Ads

যদিবা সে আসে সখী কি হবে আমারও তায়…

-Shaheen Akter
আমার খুব ছোট বেলার একটা মজার ঘটনা বলি।
আমার ধারণায় সেসময়ের মানুষজন এখনকার তুলনায় বেশী সাংস্কৃতিক মনোভাবাপন্ন ছিলো।
এখনকার মত মিডায়া জগতের রমরমা ভাব তখন ছিলো না। ছিলো না হাজারেবিজারে টিভি চ্যানেল!
কিন্তু মানুষ তখন তাদের হৃদয়ে শিল্প-সাংস্কৃতিকে ধারণ করতো। যাই হোক, আমার ছোটবেলায় একটা গান খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। গান বললাম এ কারনে যে,
৪/৫ বছর বয়সে মানুষ সব সঙ্গীতকেই গান হিসাবে জানে। রবীন্দ্র/নজরুল/লালন গান আলাদা করে বোঝার বয়স ওটা নয়। খেলার ফাঁকেফাঁকে নিজেদের,পড়শীর অথবা দোকানের রেডিওতে শুনতাম কেমন যেন অনুনাসিক সুরে এক মহিলা সারাদিন গেয়ে যায়,
না সজনী না, না সজনী না….
শুনতে শুনতে গানটা প্রায় মুখস্ত হয়ে গেলেও মহিলার শঙ্কা ও মন খারাপের কারন কিছুতেই বুঝতাম না।
“যদি বা সে আসে
সখী, কী হবে আমার তায়
সে তো মোরে সজনী লো
ভালো কভু বাসে না জানি লো
ভালো ক’রে কবে না কথা
চেয়েও না দেখিবে
বড়ো আশা করে শেষে পূরিবে না কামনা।।”
কেনই বা মেয়েটির প্রিয়জন আসবে না আর যদি আসেও তাহলে আবার ভালবাসবে না কেন?
এ জটিল রহস্যের কোনো কূলকিনারা আমার শিশু মস্তিষ্ক খুঁজে পাচ্ছিলো না।
কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন এই জটিল রহস্যের সমাধান করে ফেললাম! আরে! এত সহজ কেস!
আমি বুঝতে পারলাম, মহিলাটি মোটামুটি কুশ্রী এক নারী। তার প্রিয়জন আসার সময় হলে (অফিস ছুটির পর) সে সাজগোজ করে প্রিয়জনের চোখে আকর্ষণীয় হতে চায়। কিন্তু তার মনে সর্বদা আশংকার দোলাচলে দুলতে থাকে যে তার প্রিয়জন কি বাসে চেপে আসবেন না রিকশায়? সেই জন্যই দারুণ শঙ্কায় গেয়ে ওঠেন,
…যদি বাসে আসে সখী কি হবে আমার উপায়…
কারন বাসে আসলে দ্রুত পৌঁছে যাবেন (তখনকার দিনে এত জ্যাম ছিলো না)। আর অত তাড়াতাড়ি হয়ত মহিলাটি নিজেকে তৈরী করতে পারবে না। তাই তিনি হতাশায় ভোগেন প্রতিদিন। কারন তার কাছে তো জানার উপায় নাই প্রিয় মানুষটি বাসে আসবে না রিকশায়! আর মহিলাটি যে সত্যি নিরুপায় তা শুধু আমি কেন সারা দেশের মানুষই জানতো। কারন ‘না সজনী না’ গানের পাশাপাশি তখন সারাদিন তিনি আরেকটি গানও অনবরত গেয়ে চলেন যে!
‘নাই টেলিফোন, নাইরে পিয়ন….’
সত্যিই তো টেলিফোন (মোবাইল) ছাড়া তাহলে তিনি কি করে সঠিক খবরটি পাবেন?
-Shaheen Akter
ছোটগল্প লেখিকা।
আরও পড়ুন