Ads

চোরাবালি

রাবেয়া সুলতানা মুনা

এক সন্ধ্যায় হালিমের মা রওশন আরা ছেলের জন্মদিনে ঘরোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রতিবেশীদের নিমন্ত্রণ করলেন, হালিমের বাবাও আজ বাসায় ছেলের জন্মদিন পালনের জন্য ছুটি নিয়েছেন ।

যথা সময়ে সকলেই উপস্থিত, বাসার জমিদারের বিশেষ দাওয়াত ছিলো বলে জমিদারের ছেলে শাহিন দামী গিফট নিয়ে উপস্থিত হয়! সেই সুবাদে জমিদারের ছেলের সাথে পরিচয় ঘটে রওশন আরা বেগমের সাথে । সুদর্শন যুবক, ভদ্র, মার্জিত ব্যবহারে ভাড়াটিয়া কিংবা প্রতিবেশী সকলেই তার প্রতি মুগ্ধ ।রওশন আরাকে বেগমকে শাহিন ভাবি সম্বোধন করে তিনিও ছোট ভাইয়ের মতো আচরণ করেন । রওশন আরার বয়স ২৮ আর বাড়ীর মালিকের ছেলে শাহিনের বয়স ২৩/২৪ ।
রওশন আরা খুবই ধার্মিক, সুদর্শনা, পরিপাটি চলাফেরা করেন, স্বামী ও একমাত্র ছেলেকে নিয়ে তাদের সুখের সংসার, একে অন্যের সাথে বোঝাপড়াও বেশ ।
জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কয়েক দিন পর রওশন আরা ফেসবুকে হঠাৎ শাহিন ছেলেটার আইডি দেখে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট দিলে সে সাথে সাথে একসেপ্ট করে ।দুই দিন পর রাতে ঘুম না আসায় রওশন আরা ফেসবুকে নিউজফিড়ে সময় কাটাচ্ছিলো, হঠাৎ শাহিন নক করে! রওশন আরার আইডি ছিলো তার ছেলের নামে, শাহিন মেসেজ করে “হালিম তুমি এত রাতে ফেসবুকে কি করো বাবা”? রওশন রিপ্লাই দিয়ে বলেলেন- না ভাইয়া হালিম না, আমি হালিমের মা, তারপর একটু কুশল বিনিময় হয়, এতটুকুই কথোপকথন মেসেঞ্জারে সেদিন ।

১৫-২০ দিন পর রওশন এর পরিবার গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে যাবে, এদিকে মাস শেষ, টাকার সংকট থাকায় হালিমের বাবা রওশনকে বললেন তুমি শাহিন ভাইকে বলো আমরা বাড়ী থেকে ফিরে বাসা বাড়াটা দিব, সেই কারনে রওশন নক করে বললেন, শাহিন ও সুন্দর করে বলে দিলো কোন সমস্যা না আপু ।

রওশন বাড়ীতে যাওয়ার পর শাহিন মেসেঞ্জারে নক করলে কোন রিপ্লাই পায় নি! কিছুদিন পর বাড়ী থেকে ফিরে আবার নক করে রওশন বাসা ভাড়া নেয়ার কথা বললে শাহিন বলে আপনি আমাকে ভুলে গেছেন? রওশন বললেন না ভাইয়া আমি বিজি ছিলাম তো তাই রিপ্লাই দিতে পারিনি । তারপর থেকে দৈনিক কথোপকথন শুরু করলো ছেলেটা! নেশার মতো নিয়ম মাফিক চলে কথোপকথন, ছেলেটা যত না বলা কথা বলে,ভিডিও কলে কথা বলতে বাধ্য করে! এক মিনিট শুধু কথা বলে রওশন কলটি কেটে দিলেন! তারপর অডিও কল দিলেন রওশন! এক পর্যায়ে রওশনও শাহিনের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েন! তবুও বাস্তবতা উপলব্ধি করে রওশন শাহিনকে দুরত্ব বজায় রাখতে বলে, পাপের সাগরে ডুবতে না চাওয়ার সংকল্পের কথা বলে ।
শাহিন ক্ষুব্ধ হয়ে রওশন আরাকে ফেসবুক ব্লক করে দেয়, মোবাইলে কল দিলেও রিসিভ করে না, হঠাৎ এমন ইগনোর করায় রওশন মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন, শাহিন দিব্যি হেসে খেলে জীবনযাপন করছে, তার চোখের সামনে দিয়ে যাতায়াত করছে কিন্তু তাকে ইগনোর করছে! রওশন না পারছে স্বামীকে বলতে না পারছে বাসা পরিবর্তন করতে না পারছে এই অবস্থা সহ্য করতে। হঠাৎ একদিন শাহিনের মুখোমুখি হলে রওশন জিজ্ঞেস করলেন- আমি নিজেই বাস্তবতা উপলব্ধি করতে বলেছি, তাই বলে হঠাৎ ব্লক করলেন?
শাহিন তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে চলে গেল, এমন তাচ্ছিল্যে ভীষণ আঘাত পেলেন রওশন ।

বাইরে মুশলধারে বৃষ্টি হচ্ছে, রওশন আরার ভীষণ কান্না পাচ্ছে, নিজের প্রতি খুব ঘৃণা হচ্ছে, টেরই পায় নি কখন যে চোরাবালিতে আটকা পড়েছে, সুখেইতে দিন কাটছিলো, আত্মীয় স্বজন সবার চোখের মণি সে, তবে কোন পাপে এমন কষ্ট পাচ্ছে ।
বৃষ্টির তীব্রতা বাড়ে, সেই সাথে বাড়ছে অশ্রুধারা, হাতের মুঠো শক্ত করে রওশন আরা বিড়বিড় করে বলতে থাকে, আর এমন মোহে গা ভাসাবো না, এই চোরাবালি থেকে বের হতেই হবে ।

লেখকঃ রাবেয়া সুলতানা মুনা, কবি ও সাহিত্যিক
আরও পড়ুন-

অন্ধকারের ফুল

আরও পড়ুন