Ads

পেটিকোটের নিচে কিছু না পরে নামাজ পড়লে জায়েজ হবে কি?

শাহীন আক্তার

◾আসরের নামাযের ওয়াক্ত হয়ে গেলেও উঠতে পারছিনা।পাশের বাসার এক মহিলা এসে বসে আছেন।
কয়েকবার ইংগিত দেওয়া স্বত্বেও উনি না ওঠায় অগত্যা বলতেই হলো,
‘আপনি বসুন, আমি নামাজটা পড়ে নেই।’
নামাজ পড়ার পর শুরু হলো মহিলার বাক্যবাণ।
‘আল্লাহ! আপনার নামাজ তো হয় নাই। পর্দার খিলাফ হলো। মাটি সব দেখলো…ইত্যাদি ইত্যাদি।
উল্লেখ্য আমি নামাজের জন্য ভিন্ন দুটি ফুলহাতা মোটা কাপড়ের ম্যাক্সি রেখেছি। তাতেই নামাজ পড়তে সাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
মহিলার মতে যেহেতু ম্যাক্সির নিচে আমি কিছু পড়লাম না অতএব আমার পর্দা হয়নি তাই নামাজও ক্যান্সেল!
এখন মহিলাকে কি করে বুঝাই যে, মাটির চোখ নাই।

◾ফেসবুক জগতে এসে দেখলাম আর অনুধাবন করলাম পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি ইবাদাত করে বা করতে আগ্রহী কিন্তু অনেক ইবাদাত আছে যা হয়ত শরীয়ত সম্মত না। কুসংস্কারে ভরা আমাদের নারীজীবন ।
নারীদের একটা কমন সমস্যা হলো তারা কোন ইবাদাতের কথা শুনলেই আমল করা শুরু করে দেয় । একটুও যাচাই বাছাই করার প্রয়োজন মনে করে না ।

◾বিভিন্ন ইসলামিক গ্রুপে যুক্ত থাকার দরুন প্রায়ই বোনদের নানারকম প্রশ্ন করতে দেখি। তা থেকে অনুমান করতে পারি আমাদের বিশেষত মেয়েদের ইসলাম সম্পর্কে অনেক ভ্রান্ত ধারণা বিদ্যমান।
একটি প্রশ্ন প্রায় সব বোনকেই করতে দেখি।

◾প্রশ্ন: পেটিকোট পরে নামাজ হবে কী??

◾উত্তর: নারীদের সতর হলো মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে রাখা । নামাজের সময় মুখ ও হাতের কব্জি পর্যন্ত খোলা রাখা । কিন্তু আশেপাশে বেগানা পুরুষ থাকলে নামাজের সময়ও মুখ হাত সব ঢাকতে হবে ।
এখন অনেকেই বলে থাকে নারীদের পেটিকোটের ভেতর যদি কিছু না পরা হয় তাহলে নামায হবে না।
মাটি নারীর লজ্জা স্থান দেখে ফেলে ।

◾এই বিষয়ে অনেক খুঁজেও কোন তথ্য সংগ্রহ করতে পারিনি । কুরআন হাদিসে পর্দার যে সব বর্ণনা এসেছে সেখানে কোথাও বলা নেই যে পেটিকোটের নিচে কিছু পরতে হবে । এমনকি পর্দার যে পোষাকের বর্ণনা, তার ভেতরেও কোন কিছু পরা লাগবে কি না সেই বর্ণনা
নাই । পর্দা শুধু মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে রাখা । ভেতরে কি করতে হবে না করতে হবে সেটা জরুরী না। কেউ চাইলে পরবে না চাইলে না পরবে । পর্দার শর্ত হলো বাইরে থেকে যেন সতর না দেখা যায় ও দেহের আকৃতি বোঝা না যায়। আর পর্দা করতে বলা হয়েছে পুরুষ থেকে যাদের সাথে বিবাহ জায়েজ(নন মাহরাম) । মাটির সাথে কোন পর্দা নেই! মাটির সাথে করোর বিয়েও হয় না।

◾আমরা যাদের সাথে পর্দা করা ফরয তাদের সাথেই পর্দা করি না আর কুসংস্কার গুলো যাচাই বাছাই না করেই পালন করতে উঠে পড়ে লাগি ।
যেমন দেবর-ভাবী আর শালী-দুলাভাই, বিভিন্ন কাজিন, এই সম্পর্কগুলো তো চরম পর্যায়ের গুনাহের কাজ । কিন্তু অন্যান্য পুরুষ থেকে নিজেদের আড়াল রাখলেও দেবর আর দুলাভাই ও কাজিনদের সাথে সেই রকম ফ্রি আমরা!
◾যাই হোক । আমি ব্যক্তিগত ভাবে এবং বিভিন্ন পুস্তক ও আলেমদের আলোচনায় যতটুকু জেনেছি তা হলো পেটিকোট বা ম্যাক্সি বা বড় খিমার পরে নামায পড়া যাবে । এর জন্য ভেতরের কিছু পরতেই হবে এমন জরুরি কিছু নেই। হাদিসে তো এমন বর্ণনা আছে যে, নারীদের পা যাতে দেখা না যায় তার জন্য আধা হাত বা একহাত বাড়িয়ে পরতে । কিন্তু পেটিকোটের ভেতরের কোন বর্ণনা নাই।
◾তাইএই বিষয় টা শুধু শুধু জটিল করার কোন দরকারই পড়ে না ।কেউ যদি পরতে চায় পরতে পারে । কিন্তু যে পরে না তাকে যেন না বলি যে ভেতরে কিছু না পরলে নামায হবে না , মাটিতে লজ্জা স্থান দেখলে গুনাহ হবে এসব বলা থেকে বিরত থাকি ।
কেননা মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে বলেন:

“তোমার যে বিষয়ে জ্ঞান নেই, তার পিছে পড়ো না (অনুসরণ কোরো না)। অবশ্যই কান, চোখ ও হৃদয়—এগুলোর প্রতিটি সম্পর্কে (কিয়ামতের দিন) কৈফিয়ত তলব করা হবে।”
[সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৬]

◾মহান আল্লাহ  আমাদের সবাইকে হেদায়েত ও হেফাজত করুন। এবং সেই সাথে আমাদের সবাইকে সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করুন।
লেখক : ইসলামী বিষয়ে কলাম লেখক

আরও পড়ুন