সুমেরা জামানঃ
আসসালামুআলাইকুম দুলাভাই।
ওয়ালাকুম আসসালাম শালাবাবু। জামান কি খবর তোমাদের?
জামান : ধুরু! রাখেন অন্যের খবর। আপনার নিজের বউটার যে মাথা নষ্ট হয়ে গেছে সে খবর রাখেন?
দুলাভাই : না জানিনা তো। কই, কোথায় কোন চ্যানেলে নিউজ দিচ্ছে? নাকি ফেসবুকে লাইভ দেখাচ্ছে?
ইনবক্সে লিংক দাও তো। দেখিগা।
জামান: নাহ্! ঠিকই আছে। যেমন বউ তার তেমন বর।
দুলাভাই: কি হয়েছে? দ্রুত বলো। আমার ল্যঙ্গুয়েজ ক্লাস আছে। আর তোমার বোন দুধে আলতা সরি হলুদ মাখিয়ে গ্লাসে করে নিয়ে এসেছে। ইহা পান করে আমি ক্লাসে বসবো। এই সুখাদ্য নাকি বড়আপা খেতে বলেছে। শরীরে ইমিউনিটি বাড়াতে।
জামান : বলেন কি? এই নিয়েই সুমেরার সাথে ঝামেলা চলছে। সেও বলছে বড়আপা খেতে বলেছে!
দুধ দিয়ে হলুদ খাওয়া যায়! আপনার বউ ছাড়াতো এ দুনিয়ায় আমার কোন বড়আপা নাই। সেজন্যই তো আপনাকে ফোন দিছি। তাহলে বড়আপাটা কে?
দুলাভাই: তোমার বোন বলেছে বড়আপা নাকি গুরুত্বপুর্ন মানুষ তার নাম মুখে আনা যাবেনা। ব্যাপারটা অনেকটা ভাসুরের মত। লক্ষীমন্ত নারীরা যেমন ভাসুরের নাম মুখে আনে না।
জামান : এই হলুদের অত্যাচারে অতিষ্ট আমার জীবন । আজ সকালে নাস্তার টেবিলে রুটির সাথে ডিম দিতে বলেছিলাম। সেই ডিমপোচ দেখে মনে হচ্ছে ডিম সদ্য কোন গায়েহলুদের অনুষ্ঠান থেকে উঠে এসেছে।
দুলাভাই: হ্যালো… হ্যালো….
জামান: শুনতে পাচ্ছেন না?
দুলাভাই: বল। এখন পাচ্ছি।
জামান: বলে কি হবে! কাজের কথা কেউ শুনতে পায়না ! দুপুরের লাঞ্চে বলেছিলাম পটল পুড়িয়ে ভর্তা করতে। সেখানেও হলুদের অস্তিত্ব!
দুলাভাই: তোমার বোন তো কাল পাকা আম শুকনা মরিচ পুড়িয়ে, লবন, হলুদ, জিরার গুড়া দিয়ে মাখিয়ে দিয়েছে। বেশ টেস্ট।
জামান: সুমেরা তো মুড়ি, আম, জাম,লিচু, কাঁঠাল, পেয়ারা,শসা মাখা, ভর্তা, সরবত সবকিছুই হলুদে রাঙ্গিয়ে দিচ্ছে।
দুলাভাই: আমার তো সন্দেহ হয় তোমার বোন র চায়ের মধ্যেও হলুদ দিচ্ছে নাকি কে জানে! শুনেছি ইমিউনিটি বাড়বে। যা দেয় মুখবুজে খেয়ে নাও। সামনে আবার লকডাউন দিবে। ঘরে টিকতে হলে ভাল হয়ে যাও।
জামান : কিসের ইমিউনিটি? দেশের মানুষের মগজে হিউম্যানিটি নেই আর বডিতে ইমিউনিটি নিয়ে করবে করোনা উদ্ধার ! আপনি যখন ইমিউনিটি নিয়ে বিজি তখন পত্রিকাতে দেখছি, ক্ষুধার যন্ত্রনাতে দুই সন্তানকে হত্যা করে মা নিজেও ফাঁসিতে ঝুলেছে!
দুলাভাই: হিউম্যানিটি যে নেই তা করোনা বেশ বুঝালো! তবে করোনা মোকাবেলায় জরুরী বিষয় হচ্ছে সংক্রমিতদের আইডেন্টিফাই করা, তাদের আলাদা করা। মারাত্নক অসুস্থদের হাসপাতালে চিকিৎসা করা। ব্যাপকভাবে টেস্ট করা আর হাসপাতালগুলো চালু রাখা। মানুষদের আর্থিক সহায়তা দেয়া। আমাদের টেস্ট হচ্ছেনা, হাসপাতালে সিট পাচ্ছেনা আর আমার বউ, তোমার বোন ইমিউনিটির গল্প শুনাইতেছে। যাউগ্গা গৃহের রানিরা যা বলে সেটাই বুদ্ধিমানেরা মেনে চলে।
জামান : দুলাভাই এসব জেনেও আপনি মেনে নিতে বলেন! গতকাল রাতে কালাইরুটি খেতে চাইলাম। বললাম ভাল করে রসুন, পিয়াজ, শুকনো মরিচ বেটে ভর্তা করো। উনি ওখানেও হলুদ দিয়ে ষোলকলা পূর্ন করেছেন!
দুলাভাই: কি জ্বালা! হলুদের অনেক গুনও আছে। জানোইতো হলুদকে ‘মিরাকল হার্ব’ বা অলৌকিক ভেষজ বলা হয়ে থাকে। হলুদে কারকিউমিন নামক রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা বিভিন্ন রোগ থেকে আমাদের বাঁচায়।
যেমন ক্যান্সার, সর্দিকাশি, ডায়াবেটিস এ্যনিমিয়া, আরর্থ্রাইটিস……
জামান : থামেন তো.. আপনিও হলুদের হকারি শুরু করলেন?
দুলাভাই: তবে চলো ভয় দেখায়।
জামান : কিভাবে?
দুলাভাই: বলো যে হলুদটা যখন প্রসেস করা হয় তখন সেটাকে আরও শাইনি, ব্রাইট, চকচকে ভাব আনার জন্য লেড ক্রোমেট বা সীসা ব্যবহার করা হয়।
আমিও তোমার বোনকে বলবো।
জামান : ওরে দুলাভাই! সেই অস্ত্রও শ্যাষ! আমি কইছি তুমি কি পেটে মধ্যে করোরান জন্য সীসাঢালা প্রাচীর তৈরী করবা নাকি যে এত্তো হলুদ খেতে দিচ্ছ?
দুলাভাই: কি বলেছে সে?
জামান : বলেছে এটা তার মায়ের জায়ের ভায়ের জমিতে লাগানো হলুদ। শুকিয়ে নিজে মিল থেকে ভাঙ্গিয়ে এনেছে। কোন কোম্পানির প্রোডাক্ট না! গম, শুকনা মরিচ আর হলুদ এটা উনি নিজের হাতে ভাঙ্গাতে দেয় মিলে।
দুলাভাই: উপায় একটা বের হবেই। আমার আরবী ক্লাসের সময় হয়ে গেছে। গুরু খুব ভাল ক্লাস নিচ্ছে।
জামান : বেতন কেমন? এই নামাজের সময় কিসের ক্লাস? আপনার ল্যাঙ্গুয়েজ শিক্ষার হুজুর নামাজ পড়েনা?
দুলাভাই: বেতন নাই। এটা তো টিভিতে। রেকর্ড।
জামান : আরে রাখেন আপনার ক্লাস!
একটা কিছু করেন দুলাভাই। এই হলুদদশা থেকে আমাকে মুক্ত করেন।
দুলাভাই: হতাশায় ডরে না বীর !
গুগলে দা আছেনা।
“হলুদ দশা থেকে মুক্তির সহজ ও নির্ভুল সমাধান ” লিখে সার্চ দিব। দেখি কি সমাধান আসে।
বাকীটা আল্লাহ্ ভরসা।
ভালো থেকো। হলদে গাঁদার শুভেচ্ছা…..
টুট টুট টু.. টু.. টু
লেখকঃ কবি ও সাহিত্যিক।