Ads

কুরআন ও হাদীসের নিবিড় অধ্যয়ন জরুরী

এম আর রাসেল 

বাংলাদেশের আলেম সমাজ ও মৌলবী উপাধি ভুক্ত মানুষের প্রতি শিক্ষিত শ্রেণীর ক্ষোভ ও বিষোদাগার প্রায়শই চোখে পড়ে। নেত্র সম্মুখে ঘটে যাওয়া এই দৃশ্য দেখে কিছু ভাবনা মনের উঠোনে শব্দ হয়ে ঝরে পড়ছে।উপমহাদেশে অনেক পূর্ব থেকেই ধর্মের নামে কুরআন ও হাদীসের অপব্যাখা চলে আসছে। এখানাকার মাদরাসাগুলোতে ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা দেয়া হয় না। কিছু ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। অধিকাংশ মাদ্রাসাতে শুধু কুরআন ও হাদীস মুখস্থ করাকেই উৎসাহিত করা হয়। অর্থ না বুঝে শুধু মুখস্থ বিদ্যায় ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা প্রতিফলিত হয় না।

ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা পেতে কুরআন ও হাদীসের নিবিড় অধ্যয়ন জরুরী। পাশাপাশি মুসলিম পণ্ডিতদের রেখে যাওয়া সৃষ্টিকর্ম থেকে সৃজনীশক্তি সঞ্চয় করার মনোবাসনা প্রয়োজন। আরবি সাহিত্যের বিশাল সৃষ্টিসম্ভার ইউরোপীয় এনলাইমেন্ট এ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল।

যার ফলে বিশ্ব ব্যবস্থায় ইউরোপীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই ইতিহাস পাঠ ও এর মমার্থ অনুধাবণ করার মত কোন আয়োজন আলেম সমাজের মাঝে চোখে পড়ে না। এসব ঘটনা পর্যালোচনা করে আহমদ ছফা ১৯৯১ সালে “আরবি ভাষা ও সাহিত্য” শিরোনামের এক প্রবন্ধে “মুসলিম তরুণদের আরবি ভাষা শেখার আহবান জানিয়েছিলেন”।

বাংলা আমাদের মাতৃভাষা কিন্তু ইসলামের মৌলিক নির্দেশনা আরবি ভাষায় রচিত হওয়ার এর আসল সঞ্জীবনী সুধা পান করতে হলে এই ভাষা অবশ্যই শিখতে হবে। কুরআনকে বলা হয় অন্তরের অসুখ নিরাময়কারী। অর্থ না বোঝার ফলে আমাদের অন্তরে অসুখ সব সময় লেগেই থাকে। অন্তর সুস্থ হলে সমাজের সকল অজ্ঞতা, কুসংস্কার, হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি-সহ সকল অনিষ্টকর কর্ম এমনিতেই দূর হয়ে যেত।

জাহেলি যুগের অজ্ঞতা, কুসংস্কার দূর করতেই তো কুরআন নাযিল হয়েছিল। তাই ইসলামে কুসংস্কার, অজ্ঞতার কোন স্থান নেই এটা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের প্রচার প্রসার মূলত বিভিন্ন সুফি- দরবেশ, পীরদের মাধ্যমেই বিস্তার লাভ করেছে। এর পর বিভিন্ন পুথি সাহিত্য এদেশের মানুষকে ইসলামের গান শুনিয়ে হৃদয় মন ভরিয়েছে।

প্রকৃত জ্ঞানের অভাবে ঐ সময়ের লেখকরা নানা কিচ্ছা কাহিনীর মধ্য দিয়ে সমাজের মানুষদের জানার তৃষ্ণা মিটিয়েছেন। শহীদে কারবালা, জৈগুনের পুথি, আমীর হামজা, সোনাভান প্রভৃতি সাহিত্যের মধ্যে দিয়ে ইসলাম ধর্মকে হাস্য রসের বিষয় বানিয়ে ফেলা হয়েছে। এর ফলে সমাজে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা বিস্তার লাভ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

এমনকি উনিশ শতকে মীর মোশাররফ হোসেন বিষাদ সিন্ধুতেও পুথি সাহিত্যের অদ্ভূত কাহিনীর বর্ণনা নতুন ভাষায় রূপদান করেছেন। এসবের মধ্য দিয়ে আমাদের এই সমাজ বিরাজমান কুসংস্কার ও কল্পকাহিনী শক্ত ভিত গেড়ে বসেছে। আধুনিক যুগে এসেও এর থেকে মুসলমান সমাজ পরিত্রাণ পায় নি।

কিন্তু সমস্যা হল আমরা যারা এটা বুঝি তারাও কিন্তু শুধু মৌলবীদের গালি দিয়েই নিজের দায়িত্ব পালন করি। সমাজের এই কুসংস্কার দূর করতে কার্যত কোন ভূমিকাই পালন করি না। সবাই নিজের অবস্থান থেকে কাজ করলে হয়ত একদিন এই কুসংস্কার দূর হয়ে যেত।

কুরআন ও হাদীসের গবেষণামূলক তত্ত্ব সমাজের প্রতিটি স্তরে অন্ধকার দূর করে আলোকিত করতে পারে এটা প্রমাণিত সত্য। আল্লাহ যাদেরকে এই বিষয়টি বোঝার মত ক্ষমতা দিয়েছেন তাদের শুধু কথার ফুলঝুরি ছড়িয়েই ক্ষান্ত হলে চলবে না, অর্থবহ কিছু করতেও হবে।

লেখকঃ কলাম লেখক ও কৃষিবিদ

লেখকের প্রকাশিত আরও লেখা পড়ুন-

ইসরাইল-ফিলিস্তিন বর্তমান সংকট ঘিরে রাজনীতির খেলা

আরও পড়ুন