জাহিদ হাসান
যদি মনে করি যে ভাল স্কুলে বা ভাল কলেজে বা ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিলেই আমি চিন্তা-মুক্ত, এখন কেবল সন্তানের ভালো রেজাল্ট আর ভাল চাকুরীর অপেক্ষা, আর এভাবেই আমার সন্তান একজন বড় কর্মকর্তা হবেন । এভাবে একমুখী (ওয়ান ওয়ে) চিন্তা করলে আমার সন্তান একজন বড় কর্মকর্তা হওয়ার পাশাপাশি একজন অমানুষ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী । কারণ এখনকার স্কুল, কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার এমন কোন ব্যবস্থা নেই যেখানে নীতি নৈতিকতা শেখানো হয়।
মা-বাবাদের মধ্যে কোন কোন সময় একটি ভুল হিসেব কাজ করে । আমরা মনে করি আমার সন্তান সবসময় আমার কথা শুনবে । এটা সবসময় ঠিক নয় ।
আমার সন্তান এক স্বাধীন সত্তা । তার নিজস্ব অভিরুচি, ধ্যানধারণা, কল্পনা শক্তি, বোধশক্তি, পছন্দ-অপছন্দের স্বতন্ত্র তালিকা রয়েছে । আমি চাইবো আর সে তা মেনে নেবে এটা সবক্ষেত্রে আশা করা ঠিক নয়। সুতরাং তার জন্য মা-বাবাদের উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে । তাকে কেবল ভাল হওয়ার (থিওরি) শিক্ষা দেয়া
যাবে না। সাথে (প্যাক্টিক্যাল) ও করাতে হবে । নিজে একটি ভাল কাজ করে তাকে তা উপলব্ধি করার সুযোগ দিতে হবে ।
যেমনঃ
১. আমার গরীব আত্মীয়ের খোঁজ খবর যেন নেই ।
২. সামর্থানুযায়ী তাদের অর্থনৈতিক প্রয়োজন পূরণ করি ।
৩. সন্তানকেও এর গুরুত্ব বুঝিয়ে বলি ।
৪. দান করার জন্য উৎসাহ দেই। নিজেও বেশি বেশি দান করি।
৫. সপ্তাহে বা মাসে দাদা-দাদির সাথে দেখা করাতে নিয়ে যাই।
৬. নিজেরা মিথ্যা বলা থেকে দূরে থাকি।
৭. গীবত/পরনিন্দা থেকে পরিবারকে বাচিয়ে রাখি।এর ভয়াবহতা নিয়ে আলোচনা করি।
৮. নিজে ঘরে ঢুকার সময় সালাম দিয়ে প্রবেশ করি ।
৯. সন্তানকে প্রতিদিন সালাম দেই । (আমাদের সমাজে আরেকটি উল্লেখযোগ্য ভুল প্রত্যাশা হলো ছোটদের কাছ থেকে সালাম আশা করা) । এটা এক জঘন্য বিকৃতি ও সত্যের খেলাফ । আসলে সালামের মাধ্যমে আমি দু’আ করি । আমি তো চাই সন্তানের কল্যাণ। সুতরাং সন্তানকে দেখা মাত্রই যেন সালাম দেই । তাহলে সে খুব সহজে শিখে নেবে ।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশী বেশী সালামের প্রচলনের জোর তাগিদ দিয়েছেন । এতে করে সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হয় । সম্মান বৃদ্ধি পায় ।
আমি সব সময়ই বলি,শিশুরা অনুকরণ প্রিয়।তারা অনুকরণ করে শিখতেই ভালোবাসে।
তাই আপনি আপনার সন্তানের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হোন।
ইনশাআল্লাহ আপনার সন্তান একজন সৎ, সাহসী,নিষ্ঠাবান সন্তান হিসাবে গড়ে উঠবে।
লেখকঃ প্যারেন্টিং বিষয়ে কলাম লেখক