।। মৌলুদা খাতুন মলি । ।
গতকাল রাত থেকে সাহেবের হঠাৎই জ্বর, প্রচন্ড!!
সিজন চেঞ্জ হচ্ছে, হয়তো বা তাই। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ঔষধ চলছে। আলহামদুলিল্লাহ সবগুলো রিপোর্ট ভালো। খারাপ কিছু না, সেরে যাবে ইনশাআল্লাহ!
কলেজে যাবার জন্য রেডি হচ্ছি। তো যথারীতি…
– আজকের দিনটা কলেজ না গেলে হয়না মলি? বাসায় স্রেফ একা থাকবো আমি, প্লিজ!
সাহেবের মুখে এমন মামার বাড়ির আবদার শুনে একটু হেসেই বললাম–
– জ্বি না হয়না, যাওয়া লাগবেই। গতকাল প্রিন্সিপাল স্যার ফোন দিয়েছিলেন। আজ পরপর দুইটা ক্লাস এবং জরুরি মিটিং আছে। তবে সুখের কথা হলো বাসায় তুমি একা নও, তোমার আদরের রাজকন্যা (জিহান) আছে। তুমি অসুস্থ জন্য ‘ও’ আজ মেডিকেলে যায়নি।
জিহান বাসায় আছে শুনেই সাহেব একদম আশ্বস্ত হলেন, আলহামদুলিল্লাহ! ফুরফুরে মেজাজে বললেন-
– দেখেশুনে যেও..!
আরও পড়ুন-মহিলাদের জ্ঞান অর্জন
রিক্সায় উঠছি এমন সময় ব্যাগের ভেতর নকিয়া ফোনটা বেজে উঠলো।।
হ্যালো বলতেই ফোনের ওপাশ থেকে ‘রেহেনা’র কান্নার শব্দ।
একটু উদ্বিগ্ন হয়েই জিজ্ঞেস করলাম–
– কি হয়েছে মা, কাঁদছিস কেন? বাসার সবাই ভালো আছিস তো?
– না, ভালো নাই খালা, একদমই ভালো নাই। আমার জন্য আপনি মরার দোয়া করেন। যেন তাড়াতাড়ি মরি।
এবার একটু বিরক্ত হয়েই বললাম–
– কেন, আবার কি হয়েছে? কদিন আগেই না ক্যাচাল মিটে গ্যালো।
সুযোগ পেয়ে রেহেনা বলতে শুরু করলো ওর এতদিনের জমানো যত দু:খের কথা আছে সব–
– খালা, বড়মেয়েটা এবার থিরিত (থ্রিতে) পড়ে, ছোটটা টু তে। আবারো নাকি মেয়েই হবে খালা। এই খবর শুনে ‘পপি’র বাপ তো আমার উপর সেইরকম ক্ষ্যাপা। পারলে এখনই তালাক দেয়! রেগেমেগে বাড়ি থেকে বের হয়ে গ্যালো। এখন কনতো খালা, এরমধ্যে আমার দোষ কোথায়? আমি হাত দিয়ে তিনটা মেয়ে তৈরি করে পেটে ঢুকিয়েছি? সবই তো আল্লাহর দান। আপনার মুর্খসুর্খ জামাই এসবের কিচ্ছু ছাই বোঝেনা, খালি গো-শাপটা আমাকে মারে আর বাপ-মা, জাত-বিজাত তুলে গাল পারে। আগুনের মধ্যে হাত কতক্ষণ রাখা যায় খালা কন তো? তারচে আমার মরণই ভালো, মরণ হলে বাঁচি!
সম্পর্কে রেহেনা আমার ভাগ্নী হয়। ফুপাতো বোনের মেয়ে। গ্রামে থাকে ওরা। অবস্থা একদম খারাপ না, ভালই। সারাবছর ঘরের চালের ভাত খায়। তাছাড়া জামাইয়ের নিজস্ব একটা মুদিখানার দোকানও আছে। বেশ বড়সড় দোকান। কিন্তু পরপর দুই মেয়ের পর আবারও মেয়ে হবে শুনেই জামাইয়ের মাথা খারাপ! উঠতে-বসতে সে রেহেনাকে কথা শুনাচ্ছে।
আরও পড়ুন- সন্দেহ যেভাবে অশান্তির কারণ
কলেজ থেকে ফেরার পথে জামাইকে ফোন দিয়ে কিছুটা গম্ভীর ভাবেই বললাম-
– শোনো বাবা, এতিম মেয়েটাকে বিয়ে করে এত কষ্ট দিচ্ছো কেন? আল্লাহর ভয়, মরার ভয় কিচ্ছু নেই তোমার? ছেলে সন্তান হওয়া, না হওয়া কি মানুষের হাতে? তুমি তো পাঁচ ওয়াক্ত নামায মসজিদে গিয়ে জামাতে পড়ো! প্রতি মাসে তাবলীগে সময়ও লাগাও, এসব খুবই ভালো কথা। কিন্তু এটুকু বুঝো না যে, ছেলে-মেয়ে দেয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালাই? এতে কারোই কোনো হাত নেই! কয়দিনের দুনিয়া বাবা? বউকে পেটানো কি খুব ভালো কাজ? জানোই তো, বাবা-মা মরা মেয়েটার যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। আর তুমি সেই অসহায়ের সুযোগই নিচ্ছো, তাইনা? একটু পরকালের ভয় করো বাবা। আল্লাহ পাক মহা ন্যায় বিচারক!
আমার কথার মাঝে জামাই কি খুঁজে পেলো জানি না। কিন্তু এই প্রথম সে নিজের ভুল স্বীকার করলো।।
পরে ফ্রি হয়ে ধীরেসুস্থে রেহেনাকে বললাম-
– শোন মা, তুই অন্তত মেয়েদেরকে ‘মেয়ে’ হওয়ার জন্য দোষারোপ করবি না কক্ষনো। ওদের ভালো করে যত্ন নে, লেখাপড়া শেখা। দেখিস, একদিন ওরাই তোর পাশে এসে দাঁড়াবে।
সত্যি বলতে কি, আজ তোর খালু জিহানের উপর প্রচন্ডরকম খুশি! কেন খুশি শুনবি? শোন…
জিহান ওর মেডিকেলের জরুরি ক্লাস বাদ দিয়ে অসুস্থ বাবার পাশে ঠায় বসে আছে। বাবার গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। বাবাকে অভয় দিয়ে মনে সাহস যোগাচ্ছে। বাবা-মার কাছে এর চেয়ে বড় শান্তির আর কি হতে পারে বল? তাই বলছি- আবারো মেয়ে হবে জন্য মন খারাপ করিস না মা! মেয়েরা হলো ঘরের রাণী!
আরও শোন, পরকালে শুধুমাত্র নেক আমল দিয়ে নয়; আল্লাহ পাকের ‘রহমত’ নিয়ে বান্দারা জান্নাতে যাবে। আল্লাহ পাকের ‘রহমত’ ছাড়া কেউই জান্নাতে যেতে পারবে না!!
“আল্লাহ পাক যে বান্দার প্রতি খুশি হন- সে ঘরে কন্যা সন্তান দান করেন”- সুবহান আল্লাহ!!
(সহিহ হাদিস)।
তাই–
‘কন্যা সন্তান’ হলো আল্লাহর রহমত, ঘরের শোভা!!
লেখকঃ লেখক ও অধ্যাপক
মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সমাজ,পরিবার ও আত্মউন্নয়ন মূলক অসাধারণ লেখা ও আর্টিকেল পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi এ লাইক দিয়ে ফেসবুকে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন।প্রিয় লেখক! আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে- [email protected] ও [email protected] ; প্রিয় লেখক ও পাঠক আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম এ যুক্ত হয়ে আমাদের সাথেই থাকুন ।