Ads

সন্তানকে বন্ধু বানান ০৮

(বন্ধু এটি অষ্টম পর্ব, দয়া করে পড়ুন)
– নুরে আলম মুকতা
বেশ কয়েক বছর আগে হঠাৎ একদিন তিন সহকর্মী বাজারে মিলিত হলাম। নিয়মিত কারনেই।
বাজার তো করতেই হয় আমাদের। বাজার শেষ করে চা পান না করলে মজার যেনো ষোল কলা পূর্ন হয় না। পাশের স্টলের বেঞ্চে বসে চায়ের অর্ডার দিতে গিয়ে সম্মতি প্রার্থনা করছি,লাল নাকি দুধ চা ?  আমাদের এক সহকর্মীর সন্তান সাথে ছিলো। ও তখন আট বছর বয়সী। বাচ্চাটি বার বার ওর বাবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে চলেছে। আমি আর বাঁকীজন ভিন্ন প্রসঙ্গে মশগুল। বাচ্চাটি ওর বাবাকে বলছে, বাবা চা এর বিল কে দিবে? ওর বাবা বাচ্চাটিকে চোখ রাঙানি দিয়ে থামানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে অবশেষে উত্তর দিয়েছিলো, ও ও তোমার কাকু দিবে। তখন বাচ্চাটি বলে উঠলো, তাহলে দুধ চা। ওর বাবা বিল দিলে ও লাল চা পান করতো। ওর বাবাকে দিতে হবে না এজন্য দুধ চা। আমরা মূহুর্তের মধ্যে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছিলাম। কোনদিনই ভাবিনি লিখতে হবে। ছোট্ট একটি বিষয় কিন্তু এর অভ্যাস অতি গভীরে। এরকম আচরণ  আমাদের মানসিক সহনশীলতা,ধারণক্ষমতা ও উন্নয়ন অনুভুতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। শিশুটির মনোজগৎ এমনভাবে তৈরি হয়েছে যে আমি আর আমার বাবা বাঁচলে কথা। আর কার কি হলো তা দেখার বিষয় নয়। প্রচন্ড স্বার্থপরতা মগজের কোষে কোষে প্রবিষ্ট  হয়ে নির্মম করে ফেলতে পারে আপনার প্রিয় সন্তানটির হৃদয়। আপনি সন্তানকে মানুষ বানাতে চাইলে ওকে প্রকৃত দৃষ্টিভঙ্গি শেখাতে হবে। পরের কারনে স্বার্থ বিসর্জন দেয়ার শিক্ষা হলো মানবিক গুণাবলির শ্রেষ্ঠ গুণাবলি। স্বার্থ ত্যাগের বিষয়টি ছোট বেলা থেকে দয়া করে শুরু করুন। দয়া করে খোঁজ নিন আপনার সন্তানের কোন দরিদ্র বন্ধু পড়ালেখার কোন সামগ্রী অথবা অন্য কোন বিষয়ে বিপন্ন হয়েছে কি না। যদি পেয়ে যান তবে প্রিয় সন্তানের সাথে ওর দুঃখ কষ্টের অংশীদার হয়ে যান। মিশে যান বন্ধুর মতো। শেয়ার করুন মতামত। ওদের জন্য আপনাকে খুব বেশি খরচ করতে হবে না। একটু সময় দিন। বিনিময়ে পাবেন অনেক অনেক কিছু। আপনার প্রিয় সন্তান আর আপনি বসুন। ভেবে বের করুন কি করা যায় ওর বন্ধুর জন্য। একটি বিশাল পুষ্পখচিত পৃথিবী উন্মুক্ত হবে আপনার প্রিয় সন্তানের মনোজগতে। নির্মল আনন্দের গুচ্ছ আলোকবর্তিকা ওর মস্তিষ্কের দরজা খুলে দিতে পারে।
পবিত্র আর মানবিক কাজ করতে পেরে ও হয়ে উঠবে মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন একজন পূর্নাঙ্গ মানুষ। পরের সামান্য কষ্টে যদি কারো হৃদয় না টাটায় তবে ধীরে ধীরে ও হৃদয় নির্মম হয়ে উঠবে। আর আঘাত ফিরে আসতে পারে আমাদের দিকেই । যারা সংশ্লিষ্ট তারাই আঘাতপ্রাপ্ত হবে। একজন মানুষ তো আর বাইরের কারো সাথে যুক্ত নাও হতে পারে। যার বা যাদের সাথে যুক্ত তাদেরই সুখ দুখের অংশীদার। দুঃখ জরা সম্মিলিত ভাবে জয় করার মানসিকতা না থাকলে সামনে যাবার পথ পরিস্কার করা কঠিন হয়ে যেতে পারে। কাঠিন্য এক সময় গ্রাস করবেই। তখন ও চাইবে আরো কাউকে যারা ওর আশেপাশে অবস্থান করছে তাদের ওপথে ঠেলে দিতে। প্রতিক্রিয়ায় পুরো পরিবেশটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠতে পারে। একবার ভেবে দেখুন তো আপনার নিজের কষ্ট আপনি চেপে না রেখে উগরাতে শুরু করলে কি পরিনতি হতে পারে ?   আমরা সংসার চালাতে গিয়ে সীমাহীন কষ্ট বুকে ধারন করি। ত্যাগ করি অনেক কিছু। বলেই কিন্তু অনেক অঘটনের মৃত্যু ঘটে।
কাঠিন্য এক সময় গ্রাস করবেই। তখন ও চাইবে আরো কাউকে যারা ওর আশেপাশে অবস্থান করছে তাদের ওপথে ঠেলে দিতে। প্রতিক্রিয়ায় পুরো পরিবেশটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠতে পারে। একবার ভেবে দেখুন তো আপনার নিজের কষ্ট আপনি চেপে না রেখে উগরাতে শুরু করলে কি পরিনতি হতে পারে ?   আমরা সংসার চালাতে গিয়ে সীমাহীন কষ্ট বুকে ধারন করি। ত্যাগ করি অনেক কিছু। বলেই কিন্তু অনেক অঘটনের মৃত্যু ঘটে।
ছোট ছোট কথা আর বিষয়গুলো বৃহৎ আকার ধারন করে মহা বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে। আমরা সুন্দর সহাবস্থান আর সুখের কথা ভেবে ভাবি ,  থাক যা হয় আমারই হোক। ও তো সহ্য করতে পারবে না। কাউকে কষ্ট দিয়ে লাভ কি? আল্লাহ তো সবই দেখছেন। তখনই সব মিটে যায়। হানাহানি, কামড়াকামড়ি তো আর মানবিক নয়! এগুলো পাশবিক আচরণ। হিংসা, চরম স্বার্থপরতা মনের চমৎকার সৃজনশীলতার অন্তরায়। ছোট ছোট বিষয়গুলো শিশু মনে প্রভার বিস্তার করে মহীরুহ হয়ে উঠতে পারে। আপনার প্রিয় সন্তানের মনের দুঃখ বেদনার সমান অংশীদার হোন। প্রতিদিনই প্রশ্ন করুন আজ কোন মজার ঘটনা ঘটেছে কি না ? মজার ঘটনা না জানলে ব্যথার ঘটনা বেরুবে না। আপনি যখন আনন্দের অংশীদার হবেন তখন ব্যথার ঘটনা স্বয়ংক্রিয় চলে আসবে। আর এরকম কিছু পেয়ে গেলে আপনি নিজেকে ভাগ্যবান ভাবতেই পারেন। প্রথমত আপনি হয়ে উঠবেন আপনার প্রিয় সন্তানের প্রিয় বন্ধু, আর আপনার প্রিয় সন্তান হয়ে উঠবে একজন মানুষ। এজন্য খুব বেশি কসরত আপনাকে করতে হবে না। অপেক্ষা করতে হবে। খোঁজ রাখতে হবে নিয়মিত। ও একান্তে থাকলে ওর পাশে গিয়ে বসতে হবে আপনাকে। মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে হবে, তোমার মন খারাপ কেন? তোমার মন খারাপ হলে তো মহাবিপদ, আমি অসুস্থ হয়ে যাবো। কি সমস্যা? আমাকে জানাও বাবা। বড় মানুষের মতো করে বলুন। তুমি বলো, আমি দেখি কি করা যায় ? কিন্তু একটি বিষয় মনে রাখবেন,স্বল্প বয়সী সন্তানের সাথে আপনাকে কথা বলতে হবে বড় মানুষ হিসেবে ধরে নিয়ে। মনে রাখুন আপনার স্বল্প বয়সী সন্তানটিরও অনেক বড় ব্যক্তিত্ব তৈরি হওয়া শুরু করে দিয়েছে । আমরা মনে রাখি পিপড়েও আঘাত করতে পারে কিন্তু ভুলে যাই ছোট শিশুটির বড় ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে। আবার আশা করি, স্বপ্নে বিভোর থাকি যে , ও অনেক বড় কিছু হবে !
(চলমান)

লেখকঃ সাহিত্যিক,শিক্ষক ও সহ-সম্পাদক,মহিয়সী।

সন্তানদের বন্ধু বানান (পর্ব-৭)

আরও পড়ুন