের ক্ষেত্রে বেশ বড় ভূমিকা রাখে। যখনই আপনি ক্লান্ত অনুভব করেন, নিজেকে এই বলে স্বান্তনা দিন, মা হিসেবে আপনি নতুন, আপনি শিখছেন।

“উদ্বিগ্নতা আমাদেরকে একজন ভালো মা হতে সাহায্য করে না, বরং একজন ভালো মা হতে সাহায্য করে আমাদের স্থির মানসিকতা”

বলেন, ক্যাটি জিসকিন্ড। একটা ভালো দিন শুরু করার জন্য দিনটা কিছু ভালো চিন্তা দিয়ে শুরু করতে পারেন। নিজেকে বলুন, “গতকাল সুন্দর ছিল, আজ আরো একটা সুন্দর দিন শুরু হতে যাচ্ছে।’ বিশ্রামের ঘাটতি, আর খাবারের ব্যাপারে সচেতন হোন। অনিয়মিত খাবার আর বিশ্রামের ঘাটতি নিয়ে কেউ সফল মা হতে পারে না।

চার. মায়েদের কোনো গ্রুপে জয়েন করতে পারেন
আপনার আগেও অনেকে মা হয়েছেন, আপনার আগে তারা আপনার পথে হেটেছেন। অভিজ্ঞদের কাছে মাতৃত্বের গল্প শুনুন। নতুন নতুন বন্ধু বানান। বন্ধুত্ব মানসিক স্বাস্থ্যের সহায়ক। কঠিন সময়ে বন্ধুরাই আমাদেরকে মানসিক শক্তি যোগায়। আপনি যে সমস্যা মোকাবেলা করছেন, একই সমস্যা অন্য কেউ না কেউ ইতিমধ্যে অতিক্রম করেছেন। তাদের কাছে তাদের জীবনের গল্প শুনুন, আপনি বেশ সাফল্যের সঙ্গেই লিখতে সক্ষম হবেন আপনার জীবনের গল্প।

পাঁচ. পরামর্শ গ্রহণে কিছুটা সাবধানও হতে হবে
অন্যের অভিজ্ঞতা আমাদের সঠিক পথ দেখায় বটে, কিন্তু আপনি যখন নতুন মা হবেন, চারদিক থেকে মাঝে মাঝে এমন কিছু মতামত আর পরামর্শ আসবে যে, আপনার মনে হবে আপনি যা করছেন তার কিছুই ঠিক হচ্ছে না। এরকম অবস্থায় যথেষ্ট ইতিবাচক মানসিক শক্তি বা প্রোএক্টিভ মানসিকতা ধারণ করতে হবে।

“অন্যরা যখন পরামর্শ দেয় আপনি তাদেরকে থামিয়ে রাখতে পারবেন না। আপনি যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন তা হলো, আপনি কোন পরামর্শটা গ্রহণ করবেন, কোনটা গ্রহণ করবেন না”

বলেন, সাইকোথেরাপিস্ট কায়েস হোডোস। হোডোস আরো বলেন,

“ভালো প্যারেন্টস হওয়ার কেবল একটি মাত্র পথ নেই, এর অনেক পথ। কোন পথে হাঁটবেন সেই সিদ্ধান্ত নিতে হতে হবে কিছুটা কৌশলী হয়ে।”

ছয়. শখের কাজ করুন
সন্তান জন্মের পর আপনার অনেক পুরোনো কাজকে হয়তো বিদায় জানাতে হয়েছে, কিন্তু এখনও এমন কিছু কাজের সুযোগ রয়ে গেছে যে কাজ করলে আপনি আত্মবিশ্বাস অনুভব করেন। হয়তো গান গাইতে ভালোবাসেন, গান গান। করুন ধর্মচর্চা। যুক্তে হয়ে যান সেসব কাজে যেসব কাজে আপনি পান আনন্দ। এসব কাজে কেবল সময় ভালো কাটে এমন না, বরং প্যারেন্টিংয়ের অভিজ্ঞতায় নতুন করে আত্মবিশ্বাসের স্বাদ এনে দেয়।

সাত. কাজটা যতই কঠিন মনে হোক, কাজটা চালু রাখুন
কখনো কখনো কঠিন মনে হয় বলে আমরা কোনো কাজে হাল ছেড়ে দিই। মাতৃত্বের কাজে হাল ছাড়ার উপায় কোথায়? আপনি যখন মা, তখন আপনি স্বাভাবিকভাবেই নতুন নতুন সব কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হবেন। যে কোনো কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হন না কেনো কাজটা সম্পাদন করুন। কখনো দেখবেন, হয়তো বিশ মিনিটের মধ্যে কোথাও একটা জরুরী কাজে বের হতে হবে, আবার বাচ্চাকে দুধপান করাতে হবে। নিত্য এরকম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবেন আপনি। এমন সময় হাল ছাড়ার উপায় কোথায়? এমন সময়গুলোতে নিজের মতো একটা উপায় বের করুন। সাইকোথেরাপিস্ট হোডোসের পরার্শ, ‘আপনি যখন মা, তখন যে কোনো সংশয়কে বিদায় জানান, আর চেষ্টা করুন।” এমনটি করতে পারলে,

“আপনি সহসা আবিষ্কার করে ফেলবেন যে, হ্যাঁ, আপনিও পারেন। যখনই আপনি কঠিন কাজ সম্পাদনের একটা উপায় বের করেন, এটা আপনার এবং আপনার বাচ্চার, উভয়ের জন্য ইতিবাচক ফল নিয়ে আসে।”

যখনই একটা কঠিন কাজ সম্পাদন করুন না কেনো, নিজেকে ধন্যবাদ দিতে ভুলে যাবেন না। আপনিই প্রথম ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য কারণ, মা হিসেবে আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে মহৎ কাজটি সম্পাদন করছেন।

নোট: মূল লেখাটি সারাহ গ্যালনের এবং  ভেরিওয়েলফ্যামিলি ডট কমে প্রকাশিত। অনুবাদ করেছেন, মিজান রহমান।

অনুবাদকঃ কলাম লেখক ও এডমিন,প্রোডাক্টিভ প্যারেন্টিং

আরও পড়ুন