Ads

নবিজীর (সাঃ) জীবন থেকে প্রশাসকদের জন্য শিক্ষা

জামান শামস

নবীজি তাঁর সাহাবাদের নিয়ে খাইবার যুদ্ধ শেষে ফিরছিলেন। পথে রাত হয়ে গেলো। সবাই ভীষণ ক্লান্ত—এবার ঘুমানোর পালা। আল্লাহর রাসূল বললেন—আমরা তো ক্লান্ত; ফজরে ওঠতে সমস্যা হতে পারে—তাহলে কে আমাদের জাগিয়ে দিতে পারবে? বিলাল (রা.) ছিলেন খুবই উদ্যমী মানুষ। তিনি দায়িত্ব নিলেন।

সবাই ঘুমে বিভোর। বিলাল (রা.) সালাত (নামাজ) পড়ে পড়ে সময় কাটাচ্ছেন। দীর্ঘ সফরের ক্লান্তির ফলে তিনিও আর টিকতে পারলেন না; উটের সঙ্গে হেলান দিয়ে বিশ্রাম করতে করতে হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়লেন।

রাত শেষ হয়ে সকাল হলো। ফজরের ওয়াক্ত শেষ। সূর্যের তাপে তাঁদের ঘুম ভাঙলো। সর্বপ্রথম জাগলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এরপর বাকিরা। সবাই বিলালের দিকে তাকিয়ে আছেন। নবীজি বিলালকে এমন হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, ‘আপনার যা হয়েছিলো, আমারও তাই হয়েছিলো।’ অর্থাৎ ঘুম আটকাতে পারিনি।

নবীজি বললেন, তুমি সত্য বলেছো। তাঁকে তিনি আর কোনো তিরস্কার করেননি। এরপর তাঁরা কাযা নামাজ পড়ে নিলেন। [সহিহ মুসলিম: ১০৯৭]

লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, বিলাল (রা.) নিজে থেকে দায়িত্ব নিয়েও সজাগ থাকতে পারেননি, তবুও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে জেরা করেননি। আমরা হলে প্রথমেই হয়ত বলতাম, ‘সজাগ থাকতে পারবেন না, তাহলে দায়িত্ব কেন নিয়েছিলেন?’ কিন্তু প্রিয় নবীজি এমনটি করেননি। সাহাবাগণও এমনটি করেননি। এখানেই আমাদের সাথে তাঁদের পার্থক্যটি। তাঁরা মুসলিম ভাইদের প্রতি ছিলেন রহমদিল। তাঁরা তাঁদের ওযর (excuse) গ্রহণ করতেন, ভুল ক্ষমা করতেন, যৌক্তিক কারণ বিবেচনা করতেন।

যদি নবীজি সবার সামনে বিলালকে আচ্ছামত শাসাতেন, তবে নিঃসন্দেহে বিলাল (রা.) ভীষণভাবে লজ্জা পেতেন। কিন্তু নবীজির মত শিক্ষকের কাছ থেকে এমন কাজ হতেই পারে না। তিনি বরং সহজ করে দিয়েছেন। আমরাও আমাদের সহপাঠী, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের কোনো যৌক্তিক ভুলের জন্য তাদের তিরস্কার করবো না; সেই ভুলটি যত বড়ই হোক। এতে তার সাথে সম্পর্ক শুধু স্বাভাবিকই থাকবে না, বরং সারা জীবনের জন্য আমরা তাদের মনে স্থান করে নিতে পারবো।

হতেই পারে অধীনস্থ কেউ অনিচ্ছায় এমন ভুল করলো কিংবা মানবীয় দুর্বলতাবশতঃ কোন ত্রুটি করলো তার জন্য তাকে সাথে সাথে শাস্তি দেয়া কোন বাহাদুর নয় বরং উত্তম নেতৃত্বদের বুঝতে হবে কোনটি ইনটেনশানাল আর কোনটি অনিচ্ছা প্রসুত।প্রাশাসনের বড় পদে থেকে অনেক সময়ই আমাদেরকে এমন বহু বিষয়ে সিদ্ধান্তে নিতে হয়।ঘটনাটি সেক্ষেত্রে একটি বড় পথ নির্দেশিকা।

লেখকঃ কলামিস্ট ও বিশিষ্ট ব্যাংকার

 

আরও পড়ুন