Ads

অন্যকে সংশোধনের পদ্ধতি

।। ফাতেমা মাহফুজ ।।

এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই।   মুসলিম হিসাবে তারা একে অপরকে না মিথ্যা বলতে পারে, না ধোকা দিতে পারে নাইবা বিপদে ফেলতে পারে।  বরং একজন যদি কোনো ভুল বা গোমরাহীতে থাকে তাহলে তাকে সংশোধন করতে পারে।  কারণ ভ্রাতৃত্বের দাবীই পরষ্পরে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়।  তবে এ সংশোধনের পদ্ধতি কেমন হবে? সেই ব্যাখ্যায় একটি হাদিস উল্লেখ করছি-

হযরত আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত।  রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন- এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই, সে তাকে সহায়কহীন বা নিরাশ্রয় ছাড়বে না, তাকে কোনো মিথ্যা বলবে না, তার ওপর অত্যাচার করবে না।  বরং সত্য কথা এই যে- তোমরা পরষ্পরের আয়নাস্বরূপ। যদি কারো মধ্যে খারাপ কিছু দেখো তাহলে দূর করে দিবে।  (তিরমিজি)

এখানে আয়নার সাথে তুলনা করে অনেক কিছু ইঙ্গিত করা হয়েছে।  যেমন-

১/ আয়না আমাদের চেহারাটা যেমন তেমনই দেখায়। চেহারায় দাগ থাকলে সেটাও দেখায়, বাড়তি কিছু না।  তেমনি আমাদের কোনো ভাই বিপথে গেলে, দোষ করলে, তার কোনো দূর্বলতা থাকলে আমাদের উচিত সংশোধনের উদ্দেশ্যে ঠিক সেটুকুই তার সামনে তুলে ধরা।  অতিরঞ্জিত করে, ঝগড়া বাঁধিয়ে বা বাড়িয়ে বললে হয়তো সেই ভাইটি নিজেকে সংশোধন করবে না।

২/ দেখুন, আমরা আয়নার সামনে এলেই সে আমাদের দোষ বা গুণ ফুটিয়ে তোলে।  সামনে না থাকলে দেখায় না।  তেমনি আমরাও আমাদের মুসলিম ভাই বোনের দোষত্রুটি তার সামনে বুঝিয়ে বলবো।  পিঠপিছে নয়, কারণ এতে গিবত হয় এবং ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ছিন্ন ও দূর্বল হয়।

৩/ কাউকে সবার সামনে খাটো করা যাবে না।  এটা ঈমানদারের কাজ নয়।  কারণ এতে অপর ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বা ইজ্জত নষ্ট হয়।  তাই অন্যকে লজ্জায় ফেলে বা অপমানিত না করে উত্তম পরিবেশে বলতে হবে।

যেভাবে মহানবী (সা.) অন্যের ভুল সংশোধন করতেন

৪/ আবেগ, অনুভূতি সহকারে বলতে হবে।  যাতে বুঝা যায়, অন্যের দোষে ও দূর্বলতায় আপনি নিজেও সমবেদনাপ্রাপ্ত।

৫/ দোষ ত্রুটি ধরার সময় নিজেকে জ্ঞানের দিক দিয়ে উচ্চ, বুগুর্গ, উত্তম মনে করা যাবে না।  অহংকার,  আত্মগৌরবপূর্ণ মনোভাব রাখা যাবে না।  এতে উদ্দেশ্য ব্যাহত হতে পারে।  যাকে সংশোধন করতে চাচ্ছেন সেও বিগড়ে যাবে এবং হিতে বিপরীত হতে পারে।

ভুল সংশোধনে নববী পদ্ধতি

সবশেষে, চেহারায় দোষ থাকায় আয়না যদি সেই সত্যটা তুলে ধরে তাহলে কি আমরা বিরক্ত হই? না বরং আয়নাকে মূল্য দিই।  যত্ন করে রাখি, পরবর্তীতে সে যাতে আমাদের কাজে লাগে।  একইভাবে কেউ আমাদের দোষ ধরলে তাকে তুচ্ছ জ্ঞান করা বা ক্রোধান্বিত হওয়া যাবে না। দোষ যে ধরে দিয়েছে তাকে সম্মান করতে হবে, ইতিবাচক আচরণ করতে হবে, যাতে দ্বিতীয়বার সে ভালো উপদেশ দেয়ার উৎসাহ পায়।

লেখকঃ ফাতেমা মাহফুজ, লেখক ও প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন-

গীবত অন্তরের ব্যাধি

 

 

আরও পড়ুন