রত্না আফরোজ
কৃষ্ণচূড়া আর পলাশ রঙে রঙে লাল,
ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে শিমুলের ডাল।
মেঘ নেই ঝড় নেই নির্মল আকাশ,
ধীরে বহে হীম হীম দখিনা বাতাস।
পাখির গানে গানে মুখোরিত বন,
আনন্দ কোলাহল দারুণ ক্ষণ।
চারিদিক কানাকানি বসন্ত ফাগুন।
ঠিক তখন,,
রাজ পথে তবে আজ কিসের আগুন?
চিঠিটা তার পকেটেই ছিলো,
মাকে লিখা কিছু দুঃখ কিছু সুখের কথা।
কত দিন দেখিনি মাগো তোমার মুখ
কথা হয়নি আরও কত দিন,
আর তো কাটেনা সময় মনে হয় যেন কত দীর্ঘকাল।
কিন্তু কি করে আসি বলো মা,
এই যে তোমাকে লিখছি মা বলে ডাকছি
যদি এভাবেই ডাকতে না পারি
তবে কি করে যাই গো মা বাড়ি?!
মাগো তারা বলে আমাদের কথা না কি কেরে নেবে।
ভুলিয়ে দিতে চায় এই প্রাণের ভাষা,।
মানুষ মানুষকে ভুলে যায়,
কত কি মুছে যায় জীবন থেকে,
স্মৃতিও হারিয়ে যায় কখনো সময়ের পিছে
কিন্তু জন্ম থেকে শেখা কথা
কি করে ভোলা যায় মা,
এও কি সম্ভব?
যুদ্ধ হয় রাজায় রাজায়, যুদ্ধ হয় দেশে দেশে
যুদ্ধ হয় কি ভাষা নিয়ে?
তবে তাই হোক।
তবুও তোমার মুখে শেখা কথা আর কাউকে দিতে পারবো না,
আর তো কটা দিন মা তোমার কথা নিয়েই বাড়ি ফিরবো।
বাবার চিঠিতে জেনেছি,
চিড়ের মোয়া, নারকেলের নাড়ু , শুকিয়ে রেখেছো ডালের বড়ি,
বিন্নিধানের খই শিকোয় তোলা খেজুর রসের গুড় আরও কতক ভাজা মুড়ি।
বলো তো মা এত কিছুর ছিলো কি প্রয়োজন?
আমার জন্যই তুমি এবার শীতে করলেনা শীত পিঠের আয়োজন।
মা আমি শীঘ্রই আসবো বাড়ি,
দেখতে ইচ্ছে হয় খুব তোমাকে
আর পাঁচ জোড়া পায়রা আমার, আকাশ তলে করছে কেমন উড়াউড়ি।
চিঠিটা ছিলো তার বুক পকেটে
গুলিটা লেগেছিলো বুকের কাছে।
রক্তে ভেজা চিঠি পিচঢালা কালো পথ,
পড়ে আছে নিথর প্রাণহীন দেহ
মেঘ হারা আকাশ ধূলায় রক্ত স্রোত।
স্লোগানে স্লোগানে ছিলো দারুণ সোরগোল
কি ভীষণ অবিনাশী গান,
কি ভীষণ উচ্চারণ,
ভাষা চাই ভাষা চাই ভাষা চাই।
চেতনার মর্মে ভাষার আর্তনাদ,
দিকে দিকে কন্ঠে বাজে একই প্রতিবাদ।
হঠাৎ নিশ্চুপ নিস্তব্ধ ,
শূন্যতার কুয়াশায় ডুবেছে শহর,
আহ কি নিদারুণ বিষাদে কেটেছে প্রহর।
কি সুনিশ্চিত সেই আন্দোলন ,
কি যে সেই তীব্র যন্ত্রণা, হাসি মুখে নিয়েছে নির্মম মরন ।
রত্না আফরোজ কবি।