নারীমুক্তির পথ |৪|
সা জি দ
জান্নাতের অবিশ্বাসী মনে বিশ্বাসের ঝলক পড়েছে। সে তরজমা পড়তে শুরু করলো। এ যেন মহা স্রষ্টার এক অপূর্ব নিদর্শনে ভরপুর। এতো মধুর হয়তো কোনকিছুই হয় না। যদি হতো তাহলে আরবের ওই লোকগুলো কি এতো জুলুম অত্যাচার বরদাস্ত করে সেই কোরআনের পিছনে ছুটতো!
সূরা ফাতেহা শেষ করে সূরা বাকারা পড়তে শুরু করলো জান্নাত। কিন্তু দ্বিতীয় আয়াতে ‘ইহা এমন একটি কিতাব, যাহাতে কোন সন্দেহ নাই। মুত্তাকীদের জন্য হেদায়েত স্বরূপ।‘ জান্নাত এখানে এসে একটু থামলো। সে কি মুত্তাকী হতে পারবে? পারবে কি অবিশ্বাসের দালানে ফাঁটল ধরাতে? যেভাবেই হোক তাঁকে কোরআনের পুরোটা তাফসির পড়ে শেষ করতে হবে।
সে কোরআন শরিফ বন্ধ করে উঠে যাবে, এসময় মনে হলো কোথায় যেন এই আয়াত নিয়ে কি পড়েছিলো। হ্যাঁ মনে পড়েছে। এখানে সবকিছু ব্যবহার করা হয়েছে ‘পুরুষবাচক‘ এমনকি মুত্তাকী শব্দটিতেও। কিন্তু কেন, মুত্তাকী কি নারীরা হতে পারবে না? না কোরআন নারীদের জন্যই না। তার নব্য জন্মানো বিশ্বাসে কেমন যেন কুঠার আঘাত হানলো।
সে তৎক্ষনাৎ শান্তিকে ফোন দিলো। শান্তি ফোন ওঠানোর সাথে সাথে সে বলতে লাগলো,
—তুই বললি কোরআন শুধু পুরুষের বই নয়, বরং সবার। কিন্তু শুরুতেই সবকিছু দেখি ‘পুরুষবাচক।‘ স্রষ্টাও। আবার বলা হয়েছে হেদায়েত মুত্তাকীদের জন্য। মুত্তাকী শব্দটাও পুরুষবাচক। তার মানে কোরআন আমাদের জন্য লেখাই হয়নি। এটা শুধু পুরুষদের জন্য। তাই নয় কি?
—জান্নাত শোন! তোকে আগে বুঝতে হবে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে কোন ভাষায়। কোরআন বুঝতে হলে তাদের ভাষা আগে বুঝতে হবে। তুই দেখ! সূরা ফাতিহার বিষয়টা ‘ স্রষ্টার নিকট প্রার্থনা।‘ তোর ধারণা সে পুরুষ, তাই এটা পুরুষের জন্য।
—হ্যাঁ। এমনকি ‘মুত্তাকী‘ শব্দটাও।
—এখানে তোর আরবী ভাষা বিষয় জ্ঞান না থাকায় ভুলটা হচ্ছে। প্রথমেই তোকে দেখতে হবে আরবি ভাষার নিয়ম নীতি কি! কোরআনের ভাষা আরবি, কিন্তু সেটা প্রথমে একটি রাষ্ট্রীয় ভাষা। আর সেই ভাষাতেই কোরআন নাজিল হয়েছে। এবিষয়ে আরবি ভাষার নিয়ম হলো ‘যদি কোথাও পুরুষবাচক, স্ত্রীবাচক অনুল্লেখিত থাকে। তাহলে সেখানে পুরুষবাচক হবে। একান্ত প্রয়োজন হলে স্ত্রীবাচক ব্যবহার হবে। না হয় হবে না।‘ এখানে শুধু সেই নিয়মেরই প্রতিফলন ঘটেছে। অন্যকিছু না।
—বাহ। এখানেও দেখছি সেই পুরুষদেরই সাপোর্ট।
—এটা আরবি ভাষায় নীতিমালা। তুই আর আমি আরবি ভাষা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারি না। কারণ এটা আমাদের ভাষা না। আচ্ছা তুই ‘বাংলাদেশ সাংবিধানে বিশ্বাসী?’
—হ্যাঁ অবশ্যই।
—তুই এখন গুগলে সার্চ করে ‘বাংলাদেশ সংবিধানের ইংরেজি অনুবাদ দেখবি।‘
—আচ্ছা দেখবো।
—না তুই এখনই দেখ। এই মুহুর্তে তুই সার্চ কর।
—আচ্ছা ঠিক আছে।
জান্নাত ফোন রেখে কম্পিউটারে সার্চ করলো। সে চোখ বুলিয়ে দেখলো বাংলাদেশ সংবিধান। সেখানে প্রত্যেক ‘সম্বোধন‘ করা হয়েছে পুরুষবাচক শব্দ দিয়ে।
বাংলাদেশের সংবিধান যদি এমনটা করলে অপরাধ না হয়, তাহলে এ্যারাবিয়ানরা ব্যবহার করলে কেন দোষ হতে যাবে! জান্নাতের যেন ভুল ভাঙলো। তার সেই মনোভাব আবার ফিরে আসলো। সে আবার বসে পড়লো কোরআন পড়ার জন্য। কিন্তু এবারের পড়া আর ওবারের পড়ার মাঝে বেশ তফাৎ রয়েছে। আর সেটা হলো ‘পথহারা পথিকের পথে ফেরার আনন্দময় সুরের তফাৎ।‘
আগের পর্ব-নারীমুক্তির পথ|৩|-স্রষ্টা, কোরআন পুরুষতান্ত্রিক নয়
লেখকঃ কলামিস্ট ও সাহিত্যিক