Ads

এখনো বিজয় আসেনি ।। ১ম পর্ব

।। শহীদ সিরাজী ।। 

নাসিম ও হাসিম দুই বন্ধু। ওদের মধ্যে তর্ক জমে উঠেছে বেশ। তর্ক থেকে বিতর্ক ! সম্পর্কের রসায়ন বেশ মধুর বলে বিতর্কটাও চলছে বেশ মধুর ছন্দে। ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে হাশিম নাসিমকে ধরে এনেছে। ড্রয়িংরুমে এসে জড়িয়ে পড়েছে বিতর্কে। অবশ্য প্রথমে তর্ক। তার থেকে বিতর্ক। তাড়া ছিল নাসিমের; আসতে চাইনি তবে হাসিম মায়ের দোহাই দিতে আর না করেনি। ওর মা নাসিমকে বেশ আদর করে, পছন্দ করে। নাসিম তার মায়ের ডাক ফেলতে পারেনি। মাঝে মধ্যে আগেও এসেছে। এসেই কথায় কথায় জড়িয়ে পড়েছে তর্কে।

আগামীকাল মে দিবস। ভার্সিটিতে তাদের ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি। তা নিয়েই বিতর্ক। দুই বন্ধুর মধ্যে মনের মিল থাকলেও গরমিলও আছে ঢের। গরমিলটা আদর্শগত। বলা যায় দুইজন দু’মেরুতে। হাসিম বললো,

“মে দিবসের বিজয় শ্রমিকদের মহান বিজয়! এর আগে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কেউ কথা বলেনি। এ ছিল শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই।”

হাশিমের কথা শুনে নাসিম বললো, “দেখো! ইতিহাসটা আমি জানি।”

তার কথা থামিয়ে দিয়ে হাসিম বললো, “তবুও বলি শোনো। ১৮৮৬ সালের ৪ মে আমেরিকার শিকাগো শহরের ঘটনা। সেদিন শ্রমিক বিক্ষোভ ও পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়েছিল। সেই প্রেক্ষাপটে ১৮৮৯ সালে প্যারিসের সোশ্যালিস্ট পার্টি ১ মে’কে ‘আন্তর্জাতিক শ্রমদিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে দেশে দেশে এ দিনকে ‘মে দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এটা শ্রমিকদের বড় বিজয়।”

এসব আলোচনা যখন চলছে তখন হঠাৎ কলিং বেল। হাসিম গেট খুলতেই প্রবেশ করলো তার বোন ফাইজা। ভার্সিটির অর্থনীতির তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। সে নাসিমকে দেখে মনে মনে খুশি হলো। একটু হেসে সালাম দিয়ে ভেতরে চলে গেল। একটু ছন্দপতন হলেও দুই বন্ধুর তর্ক চলতে লাগলো। নাসিম বললো,

“দেখো! তুমি যে কথা বললে সেটা ঠিক তবে ১৪০০ বছরেরও আগে আমাদের নবি মুহাম্মদ সা. শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কথা বলেছিলেন। তাদের মুক্তির লক্ষ্যে নীতিমালা দিয়েছিলেন। এটাই ইসলামের শ্রমনীতি।”

ইসলামের কথা শুনতেই হাসিম হেসে উঠলো। সে বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত একজন ছাত্র নেতা। কার্ল মার্কস লেলিনের অর্থনীতির গোড়া সমর্থক। নাসিমকে লক্ষ্য করে বললো,

“ওহো! তুমি তো ইসলামের কথা বলবেই আসলে সব ক্ষেত্রেই ইসলামকে টেনে আনো কেন, বলতো?”

লেখকের আরও  লেখা পড়ুন- আপনার শিশুর আপনিই শিক্ষক

ওরা দুজনে ছোটবেলার বন্ধু। সেই শৈশব থেকে একসঙ্গে পড়াশোনা করে এসেছে। বরাবরই ভালো বন্ধু । তবে সময়ের পরিক্রমায় পরিবেশের কারণে দুইজন দুই আদর্শে কখন যে আলাদা হয়ে গেছে টের পায়নি। দুজনই ভীষণ পড়ুয়া। উপন্যাসের পোকা। ছোটবেলা থেকেই ভাগাভাগি করে শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র, বিমল মিত্র, তারাশঙ্করের বই বা অন্যান্য সব বিখ্যাত উপন্যাস পড়ে এসেছে।

তবে পারিবারিক পরিমণ্ডল নাসিম ধীরে ধীরে ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। সাথে অনুঘটক হয়েছে কিছু বন্ধু যারা তাকে ইসলামের দিকে আহবান করে সত্যের পথ দেখিয়েছে। আর হাসিম ভার্সিটিতে এসে ঢুকে পড়েছে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের দিকে। ধীরে ধীরে সরে গেছে ইসলাম থেকে। নাসিম বললো,

“আচ্ছা হাসিম! বলতো মে দিবসের আন্দোলন কেন হয়েছিল?”

“কেন! শ্রমিকরা অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিল বলেই এ আন্দোলন হয়েছিল?”

“ঠিক বলেছ! তবে তারা যদি ইসলামকে মানতো তাহলে অধিকার বঞ্চিত হতো না।”

“আবার ইসলামকে টেনে আনছো?”

“কেন আনবো না! সব কিছুই জানতে হবে।

কাল মার্কস লেলিন পড়েছো, ইসলামের শ্রম নীতি পড়তে তোমার সমস্যা কি ? আমি তো সব জানার চেষ্টা করি। মানবো কিনা আমার ব্যাপার। মে দিবসের ঘটনা যদিও বিশ্বের সকল মানুষের কাছে শ্রমিকের অধিকার আদায়ের ইতিহাস হিসেবে সাড়া জাগিয়েছিল। তবুও তা হয়েছিল পুঁজিবাদী অর্থনীতির কারণে। এ ছিল যেমন কুৎসিত তেমন ভয়ঙ্কর। ছিল অমানবিকও । সেদিন গুলি করে শ্রমিকদের হত্যা করা হয়েছিল, ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানো হয়েছিল। কেন করেছিল, কারা করেছিল? আসলে তখন মানুষের মালিক হয়েছিল কিছু মানুষ। তারা নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে তৈরি করেছিল আমি আইন। এর ফলে অধিকার বঞ্চিত হয়েছিল দুর্বল শ্রমিকরা। আর অধিকার বঞ্চিত শ্রমিকরা সেদিন তাদের গোলামি থেকে মুক্তির আন্দোলন করতে বাধ্য হয়েছিল। সেদিন তারা জেল-জুলুম ও মৃত্যুর ভয়কে জয় করেছিল। এটাই ছিল দিবসের ইতিহাস।”

ফাইজাকে খাবার ট্রলি ঠেলে প্রবেশ করতে দেখে ওরা চুপ করলো। পেছনে মাও এসেছে। হাসিমকে লক্ষ্য করে ফাইজা বললো,

” তোমাদের জন্য কফি সাথে নাস্তা।”

নাসিম কিছুটা সংকোচবোধ করছে। এর আগে ফাইজা কখনো এভাবে সামনে আসেনি। আগে কখনও কথা বলেনি। আজ হয়তো মা ও ভাই আছে বলে কথা বলার সুযোগ নিয়েছে। আলোচনার সূত্র ধরে বললো,

“এবার তুমি কি বলবে ভাইয়া। নাসিম ভাই ইসলামের শ্রমনীতির কথা বলছেন। অর্থনীতির ছাত্রী হিসেবে আমিও কম-বেশী জানি। আমাদের এখন ইসলামের শ্রমনীতি কিছুটা পড়ানো হচ্ছে। উনি ঠিকই বলেছেন।”

আরও পড়ুন-ভিন্ন রকম চ্যালেঞ্জ

এবার মা কথা বলে বলে উঠলেন, “হাসিম! তোদের এত কিসের বিতর্ক। তুইতো ইসলামের ব্যাপারে উদাসীন। জানারও কোন আগ্রহ দেখি না। বাবা নাসিম ঠিকই বলেছে । তুই আরও পড়াশোনা কর, তখন জানবি। এখন বিতর্ক রেখে ছেলেটাকে খাওয়ার সুযোগ দে।”

মায়ের কথায় হাসিম হেসে বলল, ” মা! তুমি নাসিমকে বেশ পছন্দ করো।”

“হ্যাঁ করি, কারণ নাসিম বেশ ভালো ছেলে। নিয়মিত নামাজ পড়ে, আল্লাহতে বিশ্বাসী। আমি তোকে কত বললাম তুইতো কথা শুনিস না।”

নাসিমের অস্বস্তি বাড়ছে। আগে সে কখনো সরাসরি কথাও বলেনি। আজকে তাকে সাপোর্ট করে কথা বলতেই তার অস্বস্তি বাড়তে লাগলোট আসলে নাসিম মেয়েদের থেকে একটু দূরেই থাকে। ইসলামের বিধি বিধান তার জানা আছে। তাই সে সতর্ক। ফাইজা কিছুটা আধুনিকা হলেও খোলামেলা নয়, মার্জিত। ছেলেদের সঙ্গে কথা বললেও একটা দূরত্ব বজায় রাখে। ভাইয়ার বন্ধু নাসিমের প্রতি তার ভিন্ন ধারণা থাকলেও কোন সময় প্রকাশ করেনি। আজকে মায়ের সাথে এসে স্বসংকোচই যোগ দিয়েছে।

পরিস্থিতি নাসিমকে বাধ্য করছে। সে হাশিমের মাকে পছন্দ করে, খালাম্মার স্নেহ তাকে আপ্লুত করে। লক্ষ্য করেছে নিজের ছেলের মত তাকেও তিনি অনেক স্নেহ করেন। নাসিম বললো,

“ধন্যবাদ খালাম্মা! আমার জন্য দোয়া করবেন।”

খাওয়া চলছে। ততক্ষণ মা ও ফাইজা পাশের সোফায় বসেছে। তিনি বললেন, “অবশ্যই বাবা! তুমি বেঁচে থাকো, মানুষ হও আর হাসিমকে একটু তোমার পথে নিয়ে আসার চেষ্টা করো।”

নাসিম বেশ মজা পেল। বন্ধুকে খ্যাপানোর জন্য হেসে বললো, “খালাম্মার কথা শুনলে তো!”

হাসিম জাতে মাতাল তালে ঠিক! নাসিমের সাথে তার গভীর বন্ধুত্ব। তবে আদর্শ মানতে নারাজ। সেও হেসে বললো, “বন্ধু! তুমি তোমার কাজ করে যাও । দেখা যাক আমার জন্য তুমি কি করতে পারো!”

ফাইজা কথা বলার সুযোগ খুঁজছিল। মাকে লক্ষ্য করে বলল, ” আম্মু! ভাইয়ের জন্য তুমি নাসিম ভাইয়াকে বললে আমার জন্য তোমার কি পরামর্শ?”

“তোর আবার কি ! তোকে কিন্তু আরও বেশি সতর্ক হতে হবে এখন যুগ পাল্টেছে। সতর্ক ভাবে চলাফেরা করতে হবে। নিজের নিরাপত্তার কথা ভাবতে হবে। আগেও বলেছি তোকে আরো বেশি পর্দা করে চলতে হবে।”

চলবে…।

লেখকঃ  কবি , সাহিত্যিক এবং  সাবেক এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সমাজ,পরিবার ও আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা ও আর্টিকেল পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। প্রিয় লেখক! আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; প্রিয় লেখক ও পাঠক আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম এ যুক্ত হয়ে আমাদের সাথেই থাকুন এবং সুস্থ ও সুন্দর সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট হইন । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

আরও পড়ুন