Ads

বাড়িওয়ালার অবলা মেয়েটি পর্ব-১

।। সালমান বিন ওয়ালি উল্লাহ ।। 

ঢাকাতে আসলাম বছর তিনেক হল । ঢাকা শহরের কোনো জায়গা আপাততঃ বাদ নেই । যেখানে ঘুরতে যাওয়া হয়নি,কেউ যদি বলে,আপনার সবচেয়ে প্রিয় অভ্যাস কি?? তখন আমি চোখ বন্ধ করে বলে দিবো,আমার প্রিয় অভ্যাস হলো ঘুরাঘুরি করা,ভ্রমন করা । যারা বলে তাদের ঘুরাঘুরি ভালো লাগে না,আমার মনে হয় তারা এই পৃথিবীর বাসিন্দা নয় । তারা হয়তো মঙ্গলগ্রহের নয়তো অন্য কোনো এলিয়েন জাতীয় কিছু হবে,পুরো সপ্তাহ দুইহাতে শুধু বসে বসে হিসাব করতাম,কখন ছুটির দিন আসবে?? কখন বন্ধু-বান্ধবের সাথে একটু উড়া উড়ি করবো??কখন বাহিরের আবহাওয়া একটু গায়ে মাখবো??কখন ছুটে চলবো নিজের মনের চাওয়া সেই উদ্যানে??মাদ্রাসার চার দেওয়ালে পড়ে থাকতে থাকতে, ফাঁকে ফাঁকে নিজেকে আবদ্ধ কয়েদির মতোই মনে হতো । মন খারাপ হলে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে ঘুরে আসতাম,ছুটির দিনের জন্য অপেক্ষার পরে যখন ছুটি মঞ্জুর হতো,তখন আনন্দের ইতি থাকতো না,তখন অকারণেই শুধু হাসতাম,আমার এমনিতেই সব সময়ে ঠোঁটের এক কোণে হাসি জমা থাকে ।আমি সবার সাথে সমান তালে চলতাম । তাই আমার কোনো কিছুতে বেশি একটা সমস্যা হতো না ।এই সমাজে যারা সমানতালে চলতে পারেনা,তারা অনেক ভোগান্তির শিকার হয় । তাই অনিচ্ছায় হলেও সবার সাথে সমানতালে ফাঁকে ফাঁকে নিজেকে নিয়ে চলতে হয় ।

গ্রামের একটা ছেলে ঢাকায় যে কোনো প্রতিষ্ঠানে এসে সহজে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না ।তার দাঁড়াতে অনেক সময় লেগে যায় । যদি কোনো লিংক থাকে তাহলে ছেলেটা তাড়াতাড়ি লাউ কুমড়োর লতার মতো বাড়তে থাকে । অন্যথায় তাকে লিচু গাছের মতো ক্ষীণ হয়ে থাকতে হয় । আরেকটা অপশন বাকি থাকে, সেটা হলো কঠোর পরিশ্রম ।কিন্তু বর্তমানে এই কঠোর পরিশ্রমেরও যথাযথ মুল্যায়ন হয় না ।আমাদের সমাজে মুল্যায়ন হয় শুধু কাগজের কিছু নোটের । তবে যাদের কপাল ভালো, তারা কঠোর পরিশ্রমে সকল বাঁধা ডিঙিয়ে উঠতে সক্ষম হয় । আরেকটা অকাট্য বাস্তব বিষয় রয়েছে,তা হলো,পরিশ্রম কখনো বেইমানি করে না ।আমার পরিশ্রম ও আমার সাথে বেইমানি করলো না । অল্প কয়েকদিনের মধ্যে সকলের প্রিয়মুখ হয়ে উঠলাম । যেটা আমার মনের কল্পনার ক্যানভাসে ছিলো না ।

নতুন বছর শুরু হলো,যাদের সাথে সব সময় ঘুরাঘুরি করতাম,তাদের অনেকেই ভিন্ন মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে গেল ।  মনটা খুব আনচান করতেছে,বন্ধুদের কাছে না পেয়ে সবার সাথে যোগাযোগ করলাম ।একেকজন একেক বাহানা দিয়ে কেটে পড়লো । আমার কাছে কোনো বাহানা ছিল না ।তবুও বন্ধুরা না থাকায় মাদ্রাসাটা আমার কাছে পুরোই একটা বিরান ঘরের মতো মনে হচ্ছে । প্রেমিক প্রেমিকা ছাড়া চলা যায় । কিন্তু বন্ধুর বান্ধব ছাড়া চলা যায়না ।বউয়ের সাথে রাগ করে থাকা যায়। কিন্তু বন্ধু বান্ধবের সাথে রাগ করে থাকা রীতিমতো অসম্ভব ।তাই আমিও মাদ্রাসা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম ।

ঢাকাতে স্বনামধন্য এক মাদ্রাসায় ভর্তি হলাম । সঙ্গত কারণে মাদ্রাসার পরিচিতি তুলে ধরতে পারলাম না । সেখানে অনেক কষ্টে ভর্তি হলাম ।নতুন নতুন শশুর বাড়ীতেও ফাঁকে ফাঁকে জামাইদের একটু আনিজি আনিজি ভাব থাকে । নতুন বউদের তো কোনো কথাই নেই ।আর আমরাতো হলাম স্টুডেন্ট,মাদ্রাসা ও নতুন ।  হুজুররাও নতুন,ক্লাসমেটরাও নতুন,নতুন জায়গায় আসলে নিজের মাঝেও একটা নতুনত্বের ভাব চলে আসে । সব নতুন ভালো না হলেও, কিছু কিছু নতুন মন্দ হয় না,আরবীতে একটা প্রবাদ প্রচলিত । যার অনুবাদ হলো-

প্রত্যেক নতুন বস্তুর মাঝে নতুন আলাদা স্বাদ থাকে ।

আসলে প্রবাদটা আমার অবস্থার সাথে সত্যি সত্যি মিলে গেল ।প্রত্যেক নতুনত্বের মাঝে আলাদা কিছু নতুনত্ব পাওয়া যায় । বিশ্বাস না হলে,বাসায় নতুন কিছু এনে দেখেন ।নতুনত্ব অবশ্যই পাবেন ।

চলব…

( এটি একটি ধারাবাহিক গল্প )

১৫/৪/২৩ ইং

সালমান

লেখকঃ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরামের নিয়মিত লেখক

 

আরও পড়ুন- বিয়ের জন্য কনে নির্বাচন করবেন যেভাবে?

 

আরও পড়ুন