।। সাবিকুন্নাহার মুন্নী ।।
এমন অসংখ্য অভিভাবক আছেন যারা তাদের ছেলে বা মেয়ের বিয়ে-শাদী নিয়ে খুব চিন্তিত।বিয়ে হচ্ছে না অথচ ছেলেমেয়ের বয়স বেড়ে যাচ্ছে। বর্তমান অভিভাবকদের কাছে যেন এ এক কঠিন ও নিষ্ঠুর বাস্তবতা।বিয়ে না হওয়া যেন অনেক অনেক সমস্যার সমষ্টি।
বেশী বয়স, দেখতে সুন্দরী নয়, উচ্চতা কম, বেশী হ্যাংলা, ভারী ফিগার,ঢাকায় বাড়ী নেই, বাবার আর্থিক সংগতি ভালো নয় অপর দিকে, ছেলের চাকুরী পারমানেন্ট না, বেতন কম,বড় ফ্যামিলী, বংশের সাথে মেয়ের কোয়ালিটির ম্যাচ করছে না , ফ্যামিলী স্ট্যটাস মিলছে না ইত্যাদি ইত্যাদি হাজারো চাওয়া পাওয়ার ভীড়ে বিয়েটা যেন দিনকে দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ১০০% চাহিদা পূরণ হতে হবে, কোন ছাড় নেই যেন কোন পক্ষের!
সুন্দর একটি চরিত্রের মানুষের যেমন অভাব তেমনি সুন্দর একটি মনের মানুষেরও দারুন অভাব আজ!কত কত বিচিত্র কারণে ,ঠিক হওয়া বিয়েগুলোও যেন ভেঙ্গে যায়! সেই সাথে ঠুনকো বিষয় নিয়েও কাছের মানুষ দূরে সরে যাচ্ছে ,সুখের কত ঘর ভাংছে প্রতিনিয়ত॥ হায়রে মানুষ ! ছোট্ট এ জীবনে কতইনা চাওয়া পাওয়া আর কত বিচিত্র সব সাধ,চাহিদা, অসন্তুষ্টি! এইটুকু জীবনের অংক মেলাতে আমাদের কতইনা হিসাব-নিকাশ! নানা মানুষ, নানা মত, নানা রুচি ,নানান পছন্দ! এসব নিয়ে চলছে আমাদের সমাজ সংসার!
“হায়রে মানুষ!
রঙিন ফানুস
দম ফুরাইলে ঠুস!
তবু তো ভাই কারোরি নাই
একটু খানি হুস!”
দুদিনের এই জীবনে আমরা সবাই মুসাফির!এসব ঠুনকো বিষয় নিয়ে হতাশা নয়,মুমিনের জীবনে কোন হতাশা নেই! আসলে প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির পার্থক্য যখন পাহাড় সমান হয় তখন হতাশা এসে চারিদিক থেকে ঘিরে ধরে।তবে যারা ঈমানদার, তাকদীরে বিশ্বাসী তাদের এসব বিষয় কখনো চিন্তিত করেনা।
আপনি যখন ভাববেন-
*আমার ছেলে বা মেয়েটি জাহেলিয়াতপূর্ণ এ পরিবেশে বসবাস করেও নোংরা স্রোতে গা ভাসায়নি ।
* পূন্য চরিত্রের অধিকারী হয়ে চরিত্রকে সংরক্ষণ করেছে ।
*প্রচলিত পরিবেশের অশ্লীলতা এ নোংরামী থেকে পবিত্র, সুযোগ থাকার পরও তারা হারাম সম্পর্ক স্হাপন করেনি ।
*নীতিবর্জিত কাজে জড়িত হয়ে বাবা-মায়ের মুখে চুনকালি লেপন করেনি ।
এমন সন্তানের বাবা-মা হতে পেরে চিন্তিত ও হতাশার পরিবর্তে পিতামাতাকে গর্বিত হওয়া উচিৎ।
বিয়ে-শাদী আল্লাহর হুকুম। যার যখন, যেদিন, যার সাথে, যে পরিবারে সাথে তাকদিরে মহান আল্লাহ লিখে রেখেছেন তার সাথেই হবে, তার ১ঘন্টা বা ১মিনিট আগে পরে নয়,সেই দিনই হবে অথবা আল্লাহ যদি কল্যাণ চান হয়তো এই জীবনে হলোও না, তাতে কি আছে?
আরও পড়ুন- তরুণদের বিয়ে ফ্যান্টাসি
আল্লাহ প্রেমিক রাবেয়া বসরী তো জীবনে বিয়েই না করেই কাটিয়ে দিয়েছেন!মহান আল্লাহ স্বামী ছাড়াই মারিয়াম (আঃ) কে নেক সন্তান দান করেছিলেন। আবার মা আয়েশাকে তো কোন সন্তানই দান করেননি! এসবের জন্য তারা কখনো হা-হুতোশ বা আফসোস করেননি! প্রকৃত বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে -আমরা আমাদের সৃষ্টির উদ্দ্যেশ্য পূরণে কে কতটা তৎপর আছি?
মহান আল্লাহ্ সূরা ইয়াসীনে বলেছেন-
إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَقُولَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ (82)
“তিনি যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন তাকে কেবল বলে দেন, ‘হও’ তখনই তা হয়ে যায়।
فَسُبْحَانَ الَّذِي بِيَدِهِ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيْءٍ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ (83)
“অতএব পবিত্র তিনি, যাঁর হাতে সবকিছুর রাজত্ব ও শাসন এবং তাঁরই দিকে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।”
তাই বিয়ে-শাদীর ব্যাপারে অভিভাবকদের প্রচেষ্টার পাশাপাশি দ্বীনদার অভিভাবক ও সন্তানমাত্রই এক আল্লাহর প্রতি আস্হা ও ভরসা করবো এবং তাঁর ফয়সালার ব্যাপারেই সর্বাবস্হায় সন্তুষ্ট থাকবো ইনশাআল্লাহ্!
যাদের এখনোও বিয়ে হয়নি তাদের জন্য বলছি-
কেউ বিয়ে করেও হতাশ,তাদের মতে নানাধরনের জ্বালা যন্ত্রনায় আছেন তারা! আবার কেউ বিয়ে না করে হতাশ! আসলে সাধারণ অর্থে বিয়েটা হচ্ছে-দিল্লীকা লাড্ডুর মত! কেও খেয়ে পস্তায়, আবার কেও না খেয়েও পস্তায়।
নদীর এপাড় কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস, ওপাড়েতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস!অনেকসময় আমারা চারপাশের অসুস্হ পরিবেশের কারনে হতাশার মধ্যে পড়ে যাই,হতাশা এসে ভর করে আমাদের॥আমাদের সমাজটা যেন এমন- যার বিয়ে তার হুঁশ নেই, পাড়াপড়শির ঘুম নেই।নেতিবাচক চর্চা বা অনধিকার চর্চাই যেন এ জাতির স্হায়ী অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
হতাশাকে গুরুত্ব দেয়া যাবে না। মোটিভেশন নিয়ে কাজ হবে না। সার্বিক অবস্হাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে হবে। নিজেকে বোঝাতে হবে যে-আমি হতাশ না, কিন্তু আমার অনুভুতি হতাশাগ্রস্ত এখন। ব্যথা পেলে যেমন সময় নিয়ে সুস্থ হই আমরা, তেমনি হতাশা থেকে বের হয়ে আসতে নিজেকে একটু সময় দিতে হবে।
আরও পড়ুন- সুখের সন্ধানে
আমরা যারা তকদীরে বিশ্বাস করি তাদের উচিৎ
যে বিষয়ে মানুষের হাত নেই সেটা নিয়ে অহেতুক চিন্তা-ভাবনা না করা, মানুষের কথায় কান না দিয়ে,যে সময়টা হাতে পেলাম তা কাজে লাগিয়ে দৃঢ়তার সাথে নিজ লক্ষ্য পানে এগিয়ে যাওয়া। তকদিরের ফয়সালা আল্লাহর কাছে। নিজেকে মানসিকভাবে অন্যের চেয়ে খুব সুখী মনে করবেন। গঠনমূলক কাজে ব্যস্ত থেকে সময়কে এনজয় করবেন। দেখুন না ,আমাদের দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে! দেশে কত কিছু হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এর মাঝে তিনি নিজেকে চিতল মাছ ধরে কিভাবে ব্যস্ত রাখছেন,সময়কে এনজয় করছেন!
তাই যার সুযোগ আছে নিজেকে দ্বীনের কাজে, ক্যারিয়ার গড়ার কাজে ব্যস্ত রাখুন। মানুষের বিপদ -আপদ ও প্রয়োজনে সাধ্যমত এগিয়ে যাবার চেষ্টা করুন। দেখবেন নিজেকে মানসিকভাবে কতটা ফুরফুরে লাগছে। মহান রবের সন্তুষ্টিও মিলছে।
মহান রব সেদিকে আহ্বান করে বলেছেন-
৩:১৩৩ وَ سَارِعُوۡۤا اِلٰی مَغۡفِرَۃٍ مِّنۡ رَّبِّکُمۡ وَ جَنَّۃٍ عَرۡضُهَا السَّمٰوٰتُ وَ الۡاَرۡضُ ۙ اُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِیۡنَ ﴿۱۳۳﴾ۙ
আর তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে, যার পরিধি আসমানসমূহ ও যমীনের সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। মহান আল্লাহ্ আমাদের তাকদিরকে মেনে নিয়ে তাঁর উপর পূর্ন আস্হা রেখে প্রফুল্ল চিত্তে প্রকৃত কল্যাণের পথে কাজ করে যাওয়ার তৌফিক দিন।আমীন॥
লেখকঃ লেখক ও এডভোকেট
লেখকের ফেসবুক পেজ Adv Subikunnahar Munni
বিয়ে-শাদী নিয়ে চিন্তিত !? – বিয়ে-শাদী নিয়ে চিন্তিত !? – বিয়ে-শাদী নিয়ে চিন্তিত !?