Ads

মাকড়সার ঘর

মোর্শেদা হোসেন রুবি

কম্বলটা তাড়াতাড়ি সাবান দিয়ে মেখে কচলে তারপর মেশিনে দিয়ে দে। এরপর আদা রসুনটা বেটে ফেল রে টুনি..!”আদেশ জারি করে রিমোট টিপে দিল কেয়া।চট করে একবার ঘড়িটা দেখে নিল সে। নাহ্, এখনও শুরু হয়নি। আরো দু’ তিন মিনিট বাকি। গতরাতে নায়লার জন্মদিনে যাবার কারণে রাত নয়টার সিরিয়ালটা মিস হয়ে গিয়েছিল। তাই দেখা হয়নি। কী যে অস্থির লাগছিল কালকে। একবার তো এমনও মনে হচ্ছিল, যদি ঠাস করে মরে যাই তাহলে তো জানাই হবে না নতুন বউটার কী হয়েছিল।

বেচারী শ্বশুরের খাবার টেবিলে গুছিয়ে দিয়ে রান্নাঘর থেকে তরকারীর বাটি আনতে যাচ্ছিল। আর এই সুযোগে দজ্জাল শ্বাশুরিটা একটা তেলাপোকা ফেলে দিয়েছিল ডালের বাটিতে। যেন দোষটা বউ এর উপর পড়ে। আর শ্বশুর হলো ভীষণ বদরাগী মানুষ । নির্ঘাত লোকটা আজ বাটি প্লেট সব মাটিকে আছড়ে ফেলবে আর বউটাকে অপমান করবে । এটা দেখার জন্যই অসভ্য শ্বাশুরি চুপিসারে নিজের ঘরের দরজার ফাঁকা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখছিল কী হয়। কেমন পাজী মহিলা। ঐদিকে শ্বশুরও সিঁড়ি দিয়ে নামছিলেন আর এদিকে বউও তরকারীর বাটি হাতে টেবিলের দিকেই আসছিল।

উফ্, কী উত্তেজনাকর মুহূর্ত। বিশেষ করে ব্যাকগ্রাউন্ডের রণসঙ্গীতটা তো রীতিমত রক্তে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছিল কেয়ার। ধুম তানানানা…ধুমতানানানার সাথে মিহি জিঙ্গেল। আহ্, কী সঙ্গীত মাধূর্য। ঠিক ঐ সময়েই আবার হিরোরও এন্ট্রি হচ্ছিল। ঠিক এরকম একটা মুমেন্টেই হিরোর ফেসের উপর স্ক্রিণ ফ্রিজ হয়ে গিয়েছিল। আর কেয়ার হৃৎপিন্ডের দশা হয়েছিল গলায় বরই আটকে যাবার মত। পরের পর্বের চিন্তায় সারারাত ঘুমাতেই পারেনি কেয়া। স্বপ্নেও দেখে ফেলেছিল পরের পর্বটা। তবে অনুমানের রঙে। সকালে উঠে মনেই করতে পারছিল না রাতে স্বপ্নে কী দেখেছে। এর মধ্যে নায়লা ফোন করে রাতের ডিনারের দাওয়াত দেয়ায় অস্থিরতাটা দ্বিগুণ বেড়ে গিয়েছিল । বহু কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছিল কেয়া। তবে পরদিন রিপিট হয় বলে রক্ষা নইলে কী যে হতো।
-” আফা, আইজকা তো দুইন্নার কাম। আজকা কম্বল থাউক। কম্বল ধুমুনা। কী কন?’
-” এ্যাই না, কম্বল ধুতে হবে।”
-” তাইলে এক কাম করি। মিশিং এ পাউডার গুলায়া দিয়া দেই। সাফা অয়া যাইব।”
-” আরে না না, কম্বল হাতে মাখিয়ে তারপর মেশিন এ দে। ওভাবে পরিস্কার হয়না। আমার মনে খুঁত খুঁতি থেকে যায়।”
-” তাইলে আদা লহুন মেলেন্ডারে দিয়া একটা ডলা দিয়া লই আইজকা ? সবসময় তো বাইটাই লই । আইজকা যহন উরাদুরা কাম। তয় আইজকা নাহয়…!”
-” আরে নাহ্, ব্লেন্ডারে কী পরিমান বিল উঠে জানিস? পাপনের বাপ্পী রাগ করে। আর তোকে বেতন দিয়ে পুষছি কেন ? যদি ওয়াশিং মেশিন আর ব্লেন্ডারই ব্যবহার করব তাহলে তোকে মাসে মাসে বেতন দেব কেন? ”
-” এইডা কুনু কতা কইলেন আফা। আমগো কী বালা মন্দ নাই ? আজকা জ্বর লয়া কামে আইসি। শইলডা বিষ করতাসে। এ্যার মইদ্দে আমনের ছয়টা থিরিপিস দুইসি। বাইজানের মুডা মুডা চাইরডা জিন্সের প্যান্ট দুইসি। ড্যানা ডুনা বিস করতাসে আমার। এর মইদ্যেই দুই কেজি গুস্ত দুইয়া মুইয়া চুলায় বহাইসি। কতডি ময়-মসলা বাটসি। অহনও বেবাক ঘর মুছা বাকি। আবার কম্বল ধুমু..? ”
-” এ্যাই তুই এত কথা বলিস কেন রে ? কম্বল কী তুই ধুবি ? ধুবে তো মেশিন ? ”
-” মেশিন কী দোয় ? খালি লাড়াচাড়া করে। বারেবারে তো আমারেই পানি বদলান লাগে। উডন ফিরান লাগে। আবার কন সাবান মাইখ্যা দিতে। কম্বল ভিজলে লাড়ান কত কষ্ট । এইডারে সাবান মাইখ্যা মিশিং এ দেওনের শক্তি নাই ।”
-” এ্যাই তোর বকবক বন্ধ কর। এক্ষুণি আমার সিরিয়াল শুরু হবে। সিরিয়ালের সময় আমাকে ডাকবি না। যা বলেছি সেভাবে কাজ কর।” এ্যাড শেষ হলে দ্রুত বলল কেয়া। টুনির এই বদভ্যাসের কথা জানা আছে তার। কাজ বেশী দেখলেই ঘ্যানঘ্যান করে।
-” আদালহুন তো আজকা লাগবো না। কালকা বাটি…?” টুনি একঘেয়ে সুরে বলতেই কেয়া রেগে কিছু বলতে যাচ্ছিল। অমনি চিকন কণ্ঠের সুর শুনেই কেয়া থেমে গেল। দ্রুত দু ‘পা সোফায় তুলে সাউন্ড বাড়িয়ে দিয়ে হাতের ইশারায় টুনিকে সরে যেতে বলে টিভিতে মন দিল কেয়া।
স্টার্টিং প্রোমো জিঙ্গেলটা দারুণ লাগে কেয়ার। সিরিয়াল শুরু। রিক্যাপ দেখানোর পরপরই শুরু হয়ে গেল নাটকটা। নায়িকা বধূটাকে দেখা গেল বাটি হাতে আসছে। একই সাথে শ্বশুর নামছে, ঐ দিকে নায়কও বাড়ির মূল ফটক দিয়ে ঢুকছে। হায় হায়, কী হবে এখন। কেয়ার যাবতীয় মনোযোগ সিরিয়ালে নিবদ্ধ। এমন সময় পাটাপুতার শব্দে মনোযোগ নষ্ট হয়ে গেল কেয়ার। বিরক্তিসূচক শব্দ করে একবার আনমনেই রান্নাঘরের দিকে তাকাল সে। ছেমড়িটা আজ ইচ্ছে করেই এত শব্দ করছে যেন কেয়া শান্তিমত সিরিয়াল দেখতে না পারে। কোনমতে রাগ চেপে প্রথম ব্রেক পর্যন্ত অপেক্ষা করল কেয়া।
ব্রেক শুরু হওয়া মাত্র সাউন্ড মিউট করে রান্নাঘরে গিয়ে বজ্রহুঙ্কারে ফেটে পড়ল সে। ছোটলোক অমানুষ ফকিন্নীর ঝি থেকে শুরু সবগুলো বিশেষণে বিশেষায়িত করার পর যখন রাগের পারদ সামান্য কমতে শুরু করেছে ঠিক তখন টুনির রাগ যেন উসকে উঠল। হয়ত শরীরের অস্বস্তি মনেও অসহিষ্ণুতার জন্ম দিয়েছে। নইলে কাজটা হাতছাড়া হবার ভয়ে সাধারণত সে মুখ খুলেনা। কিন্তু আজ আর পারল না। বলেই বসল।
-” শুনেন আফা, আজকা আমি গরিব আছি দেইক্কা অতডি কতা আমারে হুনাইতারলেন। আমার মরা বাপ মায়রে উডাইয়া গাইল্লাইলেন। আইজ যদি ট্যাহা ফয়সা থাকতো তয় মাইনষের দুয়ারে মরতে আইতাম না। আমনের ব্যাভার বালো করেন। নাইলে করুমনা আমনের বাড়িতে কাম। আমার বেতন দিয়া দেন আমি যামুগা।”
-” এ্যা…ই চোওপ। চারআনা পয়সাও পাবিনা তুই। আর কাজ ফেলে তোরে আমি যেতে দিলে তো। পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দিব আর বলব তুই আমার নেকলেশ চুরি করেছিস। যা কাজ কর। আর আদা রসুন বাটা বন্ধ রেখে আগে কম্বল ধো। ওটা ছাদে দিয়ে তারপর বাটতে বসবি। ততক্ষণে আমার সিরিয়ালও শেষ হয়ে যাবে। যা, যেভাবে বলছি সেভাবে কর।”
-” ইমুন জুলুম আল্লায় সইবো না।” বিড়বিড় করে কথাটা বলে ধুপধাপ করে পাটা পুতা রেখে উঠে দাঁড়াল টুনি। ওর কথার শেষাংশ সম্ভবত কেয়ার কানে চলে এল।
সে পুনরায় গলা ফাটিয়ে বলতে লাগল, ” আল্লায় সইব না কে কইসে? নিজের দিকে তাকিয়ে দেখ আর ঐসব সিনেমার ডায়লগ বন্ধ কর। বেশী বলতে ইচ্ছে করলে নিজের খুপড়িতে বসে আল্লাহরে শোনাবি। আল্লাহ তোদের গরীব বানাইসে পরের বাড়ী বাঁদিগিরি করার জন্য। আমারে বড়লোক বানাইসে তোর উপর রাজত্ব করার জন্য। এভাবেই ব্যালান্স হয়, বুঝেছিস মূর্খ কোথাকার ? ”
-” এত আনগরিমা দেহায়েন না আফা। যে আল্লাহয় আপনেরে সুফায় আর আমারে পিরাতে বহাইসে, সেই আল্লাহর লিগা জাগা বদলানো কুনু ব্যাফার না। আইজ যে বাদশা কাইল সে ফকির।”
-” ডায়ালগ বন্ধ কর, আমার সিরিয়াল শুরু হয়েছে। আর একটা কথা বলবি তো থাপ্পড় খাবি। তোরা চিরজীবরই ফকির আমরা না। জীবনে দেখছিস আমাদের কিছু হইসে। হলেও আমরা টাকার জোরে বেঁচে যাই। আর তোদের রোজকার মরা রোজই মরস তোরা । কাজেই দিবা স্বপ্ন দেখা বন্ধ কর। আর যা এখান থেকে।” বলে কেয়া দ্রুত সোফার উপর পা তুলে বসল।
সিরিয়ালের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়েছে। স্ক্রীণে চোখ রেখেই জুসের ক্যানটা বের করার জন্য ফ্রিজের ডালাটা খুলল কেয়া। চিৎকার করতে গিয়ে গলাটা শুকিয়ে এসেছে।
আচমকা যেন সামান্য ঝাঁকি মত অনুভব করল কেয়া। বাঁকা হয়ে পড়তে গিয়েও নিজেকে দ্রুত সামলে নিল। কী ব্যপার ? অমন কাত হয়ে গেল কেন ? ঘরের চারিদিকে তাকিয়ে দেখল একবার। সবই তো ঠিকআছে। টিভিও চলছে। মাথা ঘুরাল নাকি। নাহ্, প্রেসারটা মাপতে হবে।
ফ্রিজের ভেতর থেকে ক্যানটা বের করার জন্য হাত বাড়াতেই এল দ্বিতীয় ধাক্কা। আচমকা আড়াইশো ভোল্টেজের প্রবল ধাক্কায় ছুটে গিয়ে দেয়ালে বারি খেয়েই উপুড় হয়ে পড়ে গেল কেয়া। ফ্রিজে কারেন্ট এল কিভাবে ? ভাবতে ভাবতে পড়ে থাকাবস্থাতেই কেয়া টের পেল ভূমিকম্প হচ্ছে। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে যাবার আগেই দেখল টুনি গেটের দিকে দৌড়ে যাচ্ছে।
-” আমাকে নিয়ে যা টুনি…!” হাত বাড়িয়ে কাতর স্বরে বলেই জ্ঞান হারাল কেয়া। কারণ ততক্ষণে ছাদের পলেস্তরা খসে একখন্ড মোটা টুকরা কেয়ার মাথার ওপর পড়েছে।
====
” ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধনিয়া বাজারের দুটো বাড়ী ধ্বসে পড়েছে এবং তৎসংলগ্ন একটি ভবন হেলে পড়েছে একদিকে। বর্তমানে ভবনের নিচে চাপা পড়া লোকজনকে উদ্ধার করার কাজ চলছে এবং আশেপাশের তিনটি ভবনকে ঝুঁকির আওতায় এনে তার বাসিন্দাদেরকে বের করে আনার কাজ করছে উদ্ধারকর্মীরা ।”
খবর শুনেই টুক করে টিভিটা বন্ধ করে দিল মোহন। প্রয়োজন ছাড়া টিভি চালায় না সে। বিলের ভয়ে বুঝেশুনে চালাতে হয়। রাতে শোবার আগে একটু দেশ বিদেশের খবর শুনে ব্যস। টুনির বাংলা সিনেমার একটু ঝোঁক আছে। সময় পেলে সে ঐটাই দেখে। ওকে যেন টিভি দেখার জন্য বাড়ি বাড়ি যেতে না হয় সেকারণে রিক্সা চালানোর পয়সা থেকে কিছু কিছু টাকা জমিয়ে সতের ইঞ্চির এই টিভিটা কিনেছে মোহন। কিন্তু গত দুদিন ধরে টুনি টিভি দেখার সুযোগই পাচ্ছে না। কারণ ঘরে নতুন অতিথি এসে জুটেছে।
বেচারী টুনির মালকিন কেয়া আহমেদ। ভূমিকম্পে ঘরবাড়ী সব হারিয়েছে। ভবন ধ্বসার পর হুলুস্থুলের ভীড়ে লুটপাটও নাকি হয়েছে একচোট। তবু ভাল টুনি মহিলাকে সময়মত বের করে আনতে পেরেছে। মহিলা এখন মোহনদের আধাপাকা ঘরের ফ্লোরে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। পলেস্তরার আঘাতে চেহারার একপাশ বিশ্রীভাবে ফুলে গেছে তার। এদিকে মহিলার স্বামীর খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি। টুনি অবশ্য রোজই একবার করে ঢুঁ মারছে মহিলার ভাঙ্গা বাড়ি এলাকায়। পুলিশ সেখানে কাউকে ঘেঁষতে দিচ্ছেনা। কিন্তু এর আত্মীয় স্বজনকে তো খুঁজে বের করা দরকার। নইলে এই মহিলাকে কতদিন নিজের কাছে রাখবে টুনি।
-” বিবিসাব…? অ বিবিসাব ? ” মৃদুস্বরে কয়েকবার ডাকার পর ফোলাচোখটা সামান্য মেলে তাকাল কেয়া। নিঃশব্দে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হঠাৎ হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল কেয়া।
টুনি ইতস্তত করে বলল, ” কাইন্দেন না আফা। আমি আইজকাও ঐহানতন ঘুর্ণা দিয়া আইসি। সাবেরে পাই নাই। যাগো আত্মীয় স্বজন পাওয়া যাইতাছেনা ঐ হানে সবে ভীড় করসে। আমগো সাবেরে তো দেখলাম না। তয় আমি রোজ যামু। একবার না একবার তো কেউ আইবই আমনেরে খুঁজতে। তহন আমনে যাইতে ফারবেন। আমনের মা বাফের ঠিকানা ফুন নাম্বার থাকলে বালা অইত।
কেয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ বুঁজল। বাবা নেই। মা গ্রামে। তার পক্ষে একছুটে ঢাকায় আসা সম্ভব না। তবে বোনেরা আছে একেকজন একেক জায়গায়। কিন্তু তার এখন রিয়াজকে দরকার। সে কী কেয়ার খোঁজ করছে ! নিশ্চয়ই করছে।
একটু পর আবার বন্ধ চোখটা খুলে কেয়া বলল, ” ঐখানে সবগুলো বাড়িই কী ভেঙ্গেছে টুনি ? ”
-” না গো, আফা। দুইডা বাড়ী ভাঙ্গসে।”
-” সবাই কী মারা গেসে?”
-” না গো আফা, তিনডা লাশ দেকসি। বাকিরা সহিসালামতে বাইরোইসে। যে তিনজন মারা গেসে তাগোর একজন ফেমিলি নিয়া বেড়াইতে আইসিল। দেহেন কী কফাল। হাইদা মরতে আইসে।”
-” ব্যপার টা বুঝেছিস রে টুনি? ”
-” কিসের ব্যাফার আফা ? ”
-” আল্লাহ রব্বুল আলামীন যাকে যাকে পাকড়াও করতে চেয়েছেন ঠিক তাদের উপরেই ভবন ধ্বসিয়েছেন। আবার যাদের বাঁচাতে চেয়েছেন তাদেরকে নানা উসিলায় বাইরে রেখে দিয়েছেন আবার যাদের ধরবেন বলে আদেশ করেছেন তাদেরকে নানা উসিলায় ঐখানে টেনে নিয়ে গেছেন।” এটুকু বলেই কেয়া থেমে গেল। টুনি নিরব।
কেয়া ভেজা চোখে বলে চলল, ” আমি তোকে বলেছিলাম না , আমরা বড়লোক ? দুনিয়াতে রাজত্ব করতে এসেছি ? আল্লাহ আমাদের কখনো কিছু করবে না ? আর করলেও আমরা টাকার জোরে বেঁচে যাব ?
বলেছিলাম না? ”
টুনি নিরুত্তর। সে ভাবছে বিবি সাবের জ্বর বাড়ল নাকি ? আবোল তাবোল বকতেসে কেন সে ?
-” আজ মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে আল্লাহ আমাকে জায়গা বদলিয়ে দেখিয়ে দিল তিনি চাইলে সব পারেন। তাঁর জন্য ধনীকে পথে বসানো আর দরিদ্রকে রাজা বানানো ব্যপার না। কিন্তু তিনি সব কাজ করেন সিস্টেমেটিক ওয়েতে। আসলে ধমক দেয়া জরুরী না হলে তিনি আমাদের সবসময় ধমক দেন না। আমার জন্য এই ধমকটা জরুরী ছিল। আল্লাহ চাইলে আমাকে মেরে ফেলতে পারতেন। কিন্তু সামান্য ধমক দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন। ” বলেই কাঁথার নিচ থেকে নিজের হাতটা বের করে টুনির রুগ্ন হাত চেপে ধরল কেয়া।
-” তুই আমাকে মাফ করে দে বোন। আর কোনদিন তোকে তাচ্ছিল্য করব না। কষ্ট করে আমাকে আমার পরিবারের কাছে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করবি বোন , প্লিজ। ”
-” ছি ছি, আফা। এডি কী কন। আমনে তো আমার বোইন। আমনেও আদম হাওয়ার মাইয়া, আমিও আদম হাওয়ার মাইয়া। খালি আমগো জন্ম দুই জায়গায় দেইক্কা আমি গরিব আমনে বড়লোক। তাতে কী, বইন তো বইনই।”
-” আসলে তো তুই ধনী, আমি বড় গরিব। কারণ আমার মনটা দরিদ্র। ” বলেই হু হু করে কেঁদে উঠল কেয়া। টুনি তার মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে দিতে লাগল আর বিড়বিড় করে বলতে লাগল আল্লাহর কাছে কন আফা। কাইন্দেন না। রুডি খাইবেন আফা? লাল আটার রুডি আর রং চা। দেই বানাইয়া ? চাপাত্তি দাম দেইক্কা রং চা খাই আমরা । দিমু আফা? ”
-” দে। অনেক খিদা লাগসে।

আরও পড়ুন-

ফেসবুকীয় ভালোবাসা

আরও পড়ুন