Ads

শাহীন খানের করোনাকে নিয়ে  গুচ্ছ কবিতা

১.আতংকে 

চারদিক থমথমে পথঘাট শূন্য

ঘরে বসে কাটে দিন, খুব মন ক্ষুন্ন।

আতংকে  আছি সবে কি যেন কি হয়

সব খানে নিরবতা, ভয় শুধু ভয়!

পাখিরাও চুপচাপ,  ফুল ফোটেনা

ভ্রমরের নেই সুর, দূর ছোটে না।

প্রিয়জন মরে আজ পাখির মতো

সহসা এ হৃদয় হয় যে ক্ষত!

বিশ্বের গোটা দেশ বড় অসহায়

বিয়োগ ব্যথা আজ কুঁড়েকুঁড়ে খায়।

দিনে দিনে বেড়ে চলে লাশের বহর

মৃত্যুপুরী হায় গ্রাম ও শহর।

থমকে দাঁড়িয়ে রয় গোটা পৃথিবী

কাঁদে চাঁদ তারা কাঁদে, বাগিচা বিথী।

বাতাসটা বয় না দখিনা হয়ে

আকাশটা হাসে না তো জোছনা লয়ে।

কি যে হবে কি যে হবে বাড়ে ভাবনা

মেলেনা তো উত্তর হ্যাঁ কিবা  না।

ঘুম নেই কারুরেই, নাওয়া খাওয়া নেই

জীবনের আজ কোন চাওয়া পাওয়া নেই।

একটি জীবানু আজ  নিয়ে গেছে সুখ

সহসা সে ছড়িয়েছে দুঃখ অসুখ!

নাম তার করোনা, নেই করুনা

এই রোগ মহামারি,  ধুনফুন না।

থাকতে সময় এসো সচেতন হই

ঘরে বসে দিন যাক, নেই হৈচৈ।

স্বাস্থবিধি এসো মেনে গো চলি

ছেড়ে দাও হাঁটাচলা রাস্তা গলি।

প্রার্থনারত হও খোদার ধ্যানে

সুখ এসে ধরা দিক প্রাণে গো  প্রাণে।

 

২.পোয়াবার

কিনছি পিঁয়াজ ত্রিশ কিলো রসুন মরিচ আদাটা

পাঁচফোঁড়নও কিনছি কিলো, কিনছি আটা সাদাটা।

লঙদারও কিলো পাঁচেক, কিনছি অঢেল দারুচিনি

বস্তা বিশেক চাল কিনেছি, চা কিনেছি আর চিনি।

ডাল কিনেছি, কিনছি পানও আর কিনেছি সুপারী

চুন কিনেছি দুই কেজি মোট, দেখতে খুবই সুপারই।

মাছ কিনেছি চিংড়ি বোয়াল, ইলিশ, মাগুর শিং ও কৈ

কিনবো আরো রূপচাঁদটা আমি তো আর কিঁপটে নই?

বেগুন, কপি, বরবটি, সিম কিনবো কুমার, লাউ, আলু

যা পাবো তাই কিনবো সবই, আমি কি ভাই কম চালু?

মুড়ি চিড়ে মিঠাই ও দই কিনছি গরু খাসিটা

মুরগি ও হাঁস, সাবান, লোশন,ফুটলো মুখে  হাসিটা

হ্যান্ডগ্লোপস, আর  মাক্স ও টিস্যু স্যানিটাইজার পেষ্টব্রাশ

নুডুস, ডানো, রুটি ও কেক,  কেরাম লুডু এবং তাস।

নাপা ও রেফ কিনছি কিছু, কিনছি খাবার স্যালাইনও

ঘটিবাটি কিনছি অনেক থাল কিনেছি ম্যালামাইনও।

ফল কিনেছে দশটি পদের,  কিনছি আরো মিষ্টিটা

কিনে কিনে পূর্ণ হলো বউয়ের দেয়া লিষ্টিটা।

অবশেষে  বস্তা ভরে বাড়ির পানে ছুট দিছি

আইছে  দেশে করোনা তাই, এমন তরো মুড নিছি।

খাটের পরে থাকছি শুয়ে পা নড়েছে বারাংবারো

দেশের মানুষ না খেয়ে থাক,  আমার তো ভাই পোয়াবার।

 

৩. বিকল্প  নাই

ঘরে আছি  কদিন থেকে ঘরে থেকো তোমরা

গরীব দুখি ঘরে  থেকো,থেকো না মুখ গোমড়া।

রিকশাওয়ালা ঘরে থেকো, থেকো মাঝি-মাল্লা

ঘরে বসে নামাজ পড়ো, দাও জিকিরে  পাল্লা।

ধনী তুমি ঘরে থেকো, ঘরে থেকো আমলা

রাজা- প্রজা ঘরে থেকো,থেকো ঘরে কামলা।

শত্রু তুমি  ঘরে থেকো ঘরে থেকো মিত্র

সচেতনার পাহাড় গড়ো সকলে নিঃশ্ছিদ্র।

ঘাটের মানুষ থেকো ঘরে, পাঠের মানুষ থেকো ভাই

বৃদ্ধা যুবা কিশোর শিশু তোমাদেরও বলে যাই।

নবীন- প্রবীন  থেকো ঘরে,  দেখো ওটা হাইরাছে

লেজ গুঁটিয়ে পালাবে ঠিক কঠিনতরো ভাইরাসে।

হাত ধুয়ে নাও যখন তখন পরিস্কারও থাকা চাই

বদলে ফ্যালো জীবন যাপন এটার যে বিকল্প নাই।

 

৪.তিনিই তো আল্লাহ

যতোদূর চোখ যায় যতোদূর দেখি

আজীবন যদি আমি কাব্যতে লেখি

শেষ হবে না আদৌ তার গুণগান

আমাদের জন্যেই করেছেন দান

তিনিই তো আল্লাহ, দরদি মহান।

নদীর কলতান,  পাখিদের সুর

চাঁদ তারা ফুলফল, পাহাড়ের চূড়

ঝিলিমিলি রোদ আর জোছনাধারা

সবুজ শ্যামল সব দ্যায় ইশারা

মুগ্ধতে ভরে যায় হৃদ আর প্রাণ

আমাদের জন্যেই করেছেন দান

তিনিই তো আল্লাহ, খোদা সোবাহান।

 

জীবন-মরণ সব তাহার হাতে

নতুন জীবন পেয়ে জাগি প্রভাতে

স্বপ্ন দেখি রোজ দিওয়ানা হয়ে

ফাগুন বাতাস বুকে যায় গো বয়ে

চারদিকে ঘোরে ফেরে সুমধুর ঘ্রাণ

আমাদের জন্যেই করেছেন দান

তিনিই তো আল্লাহ,  মহা মহিয়ান।

অনাবিল সুখ ভাসে হৃদয় মাঝে

সাড়া পাই তার আমি সকাল -সাঁঝে

অহরহ  ডেকে ওঠে মন প্রতিক্ষণ

কি যে দোলা লাগে হায়, সে কী আলোড়ন

দ্ধিধা যতো উবে যায়, দুখ অবসান

আমাদের জন্যেই করেছে দান

তিনিই তো আল্লাহ, গাই তার সান।

 

৫.সাহস রাখো বুকে

সাহস রাখো বুকে তুমি

সাহস রাখো বুকে

যাও এগিয়ে বন্ধু তুমি

সম্মুখে সম্মুখে

নিজকে রাখো সুরক্ষিত

পরিবারটাও রেখো

এ লড়াইয়ে জিতবে মানুষ

বন্ধু তুমি দেখো।

কান্নাকাটি করলে কি আর

লাভটা ও ভাই হবে

যা হবার তা হয়েই গেছে

ভাবনা কেন তবে?

এখন শুধু লড়াই করে

বাঁচতে তুমি শেখ

ইতিহাসের পাতায় পাতায

নামটি তোমার লেখ।

বিধির উপর ভরসা রেখে

চোখটি তুলে তাকাও

ফুলের পরাগ অর্নিশি

অঙ্গে তোমার মাখাও।

হও সচেতন কর্মকাজে

সাবান মাখো হাতে

রোগ জীবানু ঠিক পালাবে

গহীন কালো রাতে।

 

৬.করোনার ফাঁদে

ভালো নেই শহর আর

মাঠঘাট হাট

গ্রাম আর গঞ্জ

লেখা লেখা পাঠ।

ভালো নেই নদনদী

ক্ষেত আর বন

পশু হাঁস ফুল লতা

পাখির কূজন ।

ভালো নেই কবিতারা

ভালো নেই ছড়া

ভালো নেই সুর বাঁশি

কষ্টেতে ভরা।

ভালো নেই পরিবেশ

ভালো নেই দেশ

কোন কিছু ভালো নেই

নেই সুখ রেশ।

ভালো নেই দূরাকাশ

ভালো নেই তারা

চাঁদমামা ভালো নেই

মন গেছে মারা ।

ভালো নেই হাসি মুখ

শিশু  যুবা বুড়ো

ভালো নেই গাছপালা

পাহাড়ের চূড়ো।

ভালো নেই পৃথিবীটা

কাঁদে শুধু কাঁদে

সব্বাই বেশামাল

করোনার ফাঁদে।

 

৭.একটি ভাইরাস

থমকে গেছে কবির লেখা

থমকে গেছে গান

থমকে গেছে আশার তরী

আসলো যে তুফান!

থমকে গেছে অফিসপাড়া

থমকে গেছে প্রাণ

থমকে গেছে লেখাপড়া

নিভলো আলোর বান।

থমকে গেছে বিশ্বভুবন

চোখের কোনে জল

ঘরের কোণে বন্দি জীবন

নেইরে কোলাহল!

থমকে গেছে স্বচল চাকা

ঝরলো শতদল

বুকের মানিক যায় হারিয়ে

নেই কো গায়ে বল।

থমকে গেছে স্বপ্ন দেখা

কাটছে ভয়ে দিন

একটি ভাইরাস খুব সহসা

ভাঙ্গলো সুখের বীণ।

 

৮.কাঁদছে বসুন্ধরা

ভাল্লাগে না কবির লেখা গান কবিতা ছড়া

করোনাতে কাঁদছে হৃদয় কাঁদছে বসুন্ধরা!

কি রোগ এলো দিনদুনিয়ায় মানুষ শুধু মরে

চিকিৎসা নেই তার এতটুক, কাঁপছি ভীষণ ডরে!

হাহাকারে প্রকম্পিত আকাশ  এবং বাতাস

চারদিকেতে নেমে এলো বিয়োগ ব্যথার আভাস।

থমকে গেছে জীবন চাকা, লোকের আনাগোনা

সব খানেতে মহামারি,  দুখের আলোচনা।

কি যে হবে কি যে হবে ভাবনা শুধু বাড়ে

প্রশ্ন গুলোর পাই না জবাব, বলতে না কেউ পারে!

 

৯.থমকে গেছে

থমকে গেছে এই পৃথিবী

থমকে গেছে মানুষ জন

পথেঘাটে নেইরে তারা

ভেঙ্গে গেছে গোটা মন।

সবখানেতে একই কথা

আসছে  ধেঁয়ে করোনা

সে বোঝে না আপন স্বজন

শত্রু মিত্র পরো না!

হানবে আঘাত যখন তখন

মহামারি এ রোগটা

মাস্কস যদি ভাই না পরো হায়

বেড়ে যাবে দুর্ভোগটা।

বাড়ে বাড়ে হাত ধুয়ে নাও

নিজকে রেখ পরিস্কার

তবেই জীবন ধন্য হবে

মিলবে দারুণ পুরস্কার।

হ্যান্ডশেকটা বাদ দিয়ে দাও

কোলাকুলি সেটাও বাদ

দেখবে ঠিকই কেটে যাবে

অমানিশার কালো রাত।

ভিড় এড়িয়ে চলবে তুমি

পারলে থাকো বাড়িতে

দূরকোথাও  যেওনা ভাই

টেম্পু, রকেট, গাড়িতে।

প্রভুর কাছে চাওহে পানা

তিনিই মামুদ দয়াবান

বেঁচে যাবে পুরো জাতি

যদি তিনি  ফিরে চান।

 

১০.সুখ ছিনতাই

সুনশান নিরবতা প্রাণ নেই প্রাণেতে

সব খানে শংকা সুর নেই গানেতে।

ব্যবসটা সহসা যে হয়ে গেছে মন্দ

বিনা মেঘে পড়ে বাজ সব কাজে দ্বন্দ্ব।

মহামারি করোনাটা চারদিকে ঘুরছে

কত ঘর এই রোগে পুড়ছে তো পুড়ছে!

চলমান বিশ্ব  থমকে যে পড়লো

লাশে লাশে পৃথিবীটা রের্কডটা গড়লো।

শিক্ষা অফিসপাড়া তালা আজ ঝুলছে

ছেলে-মেয়ে পড়ালেখা ভুলছে তো ভুলছে।

মানুষের চোখে মুখে আতংক ভয়ডর

কোথা নিয়ে যাবে শেষে থামবে কি এই ঝড়?

সবখানে একই কথা করোনা গো করোনা

ঘরে  সবে পড়ে থাকো ঘর দিয়ে নড়ো না।

 

কি যে  হবে কি যে হবে বেড়ে যায় চিন্তা-ই

অনাবিল  সুখ যতো হয়ে গেলো ছিনতাই।

।।।।

শাহীন খান

বানারীপাড়া

বরিশাল।

লেখক:- ছড়াকার, কবি, গীতিকার, সুরকার, গল্পকার ও ঔপন্যাসিক।

 

আরও পড়ুন