আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আগামী ২৪ জুলাই শুক্রবারে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পাওয়া তুরস্কের হাজিয়া সোঁফিয়া মসজিদে শুক্রবারের জুম্মার নামাজ পড়া হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রপতি এরদোগান । আর এর মাধ্যমে প্রায় ৮৫ বছর পর আবার মসজিদ হিসাবে বিশ্ব দরবারে মাথা উচু করে দাঁড়াবে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পাওয়া এই স্থাপনা ।
রাষ্ট্রপতির রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ঘোষণা করেছেন যে ঐতিহাসিক কমপ্লেক্সটি ২৪ জুলাইয়ের শুক্রবারের নামাজের মাধ্যমে উপাসনার জন্য প্রস্তুত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শুক্রবার আদালতের রায় ঘোষণার পরে কাউন্সিল অব স্টেট জানিয়েছে যে হাজিয়া সোফিয়ার ক্ষেত্রে যে ঐতিহাসিক ডিড ছিল তাতে একে মসজিদ হিসাবে আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিত করা হয়েছিল এবং তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে এক্ষেত্রে যে আইন ছিল তাতে মসজিদ ব্যতীত অন্য যে কোনও কিছুর জন্য এর ব্যবহার আইনীভাবে সম্ভব ছিল না। কিন্তু তারপরও “১৯৩৪ সালে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে মসজিদ হিসাবে এর ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায় এবং একে যাদুঘর হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, যা এ সংক্রান্ত আইন এর সম্পূর্ণ লঙ্ঘন ।”
বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক হেরিটেজ ঐতিহ্যবাহী হাজিয়া সোফিয়া ষষ্ঠ শতাব্দীতে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের রাজত্বকালে নির্মিত হয়েছিল এবং গ্রীক অর্থোডক্স চার্চের আসন হিসাবে ব্যবহার করা হতো । ১৪৫৩ সালে ইস্তাম্বুলের অটোমান বিজয়ের মাধ্যমে এটি একটি রাজকীয় মসজিদে রূপান্তরিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৩৫ সালে কঠোরভাবে ধর্মনিরপেক্ষ একক-দলীয় শাসনকালে এই কাঠামোটি যাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছিল । তবে জনগণের দাবীর প্রেক্ষিতে এটি মসজিদে পরিণত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। সব সময় সাধারণ জনগণের দাবী ছিল এটি আবার মসজিদে রূপান্তরিত হোক ।
ইউনেস্কো শুক্রবার বলেছে যে তার ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটি হাজিয়া সোফিয়ার অবস্থান পর্যালোচনা করবে এবং তুরস্কের এই সিদ্ধান্তে এর সর্বজনীন মূল্যের উপর প্রভাব ফেলবে বলে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।
কিন্তু তুরস্কের ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেলিম কিরণ বলেন যে “এই সিদ্ধান্তটি মানবজাতির জন্য এবং সমস্ত ধর্মের মানুষের জন্য । আর এর কারণে হাজিয়া সোফিয়ার ঐতিহাসিক মূল্যকে ক্ষতি করবে না । হাজিয়া সোফিয়া সমস্ত মানবতার জন্য সমান মূল্যবান।”
“হাজিয়া সোফিয়া মসজিদ একটি বিশ্ব ঐতিহ্য, তাই সতর্কতার সাথে তার ভাবমূর্তি রক্ষা করা অব্যাহত থাকবে,” তুর্কি সংস্কৃতি ও পর্যটনমন্ত্রী মেহমেত নুরি এরসয় টুইটারে উল্লেখ করেছিলেন।
সারা মুসলিম বিশ্ব হাজিয়া সোফিয়ার ব্যাপারে নেয়া এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানালেও ইউনেস্কোর পাশাপাশি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া এবং গ্রীস এই সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছে।
হাজিয়া সোফিয়ার মসজিদে রূপান্তর নিয়ে সংবাদ গ্রীক সংবাদপত্রগুলিতে এই সপ্তাহের শিরোনামে বেশ আধিপত্য বিস্তার করেছিল।
সূত্রঃ ডেইলি সাবাহ, তুরস্ক