Ads

মেয়েটি যেদিন ফিরে এলো

।। শেখ ফাহমিদা নাজনীন ।।
মেয়েটি যেদিন পালিয়ে গেল প্রেমিকের সাথে,
তার বাবাকে দেখেছিলাম,
প্রচন্ড ক্ষোভে ফেটে পড়া একটা মুখ।
মনে হলো যেন বহুদিন ধরে যত্নে গড়ে তোলা গোলাপের বন,
একটা নির্বোধ মালীর হাতে পড়ে তছনছ হয়ে যেতে বসেছে।
তার ওপর জুটেছে,
অনাহুত ঝড়ো হাওয়া, শিলাবৃষ্টি আর বজ্রপাতের মত,
কতিপয় শুভাকাঙ্ক্ষীর কদর্য কটুবাক্য।
সবাই তার পিতৃত্বকে দায়ী করতে চায়,
দায়ী করতে চায় তার অভিভাবকত্বকে।
বেচারা কেবল বিশ্বাস রেখেছিল,
বিশ্বাস রেখেছিল তার সদ্য কৈশোরে পা রাখা,
তেরো বছর বয়সী মেয়েটির ওপর।
সে ফিরে এসেছিল,
ফিরে এসেছিল অপরিণত প্রেমিকের দেয়া আঘাতে,
নীল বর্ণ হয়ে!
মেয়েটি যেদিন ফিরে এলো,
সেদিন তার বয়স তেরো বছর পেরিয়ে দুই মাস।
বাবা পরবর্তী দুই মাস কন্যার সাথে কথা বলেননি,
হাহাকারের বিবমিষা তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল।
আমি সেই বাবাকে আবার দেখলাম,
দু’মাস বাদেই তাকে দেখলাম হাসপাতালের করিডোরে,
সর্বস্বান্ত একখণ্ড জড় বস্তুর মত।
মেয়েটি ছিল অপারেশন থিয়েটারের টেবিলে,
তার শরীর থেকে অসাবধানে বেড়ে ওঠা অযাচিত ভ্রুনটাকে,
অপসারণ করা হচ্ছিল।
অপারেশন থিয়েটারের বন্ধ দরজার এপাশ থেকে,
তার গোঙানির আওয়াজ আমি পষ্ট শুনতে পেলাম।
আর আমার সামনে অপেক্ষমান চেয়ারে বসে ছিল,
এক খন্ড কালো মেঘ।
যে মেঘে আর বৃষ্টি হয় না,
বৃষ্টির সামর্থটুকুও হারিয়ে গেছে।
বাবাটা কেবল বিশ্বাস রেখেছিল,
বিশ্বাস রেখেছিল তার সদ্য কৈশোরে পা রাখা,
তেরো বছর বয়সী মেয়েটির ওপর।

 

৩ জুন ২০২৩।
আরও পড়ুন