Ads

নুসাইবা; ইসলামেই নারীর মুক্তি (৩): স্রষ্টা পুরুষতান্ত্রিক নয়

সাজিদ আব্দুল্লাহ

ভার্সিটি থেকে ফেরার সময় নুসাইবা শান্তিকে বললো,
—আচ্ছা শান্তি! কোরআন হাদীসের যে বিষয়গুলো উল্লেখ করছিলাম, এসব তো কোরআনেরই আয়াত। এগুলো দিয়ে কিভাবে বিভ্রান্ত করতে পারে?’
—নুসাইবা! একটি প্রসিদ্ধ কথা আছে না— ‘অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্কর?’
—হুম। তো!
—প্রথমত, শুধু অনুবাদ পড়ে অনেক কিছুই তুই বুঝতে পারবি না। তার সাথে তোকে ‘শানে নূযুল, তাফসির’ পড়া লাগবে। আর নয়তো তোকে বিভ্রান্ত করার জন্য কোরআনের এক আয়াতই যথেষ্ট। যেমন, ‘নারীরা তোমাদের শষ্যক্ষেত্র।’
—আচ্ছা তাহলে আমি যদি কোরআন বুঝতে চাই, তাহলে কিভাবে পড়লে ভালো হবে?
—প্রথমত কুরআনুল কারীম অধ্যায়ন শুরু করলে বিভ্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রচুর। সেজন্য সবচেয়ে ভালো হয় আরবি শিখে আরবিতে কুরআনুল কারীমটা বুঝে নেওয়া। এটা হবে সবচেয়ে উত্তম পন্থা। তাছাড়াও যদি পড়তে চাস তাহলে তুই ‘তাফসিরে মারেফুল কোরআন’ পড়তে পারিস। শানে নুযূল, তাফসির সহ যাতে পড়া হয়। বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয়।
—আচ্ছা অনুবাদক, সংগ্রাহক, বর্ণনাকারী, সিরাত রচনাকারী এগুলো সব পুরুষই কেন, নারীরা হতে পারে না?
—কেন নয়! সর্বোচ্চ হাদীস বর্ণনাকারীদের দ্বিতীয়জন হযরত আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা। তাছাড়া হাফসা রাদিআল্লাহু আনহা সহ আরো অনেক নারী সাহাবীরা হাদীস বর্ণনা করেছেন। সীরাত লিখেছেন অনেকেই।
—কিন্তু তাদের সংখ্যা তো খুবই সীমিত!
—দেখ! আমরা বিজ্ঞানের থিওরীগুলো পড়ি। অবশ্যই এসব উপকারী। যারা এগুলো আবিষ্কার করেছে তারা আমাদের নিকট সম্মানিত। কিন্তু একটা বিষয়; ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ড সেরা ১০জন বিজ্ঞানীর একটি লিস্ট তৈরি করেছে। তারা হলেন,
স্যার আইজাক নিউটন, লুইস পাস্তুর, গ্যালিলিও,মেরি কুরি,আলবার্ট আইনস্টাইন, চার্লস ডারউইন, অটো হান, নিকোলা তেসলা, জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল, অ্যারিস্টটল।
এখন দেখ! শুধুমাত্র মেরি কুরি ব্যতীত এই লিস্টে কোন নারীই নেই। এজন্য কি তুই বলতে পারিস তারা ভুল নির্বাচন করেছে বা এটা নারীর প্রতি অসম্মানী?
—না।
—তাহলে তারা পুরুষ হয়ে জ্ঞান অর্জন করেছে, বর্ণনা করেছে, এটাও তাদের কোন দোষ হতে পারে না।
—আচ্ছা শান্তি দেখ! কোরআনে যখন আল্লাহর কথা বর্ণনা করা হয়েছে, তখন ‘আমি’র জায়গায় ‘আমরা’ বলা হয়েছে। আবার দেখা যাচ্ছে সেখানে ‘আমরা’ শব্দটা ব্যবহার হচ্ছে ‘পুরুষবাচক’ এটা কি স্রষ্টার পুরুষ হওয়ার প্রমাণ না?
—নুসাইবা! কোরআন নাজিল হয়েছে আরবি ভাষায়। অর্থাৎ আরবদের ভাষায়। সুতরাং ওই ভাষায়ই ব্যবহার হবে, যা এ্যারাবিয়ানরা ব্যবহার করে। না হলে তারা কোরআন বুঝবে না। এখন দেখা যায়, এ্যারাবিয়ানরা যখন সম্মানিত কোন ব্যক্তি বিষয়ক কথা বলে তখন তারা ‘তুমি এককের জায়গায় তোমরা বহুবচন এবং আমি একবচনের জায়গায় আমরা বহুবচন ব্যবহার করে। এবং সেটা ‘পুরুষবাচক’ করে। সুতরাং যেহেতু আরবি ভাষায় কোরআন নাজিল হয়েছে, তাই এরকমই নাজিল হয়েছে।
এখন বলবি তাহলে এরকম ভাষায় কেন কেরআন নাজিল হলো?

নুসাইবা! একটি ধর্মগ্রন্থের তো সে ভাষায়ই হওয়া উচিৎ যা যুগশ্রেষ্ঠ। আর সে যুগে ভাষা সাহিত্যে সর্বোচ্চ এগিয়ে ছিলো আরবি ভাষা। কবি সাহিত্যকদের ছড়াছড়ি ছিলো তখন আরবে। তারা কবিতার আসর জমাতো। কবিতার শেষ অক্ষর থেকে কবিতা শুরু করতো। কবিতার প্রতিযোগিতা করতো। ভাষায় ছিলো তাদের বিশাল পাণ্ডিত্য। তখন আরবিই ছিলো সকল ভাষার চেয়ে সর্বোচ্চ উন্নত ভাষা। সুতরাং কোরআন আরবি ভাষায় নাজিল হওয়াটাই উত্তম ছিলো।
আরেকটা বিষয় শোন! পুরুষের একবচন শব্দ হলো ‘রজুলুন’ অর্থ একজন পুরুষ। আর বহুবচন হলো ‘রিজালুন’ অর্থ তিন বা ততোধিক পুরুষ। আরবি লোগাত অনুযায়ী এই ‘রিজালুন’ পুরুষবাচক শব্দটি আরবি সাহিত্যে ‘স্ত্রীবাচক’ হয়ে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ সেটা স্ত্রীবাচকের হুকুমে। এখন তুই বল, এতে কি পুরুষ নারী হয়ে গেলো? হলো না। সে পুরুষই রইলো। ঠিক এমনই এখানে পুরুষবাচক শব্দ ব্যবহার হলেই তিনি পুরুষ হবেন, এটা প্রমাণ হয় না।
—সূরা জীনের ৪নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে ‘তিনি কোন স্ত্রী গ্রহণ করেননি, তার কোন সন্তানও নেই।’ এখানে তো বলা হলো না ‘তার কোন স্বামীও নেই’ এর দ্বারা কি বুঝা যায় না তিনি পুরুষই?
—হিন্দুধর্মানুযায়ী ভগবান শিব এবং পার্বতীর সন্তান হলো গনেশ। খৃষ্টধর্মানুযায়ী স্রষ্টা এবং মরয়মের সন্তান যিশুখ্রিস্ট। আল্লাহ তাআলা এসব বহু স্রষ্টাতন্ত্রকে ভুল প্রমাণ করার জন্য বলেছেন ‘তিনি স্ত্রী গ্রহণ করেননি, এবং তার কোন সন্তানও নেই’ এটা দিয়ে বুঝানো হচ্ছে ‘হিন্দু খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা যেই স্রষ্টাপুত্রের কথা বলে, এটা ভুল।’
—আচ্ছা তাহলে তুই বলছিস স্রষ্টার কোন লিঙ্গ নেই, তিনি হিজড়া?
—নুসাইবা! আচ্ছা ধর, তুই একজন উদ্ভাবক। তুই একটা জিনিস আবিস্কার করলি। যেটা দেখতে বিড়ালের মতো। তাহলে কি বলা যাবে ‘তুই বিড়াল?’
—না।
—যিনি লিঙ্গের আবিষ্কারক, তার জন্য কেন লিঙ্গ লাগবে? আর যদি হিজড়ার কথা বলিস, তাহলে এটা তোর ভুল ধারণা, কারণ হিজড়ার লিঙ্গ আছে। তারা তৃতীয় লিঙ্গের অধিকারী। কিন্তু স্রষ্টার কোন লিঙ্গই নেই। সুতরাং কোরআনকে, স্রষ্টাকে পুরুষতান্ত্রিক বলা যায় না। এরকম আরো অনেককিছু জানতে পারবি, কোরআন শরিফ অধ্যায়ন করলে। তাই তোকে বলি কোরআন পড়। তবে উত্তম পন্থাই উত্তম।
—আচ্ছা যাই শান্তি।
নুসাইবা বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
(চলবে)

আগের পর্ব নুসাইবা; ইসলামেই নারী মুক্তি(২): বউ পেটানো ইসলাম নয়

লেখকঃ সাহিত্যিক ও কলামিস্ট 

আরও পড়ুন