Ads

মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের পাঁচটি কবিতা

মোঃ জাহাঙ্গীর আলম

১-আমার ভেতরেই দেশ
এই আমাকে দেখো
ঠিক যেন বিদ্ধস্ত এক নগরী,
২০৬ খানা হাড় অনায়াসে গুনে বলতে পারবে
কতটা দূর্ভিক্ষ দেশ জুড়ে,

শীর্ণ বস্ত্র দেখেই বুঝতে পারবে
এ শহরটা আজ কতটা উলঙ্গ,
কুকুরের ঘেউঘেউ শুনেই বলতে পারবে
ডাস্টবিন উচ্ছিষ্ট খাবার নেই।

পুরো শহর পরিসংখ্যান করা লাগবেনা
আমাকেই দেখলেই অনুধাবন করবে
আমি কিভাবে হাসতে হাসতে কষ্ট পুষি,
আমার মলিন মুখ বলেই দিবে
এ দেশের মানুষ আজ কতটা অসহায়!
পেট পিঠ মিশে থাকা এই জীবন্ত লাশের মাঝেও খুঁজে পাবে
আরেকটা রাক্ষুসে সমাজ,
যে সমাজে প্রতিনিয়ত এই আমি আমরা শোষিত হই।

২-কদম বৃক্ষ তলে
কোন এক অলস দুপুরে আকাশ জুড়ে হঠাৎ গর্জন
তারপর তুমি আমি একা, ভালোবাসা হলো বর্জন।
কদম বৃক্ষ তলে দেখেছি সেদিন শোকের কি মাতন
দেয়া হয়নি খোঁপায় কদম গুঁজে, প্রেম হলো বিসর্জন।

অশ্রু ধারায় বর্ষা নামে কেঁদেছিল ফুল মঞ্জরি
একা ঠাঁই দাঁড়িয়েছিলাম,দেখলো বৃক্ষ সারি সারি।

অঙ্কুরে যেন বিনাশ সব, ফেরা হলো একা বাড়ি
চীরচেনা ‘তুমি’ শব্দটা আজ কোথায় গেলো হারি।

৩-প্রভেদ
আমি তাকে বন্ধু ভাবি
সে আমায় বলে কবি
তাকে নিয়ে পদ্য লিখি
সে বলে তোমার হবি।

আমি হাঁটি অভিসারে
স্বপ্নের রঙ্গিন পথ ধরে,
অথচ সে আসে ফিরে
বারংবার মিছিল জুড়ে।

আমি বলি কেটেছে শোক
এখন ভালবাসা হোক,
সে বলে,” চলুক বিদ্রোহ
ফিরেনি ঘরে কেহ।

আমি চাইযে কাছে টানতে
রাখতে এই হৃদ প্রান্তে,
সে পারে ছুটে বেড়াতে
মজলুমের কথা শুনতে।

৪-একজন পেলেসটাইনের ভয়
ভয় পেতে পেতে আর কোনো কিছুতেই ভয় করিনা
ঝড় দেখে দেখে এখন ঝড়কেই বেশি আপন মনে হয়।
শৈশব হতে বন্দুকের শব্দ শুনেইতো বড় হয়েছি
এখন বন্দুকের গুলিকে মনে হয় মার্বেলের গুলি,

যে মৃত্যুকে এত ভয় পেতাম
এখন অনায়াসে মৃত্যুর মুখে দাঁড়াতে পারি,
রক্ত দিয়ে হলি খেলা এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।

আমি নদীর স্রোতের মতো রক্ত দেখেছি
টগবগে তাজা রক্ত,
রক্ত দেখে বলে দিতে পারি কোনটা মানুষের আর কোনটা মানব রূপি দানবের!
আমার চারপাশে এত মৃত মানুষ দেখেছি
এখন লাশ দেখেই বলে দিতে পারি মানুষটার মৃত্যুর কারণ কি
ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হয়না।
ভয়টা মনে হয় আমার কাছে কচু পাতার পানির মতো
এখন ঘোর অমাবস্যাতেও লাশদের সাথে টুয়েন্টি নাইন খেলাতেও মেতে উঠি,
বিদীর্ণ বুকে আচমকা বিদ্যুতের স্ফুলিঙ্গে আমি হতচকিত হয়ে উঠিনা
কেননা যে শিশুর জন্মই হয় বিধ্বস্ত ফিলিস্তিনে বোমার বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে
নিকোশ কালো বারুদের ধোঁয়ায়,
তার কাছে আঁধারটা নিজ ছায়ার মতই লাগে।

ভয়ের অনেক চক্ষু থাকে
আঘাত করে বিশ্বাসের অন্তরীক্ষে
যা ধপাস করে নামিয়ে দেয় ভূতলে,
চারপাশ থেকে নিমিষেই বিনাশ করে
বিশ্বস্ততার অন্তরালে!

আমি কাতর হতে হতে পাথর হয়েছি
ভয় পেতে পেতে জয়ী হতে শিখেছি
আসলে,
ভয়টা যেন আজকাল আমাকে দেখেই ভয় পায়।

৫-শকুন
সে শুরুতে চাতক ছিল
তেষ্টা মেটাতো দূর থেকে,
যখন কাছে আসলো
আরও কাছে, বুকের সাথে বুক মিলে গেল
দেখলাম তখন সে শকুন হলো!
ধারালো থাবায় হৃদপিণ্ডটা ছিঁড়ে খেলো
অন্ধ বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ভালবাসাটা
রক্তাক্ত করে দিলো!

কোন এক অবুঝ বিকেলে সে হারিয়ে গেল
রেখে গেলো নিথর দেহ,
তার নাকি পানি নয় রক্তের খুব তেষ্টা!

আজ সে অমাবস্যার চাঁদ
আজ ভাবি,”দূরের চাতকই ভালো ছিল।”

কবিঃ কবি ও সাহিত্যিক 

আরও পড়ুন