Ads

লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক 

ভ্রমণ কাহিনী পর্ব -০৯
– নুরে আলম মুকতা
 কাবা বায়তুল্লাহ তে অবস্থানের সময় আমি প্রায় ওয়াক্তেই ফরজের পর জানাজা পড়েছি কিন্তু আপাকে নিয়ে অবস্থানের সময় প্রায়ই জানাজা পড়তে হচ্ছে না। এ বিস্ময় আমাকে বয়ে নিয়ে যেতে হবে কত দিন জানিনা!
বায়তুল্লাহ আর রওজা মোবারকে হজ্ব কালে প্রায় সব ওয়াক্তের ফরজ নামাজের সালাম ফিরিয়েই গ্র্যান্ড ইমাম আরবীতে ঘোষনা দেন, জানাজার জন্য প্রস্তুত হও,নিয়ত  করো। বুকের মধ্যে শুরু হয় কাঁপন। এ কাঁপন চিরন্তন।
রাত যতই গভীর হচ্ছে ততই মনে হচ্ছে মানুষ বেড়েই চলেছে। রাত ওখানে বোঝা দুস্কর।  পাওয়ারফুল ইলেকট্রিক বাতি গুলো ওরা দিনের বেলা তীব্র রোদ থাকা সত্বেও নেভায় না। আমি একজন আমাদের দেশী শ্রমিকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম।  ও বলেছিলো, সমস্ত স্থাপনায় লাগানো বাতির দায়িত্বে  নিয়োজিত বিদেশি ঠিকাদারী কোম্পানি। ওদের জন্য নির্দিষ্ট  পরিমান বিদ্যুৎ সরবরাহ। বাতি গুলো এত পাওয়ারফুল যে বার বার শাট ডাউন করলে ও গুলোর মেয়াদ দ্রুত ফুরিয়ে যাবে। তাই এ ব্যবস্থা। হায় আল্লাহ!  অপচয়,আপা বললো।
জমজম কূপের প্রাচীন অবস্থা
ততক্ষনে হেলাল ভাই আমাদের  সাথে মিলিত হয়েছেন। আমার সাহস বেড়ে গেলো। রাত দুটা।  ভীড় একটু কম মনে হলো। শুরু করলাম তাওয়াফ। ধীরে ধীরে একটি করে লাইন ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করছি। বার বার আল্লাহু আকবার বলে শক্তি সঞ্চয় করে আপাকে টেনে নিচ্ছি। হাতীমের দেয়াল ঘেষে গিয়েছি।
হাতীম অর্থ পরিত্যক্ত অংশ।   হযরত মুহম্মদ ( সাঃ) সময় কাবার এই ছয় হাত পরিমান জায়গা বনু আদি বংশের লোকেরা হালাল অর্থের অভাবে সর্বশেষ বার সংস্কার করতে পারেনি। মুহম্মদ ( সাঃ) এর ৩৫ বছর বয়সে মক্কার চার গোত্র প্রধানকে হালাল অর্থ সংকুলান সাপেক্ষে কাবা সংস্কারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো। চার গোত্রের মধ্যে বনু আদি গোত্র কাবা র উত্তরের এ অংশ টুকু সংস্কারের ব্যর্থতার পেছনে সৃষ্টি কর্তার ইচ্ছা অলঙ্ঘনীয়। এখানে নামাজ  অাদায় করলে কাবার ভেতরে নামাজ আদায়ের সমান সওয়াব পাওয়া যায় । হজ্বের সময় এটি একটি কঠিন কাজ।  মাত্র ছয় হাত জায়গা! মানুষের চাপ অতিক্রম ভয়ানক।
হাতীম অর্থ পরিত্যক্ত অংশ।   হযরত মুহম্মদ ( সাঃ) সময় কাবার এই ছয় হাত পরিমান জায়গা বনু আদি বংশের লোকেরা হালাল অর্থের অভাবে সর্বশেষ বার সংস্কার করতে পারেনি। মুহম্মদ ( সাঃ) এর ৩৫ বছর বয়সে মক্কার চার গোত্র প্রধানকে হালাল অর্থ সংকুলান সাপেক্ষে কাবা সংস্কারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো। চার গোত্রের মধ্যে বনু আদি গোত্র কাবা র উত্তরের এ অংশ টুকু সংস্কারের ব্যর্থতার পেছনে সৃষ্টি কর্তার ইচ্ছা অলঙ্ঘনীয়। এখানে নামাজ  অাদায় করলে কাবার ভেতরে নামাজ আদায়ের সমান সওয়াব পাওয়া যায় । হজ্বের সময় এটি একটি কঠিন কাজ।  মাত্র ছয় হাত জায়গা! মানুষের চাপ অতিক্রম ভয়ানক।
হাতীমের কাছে ফাঁকা মনে হতেই আমি আর হেলাল ভাই হাত ধরাধরি করে আপাকে নামাজের জায়গা করে দিলাম। দ্রুত নামাজ পড়তে হবে নয়তো পদদলিত হবার সম্ভাবনা আছে। এভাবেই আমরা হাতীমের মধ্যে  নামাজ পড়তাম। হাতীম থেকে বেরিয়েই কাবার দেয়াল পেয়ে গিয়েছে আপা। ছাড়তে চায়না। লোক সমাগম মূহুর্তের মধ্যে  বেড়ে গেলে খুব কষ্টে বের হলাম।
রাত শেষের প্রহর। আমি আল্লাহর ওয়াস্তে জীবনের ঝুঁকি  নিতে চাই,তুমি আমাকে সাহায্য  করো ভাই, হেলাল ভাই কে অনুরোধ করলাম। আপা আমার মুখের দিকে বুক নিঃসৃত  মায়াময় দৃষ্টিতে চেয়েছিলেন।  হাত দুটো ধরে ক্ষমা চাইলাম। আপার চোখে অশ্রু। তাকাতে পারলাম না।
“রাব্বানা
আতীনা মিল্লাদুনকা রাহমাতাঁও ওয়া হাইয়্যেলানা মীন আমরীনা রাশাদা..”… (সুরা কাহফ)…..হে সৃষ্টিকর্তা তুমি আমার সকল সৎ উদ্দেশ্য সফল করার আয়োজন করে দাও।
“রাব্বানা
আতীনা মিল্লাদুনকা রাহমাতাঁও ওয়া হাইয়্যেলানা মীন আমরীনা রাশাদা..”… (সুরা কাহফ)…..হে সৃষ্টিকর্তা তুমি আমার সকল সৎ উদ্দেশ্য সফল করার আয়োজন করে দাও।
আমাদের মধ্যে কেউ কেউ চেষ্টা  করেছে। সম্ভব না। হজরে আসওয়াদে চুমু দেয়ার জন্য  অল্প বয়সী ছেলেরাও আফ্রিকান নারীদের কাছে পরাজিত। পুরুষতো দূরের কথা। আমাদের  দেশের মানুষের জন্য হজ্ব মৌসুমে এটি জীবন বিপন্নকারী কাজ। এখানে বয়স আর শরীরের গঠন একটি বড় ফ্যাক্টর। কাবার দক্ষিণ-পূর্ব কোনে সবুজ ইনডিকেটর দেয়া আছে। তাওয়াফের সময় ওখান থেকে চুমু দিলেই হবে। সারা বিশ্ব থেকে এত পরিমান কিশোর আর যুবক-যুবতী হজ্বে যায় যা আমাদের কল্পনাতীত। আমরা তো যাই জীবন সায়াহ্নে। যখন আর শরীর চলেনা।
পরে যদি আমার ভাগ্যে আল্লাহ না রাখে? তখন তো এ বয়স আর শক্তি থাকবেনা।
হজরে আসওয়াদ এর ঠিক ওপরে ঝুলন্ত অবস্থায় একজন পুলিশ কালো প্যাঁচানো কাপড়ের দোলনার মতো আসনে ডিউটি  করে। ওর বয়স আর ওজন কম। ওর কাজ শুধু ঘোষনা করা যে কারো জীবন বিপন্ন হয়ে গিয়েছে  কিনা। সি সি ক্যামেরার পরেও হজ্বের সময় এ বাড়তি আয়োজন। কেউ যদি একবার মেঝেতে পড়ে যায় তবে উঠা আর সম্ভব নাও হতে পারে। পরে কি পরিস্থিতি হতে পারে একমাত্র  সৃষ্টিকর্তাই জানেন। সবাই সবার প্রতি সহানুভূতিশীল। কিন্তু  ঘটনাগুলো এত দ্রুত ঘটে যায় যে কারো কিছুই করার থাকেনা।  কাউকেই এ বিষয়ে দোষারোপ  করা যায় না। সবাইকে এ বিষয়ে পূর্বেই সতর্ক করা হয়। তবুও মানুষ করে। আলোর কাছে পতঙ্গের যাত্রার মতো। ফিরে আসা যাবে কিনা জানিনা। তাও যাবো।
জমজম কূপের পানি বিশাল পাইপে করে সরবরাহ করা হচ্ছে হাজীদের জন্য। পাশে মুল কূপ সংরক্ষিত অঞ্চল। এখন সাধারনের প্রবেশ নিষেধ
আমার মনে আছে কেউ একজন আমার মাথায় হাত দিয়েছিলো,বক্ষ পিঞ্জরের মড় মড় শব্দের পর সেন্স ছিলোনা।কতক্ষণ সময় অতিক্রান্ত হয়েছে জানিনা।
চোখ খুলে দেখি এক মমতাময়ী মা আমার মুখের সামনে জমজম নিয়ে বসে। আমার অবস্থান অনুমান করতে পারছি বায়তুল্লাহ  র পূর্ব দিকে হেরেমের ছায়াতলে।
“তুমহারা হালাত তো বহুত বুরা হে,তুমহে তো থাকগায়া বেটা,এহি মাত কারো, নেহী নেহী। কাভি নেহী, ওতো জারুর নেহী। খোদাসে আচ্ছা মালুম… আরামসে উৎরো,জামজাম পিলো। সাব কুছ ঠিক হো যায়েগা।” আমি বললাম… মা…
আমি কি ইসমাঈল? এই মা ই কি মা হাজেরা?
আমি উঠতে পারছিনা। শক্তি নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে।
আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম……বায়তুল্লাহর মুয়াজ্জিনের সুমধুর সুর।
(চলমান)
লেখকঃ সাহিত্যিক,শিক্ষক ও সহ-সম্পাদক,মহিয়সী।
আরও পড়ুন