Ads

নামাজের পাঁচওয়াক্ত-পাঁচসময় কেন?

।। ড.আকরাম নদভীর ব্যাখ্যা ।।

পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয। তবে বিভিন্ন সময়ে সেট করা। সব নামাজ সূর্যের অবস্থানের সাথে সম্পর্কিত। কারণ, মানুষের চোখের সামনে সুর্যটা দৃশ্যমান। ভোরে সূর্য থাকে না। দুপুরে ঠিক মাথার উপর। বিকালে গাছের পিছনে। সন্ধ্যায় অস্ত। রাতে পুরাই হারিয়ে যাওয়া।

সূর্যোদয়, মধ্যহ্ন, অপরাহ্ন, সূর্যাস্ত, গভীর অন্ধকার। প্রশ্ন আসে, এসব সময়ে নামাজ কেন পড়া হয়?ইবাদতগুলোর দুইটা পার্ট । হানাফিয়্যাহ আর ইসলাম । এ দুইটি ইব্রাহিম (আঃ) এর সুন্নাহ। হানাফিয়্যাহ হচ্ছে, দুনিয়ার দৃশ্যমান সবকিছুই অস্থায়ী, এসব থেকে মুখঘুরিয়ে আল্লাহমুখী হওয়া। যখনই বুঝতে পারবেন, আল্লাহ ছাড়া কোন উপায় নেই, তিনিই একমাত্র স্থায়ী। তখন সম্পূর্ণ তার কাছে আত্মসমর্পণ করবেন। নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহ’র কাছ বিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে ইসলাম।

নামাযই হচ্ছে ‘হানাফিয়্যাহ ও ইসলামের’ বাস্তবিক ট্রেনিং। এবার প্রশ্নে আসা যাক। কেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আলাদা আলাদা উপযুক্ত সময় সেট করা হয়েছে?

ফযরঃ– সুর্যোদয়ের আগে ফযর নামাজ পড়তে হয়। ঐ সময়ে সূর্য থাকে না। আকাশে সূর্যের দেখা নাই। সূর্য নামক জিসিটাই যেন অধরা। কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল সবসময় আছেন, থাকবেন। ফযরের সময়ে, শক্তির আধার সূর্যের কোন খবর নেই।মানুষের চিন্তাশীল মন ভাবে, এই সূর্য দিনে তার কত প্রখরতা। সে সূর্যটাকে এখন আর দেখতে পাই না। শিওর এটি অস্থায়ী। কারণ, দিনে আছে ভোরে নেই। নিশ্চই আল্লাহ কখনো কোথাও হারিয়ে যান না। তিনি আছেন অদৃশ্য আকারে। তিনি সবসময়ই অস্তিত্ববান। তিনিই সবচেয়ে মহান। নামাজে মানুষের উচ্চস্বরে ঘোষণা করতে হয়- আল্লাহু আকবর।

যোহরঃ– মধ্যহ্নে সূর্য একেবারে মাথার উপর থাকে। নামাজ পড়া তখন নিষিদ্ধ। যোহর ওয়াক্তের সময় সূর্য হেলে পড়ে। সূর্য এতক্ষণ মাথার উপর জ্বলজ্বল করছিল, নিজের প্রখরতা জানান দিচ্ছিলো, তার পতন মাত্র শুরু হয়ে গেছে। আপনি ঐ সময় আল্লাহর সামনে নামাযে দাঁড়ান, নিরবে ঘোষণা দেন, ইয়া আল্লাহ আপনি মহান, আপনার কোন পতন নেই।

আরও পড়ুন-বিশ্বজগতের প্রভু নিরাশ করবেন না

আসরঃ– গাছ অথবা পাহাড় সূর্যকে আড়াল করে দেয় এ সময়ে। সর্বদিক ছায়ার খেলা। সূর্য গাছের পিছনে পড়ে যায়। আসরে ওয়াক্তে নামাজে দাড়িয়ে ঘোষণা করতে হয়, আল্লাহ আপনি এমন শক্তিশালী আর এমন ক্ষমতাধর, কেউ আপনাকে আড়াল করতে পারে না। আপনার রহমত থেকে আমাদের কেউ বঞ্চিত করতে পারে না।

মাগরিবঃ– কিছুটা আলো থাকে ঐ সময়। কিন্তু সূর্যের অস্ত ঘটে। তার দীপ্তি এখন নিভু নিভু। প্রচন্ড তাপ শক্তির অবসান ঘটে। আকাশে তার সবচেয়ে দুর্বল অবস্থা। কিন্তু আল্লাহ’র শক্তির কোন ধ্বংস নেই। দুর্বলতা থেকে তিনি অনেক উর্ধ্বে। দুর্বলতা তাকে স্পর্শ করেনা-সুবহানাল্লাহ। তিনি সবসময়ই প্রখর আর প্রচন্ড। মানুষকে উচ্চস্বরে আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করতে হয় মাগরিব নামাজে।

এশাঃ– মাগরিবে একটু আলো তবুও দৃশ্যমান থাকে। কিন্তু এশায় পুরো পৃথিবী অন্ধকারে ঢেকে যায়। মনেহয় এ পৃথিবীর দিনের অবস্থা ছিল মিথ্যা। সূর্যের আলো ছিল মায়া। কোন আশা নেই। গাঢ় অন্ধকারে মানুষের মন খুঁজে বেড়ায় জীবনের আশার আলো। আল্লাহ বলেন, বান্দা তুমি হতাশ হয়ো না, আমি আছি, আমার সামনে প্রশান্ত অন্তরে দাঁড়িয়ে যাও নামাজে, আমাকে স্মরণ কর উচ্চকন্ঠে, আমার সামনে মাথা ঠেকাও আনন্দচিত্তে। অন্ধকারকে ভয় নেই। তোমার আল্লাহ জীবন থেকে অন্ধকারকে উঠিয়ে নিবেন। তিনিই মহান। তিনিই বড়- আল্লাহু আকবর।

[The real Fiqh Of Salah – লেকচার অবলম্বনে]

অনুবাদ ও সংকলনঃ জামান শামস ,প্রাক্তন এএমডি, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সমাজ,পরিবার ও আত্মউন্নয়ন মূলক অসাধারণ লেখা ও আর্টিকেল পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi এ লাইক দিয়ে ফেসবুকে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন।প্রিয় লেখক! আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; প্রিয় লেখক ও পাঠক আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম এ যুক্ত হয়ে আমাদের সাথেই থাকুন ।

আরও পড়ুন