Ads

রাত্রি নামে অমাবস্যা (পর্ব-১) (একটি মুক্তিযুদ্ধের গল্প)

হাসিনা সাঈদ মুক্তা

-বউমা
-জ্বী বাবা
-আমার ওযুর পানিটা কি গরম হলো?
-আর একটু হবে দিচ্ছি
-তুমি কেন?জয়নাব কে বলো
-না বাবা ও ঘুমাচ্ছে, ঘুমাক
-বউ মা জয়নাবটা কি নামাজ পড়ে না ওকে সকালে ডেকে তুলে নামাজটা পড়তে বলো।কদিন বাদে বিয়ে নামাজে এত গাফেল কেন মেয়েটা?সারাদিন কি শুধু ঘুমায় নাকি?
-বাবা ওর শরীরটা ভালো নেই,তাছাড়া ও তো লক্ষী মেয়ে বাবা, বিয়ের পর দেখবেন ঠিক পরে নেবে…..।
-কি যে বলো না বউমা ওকে তোমরা বেশী আল্লাদ দিচ্ছো।
-বাবা ওযুর পানি দিয়েছি।
-সেকি তোমাকে না আমি মানা করলাম।আজকি ঠান্ডা জল দিয়ে গোসল করা যেত না?সাহেদা কোথায়?
-ওতো ওর বাসা থেকে আসেনি।আর আপনার এজমার সমস্যা আমি কি করে ঠান্ডা জল দিয়ে গোসল করতে দেই আপনাকে?
-আমার এত খেয়াল রাখো মা,  নিজের দিকে এখন একটু বেশী যত্ন নাও।আর আমি বুঝি না রাশেদটা কি ছুটি পায়না ওর কোনো খবর নেই কি ব্যাপার বলো  তো বউ মা?
রাত্রি নিরুত্তর ,পাশ ফিরে চাপা একটা দীর্ঘশ্বাস।

-রানার বাবা শোনো
-বলো বউ
-বাইরে কি সুন্দর জ্যোৎস্না দেখো?চলো না একটু উঠোনে যাই।
-কি যে বলো না জ্যোৎস্না আবার দেখার কি আছে?
-দেখার কিছু নেই?
-না নেই ওমন জ্যোৎস্না আমার সামনেই আছে বলে রাশেদ কোলে তুলে নেয় রাত্রিকে।
-আহা ছাড়ো…কি করছো?
-ছাড়বো কেন?এই না বলো আমাকে ছাড়া থাকতে পারোনা…?
-দরজা খোলা তো…?
-তাতে কি?
-বাবা,জয়নব ওরা কেউ যদি চলে আসে?
-আসলে আসবে…বলে রাশেদ কোলে নিয়েই রাত্রিকে উঠোনে নিয়ে আসে।
জয়নব ও ফারুক দেখে ফেলে।রাত্রির ভীষন লজ্জা লাগে।ফারুক তার ছোট ভাই,দস্যিপনায় সেরা।মুখে কোন কিছুই চাপা থাকেনা।যা দেখে তাতো বলেই সাথে আরও দুচারপাঁচ বাড়িয়ে বলে।রাত্রির লজ্জা তার শ্বশুরবাবা দেখলো কিনা।এদিক ওদিক চায় লাজুকলতায় রাত্রি।
-উফ রাত্রি আবার ওদিকে তাকিয়ে আছো কেন?এত কষ্ট করে তোমায় এখানে আনলাম আর কি ভারী হয়েছো তুমি আগের চাইতে….!
-কি বল্লা?আমি ভারী হয়ে গেছি?এখন আমার দোষ?
রাত্রির অনু্যোগ।
রাশেদ রাত্রির দুগাল চেপে বলে,
-না রানীর আম্মাজান সব আমার দোষ হলো এবার?
-কি ভাবী ভাইজান কি দোষ করলো এইবার,আমাদের বলবেনা?
জয়নাবের আগমন।
সাথে ফারুকও যোগ হয়,
– দুলামিঞার দোষ কেমনে হইবো?দুলামিঞা তো বুবুরে কোলে কইরা আনসে তাও কয় দোষ বুঝি না বাপু…..?খানিকটা রাশভারী ভাব নেয় তেরো বছরের ফারুক।
-আচ্ছা তোদের দুইটার কি কোনো কাজ নাই? রাশেদ খানিকটা রেগে যায় এবার ।
-কি করলাম ভাইজান?
-তোরা কি আমাকে তোর ভাবীর সাথে একটু একা থাকতে দিবিনা?
-আহা এভাবে বলছো কেন রাশেদ।
-ঠিক আছে বুঝেছি এই বান্দার তো কোনো দাম নাই তোমার কাছে ওরাই এখন সব।স্বামী তো ঢাকায় একা একা থাকে তার কষ্টে কার কি এলো গেলো…নাও ওদের নিয়ে তোমার জ্যোৎস্না দেখো।
বলেই বিড়বিড় করতে করতে চলে গেলো রাশেদ।
জয়নাব আর ফারুক একে অন্যের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে এবার।ওদের দেখে মনে হচ্ছে যেন বিরাট অন্যায় করে ফেলেছে।
-ভাইজান গোসসা করেছে ভাবী।আসলে আমাদের ওভাবে আসাটা ঠিক হয়নি।
-দূর ছাড়ো তো জানু।
জয়নাবকে এ নামটা রাত্রিই দিয়েছে আদর করে।
-তোমার ভাইজানটা সবসময় একটু বেশী বেশী করে,এখনো ছেলেমানুষিটা রয়েই গেছে….।
-হুম ভাবী রানা,রানী আসলে ঠিক হয়ে যাবে..।
ফের লাজুক হাসে রাত্রি।
রাশেদ এর ইচ্ছে তার ফুটফুটে একটা মেয়ে হোক,আর রাত্রির ইচ্ছে তার ছেলে হবে ঠিক তার বাবা রাশেদের মতো।
তাই দুজনে দুজনকে এই দুইনামে ডাকে।
রাত্রি ডাকে রাশেদকে রানার বাবা বলে।
আর রাশেদ তার অনাগত সন্তানকে রানী নাম দিয়েছে যদি সত্যি তার কন্যা সন্তান হয়।
সেই কথা জেনে গেছে জয়নাব।

গভীর রাতে রাত্রি হামামখানায় যায় ফের।
ফের কোল গোড়ার পাশে বমী করে। অনেকদিন পর তার বমী হলো।সন্তান আসার প্রারম্ভে প্রায় দুমাসের বেশী সময় অনর্গল টানা বমী করেছে।আজ আবার বমী হলো।এখন সময় চার মাস চলছে তার।কি হলো বুঝতে পারে না।বুকের ভেতরটায় রক্তাভ হৃদপিন্ড মনে হচ্ছে জলের মাছের ন্যায় অনবরত লাফাচ্ছে,বের হতে চাইছে..  আর কি যেন বলতে চাইছে রাত্রিকে।
গত এক মাস ধরে রাশেদ নিঁখোজ।
প্রথমে জেনেছিল রাত্রি রাশেদকে আটক করে রাখা হয়েছে হাজতে।কি কারন সেটিও রাত্রিকে ভালো করে জানানো হয়নি।
রাত্রির পুরো শরীর ঘামে ভিজে যেতে থাকে প্রবল আশংকায়।বেতারটায় গত কয়েকদিন ধরে একই খবর,ঢাকায় অতর্কিতে বাঙালীদের উপর হামলা করা হচ্ছে,ছেলে বুড়ো,নারী কাউকে রেহাই দেয়া হচ্ছে না।
নির্বিচারে নাকি তাদের বুকে গুলি করা হচ্ছে।
রাত্রির চোখমুখ উলটে যায়,মাথাটা ঘোরায় তার।
পেটে হাত দিয়ে বসে পড়ে রাত্রি।
-রাশেদ তুমি কই গেলা।
বলে হু হু করে কেঁদে ওঠে অসহায় রাত্রি।
(চলবে)

লেখকঃ সাহিত্যিক।

আরও পড়ুন