হাবিবা মুবাশ্বেরা
কবিরাজ , তান্ত্রিক, মেডিটেশনকারী কিংবা জ্যোতিষী —-এদের কারোরই নিজস্ব কোনো অলৌকিক ক্ষমতা নেই, তারা সবকিছুই করে জ্বীনদের সহায়তা নিয়ে। (১ম পর্ব)
তথাকথিত আধ্যাত্মিক ব্যক্তির সাহায্যকারী জ্বীন এবং ব্যক্তির সার্বক্ষণিক সঙ্গী ক্বারিন জ্বীনের সহয়তায় অপরিচিত ব্যক্তির অতীত, বর্তমান ,ভবিষ্যত তথ্য জানা সম্ভব হয়। ( ২য় ও ৩য় পর্ব)
এখন প্রশ্ন হলো জ্বীনরা কেন এসব তথাকথিত আধ্যাত্মিক ব্যক্তিদের সহায়তা করে? এটা কি একতরফা কিছু? বা তারা কি এতটাই ক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে যান যে, জ্বীনরা তাদের বাধ্য বা পোষা হয়ে যায়? তাই তাদের কথামতো কাজ করে?
উত্তর হচ্ছে –না।
সুলায়মান (আ:) ব্যতীত আর কোনো মানুষকে মহান আল্লাহতায়ালা জ্বীনদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা দেননি। তাই এইসব আধ্যাত্মিক ব্যক্তিরা যতই অপপ্রচার করুক যে, তাদের বাধ্য বা পোষা জ্বীন আছে তা সত্যি নয়। বরং জ্বীনদের সাথে এইসব আধ্যাত্মিক ব্যক্তিদের সম্পর্কের স্বরূপ হচ্ছে ‘পারষ্পরিক সমঝোতার’, বলা যায় এক ধরণের চুক্তি
।
এই চুক্তির ভিত্তি কি? চলুন, জানার চেষ্টা করি।
মানুষের মাঝে যেমন মুসলিম ও কাফির আছে, জ্বীনদের মাঝেও তেমন আছে।(৭২:১৪) যারা ইবলীসের অনুসারী জ্বীন তারাই মূলত মানুষকে বিপথগামী করার জন্য মানুষের সাথে যোগাযোগ করে, তাদেরকে অর্থ, ক্ষমতা ও খ্যাতির প্রলোভন দেখায়। মানুষের মাঝে একদল স্থূলবুদ্ধি সম্পন্নরা তাদের এই প্রলোভনে সাড়া দেয় এবং জ্বীনদের সাথে সমঝোতার চুক্তি করে।
এই চুক্তি অনুসারে তথাকথিত আধ্যাত্মিক ব্যক্তিরা বিভিন্ন ধরনের শিরকপূর্ণ ও কুফরি কাজ করে। যেমন- কুরআনের মুসহাফের উপর বাথরুম করা, সেটা দিয়ে শৌচকাজ করা, অন্য মানুষ বা পশুপাখির রক্ত পান, বিশিষ্ট কোনো মানুষের রক্ত হাজির করা (ফলে তারা তাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়, অনেক সময় করে), জ্বীনদের সিজদাহ করা, তাদের কাছে বিপদে আশ্রয় চাওয়া, তাদের নামে প্রাণী উৎসর্গ করা ইত্যাদি। তখন এসব শয়তানের অনুসারী জ্বীনরা তথাকথিত আধ্যাত্মিক ব্যক্তিদের উপর সন্তুষ্ট হয় এবং বিভিন্নভাবে তাদের সহায়তা করে।
এভাবে তথাকথিত আধ্যাত্মিক ব্যক্তিদের সহায়তা করে জ্বীনদের প্রাপ্তি কী?
জ্বীনদের পুরস্কারটা আসে ইবলিসের পক্ষ থেকে। ইবলিসের মিশনই হচ্ছে যত বেশী সংখ্যায় সম্ভব আদম সন্তানকে তার সাথে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া। আর এই মিশনে সে তার অনুসারী জ্বীনদেরও ব্যবহার করে। তথাকথিত আধ্যাত্মিক ব্যক্তিদের সাহায্য করার বিনিময়ে তারা যখন তাদেরকে দিয়ে শিরক ও কুফরি কাজ করাতে সমর্থ হয়, তখন তারা তাদের লক্ষ্যে এক ধাপ এগিয়ে যায়। সাথে বোনাস হিসেবে তারা পায় সেইসব সাধারণ মানুষ যারা এসব আধ্যাত্মিক ব্যক্তিদের অলৌকিক ক্ষমতায় বিভ্রান্ত হয়ে তাদের কাছে সাহায্যের জন্য আসে এবং নিজেদের অজান্তেই নানারকম শিরকপূর্ণ ও কুফরি কাজে লিপ্ত হয়।
এভাবে আধ্যাত্মিক ব্যক্তি ও তাদের কাছে আসা সাহায্যপ্রার্থী –এই বিপুলসংখ্যক মানুষকে বিপথগামী করার পুরষ্কারস্বরূপ জ্বীনরা ইবলিসের কাছ থেকে বাহবা পায়। রসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন :
ইবলিস সমুদ্রের পানির উপর তার সিংহাসন স্থাপন করে। অতঃপর মানুষের মধ্যে ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করার জন্য সেখান থেকে তার বাহিনী চারদিকে প্রেরণ করে। এদের মধ্যে সেই তার নিকট সর্বাধিক সম্মানিত যে মানুষকে সবচেয়ে বেশী ফিতনায় নিপতিত করতে পারে। (সহীহ মুসলিম ২৮১৩)
ইবলিশ শুধু যে তার কাজে সহায়তাকারী জ্বীনদের সাময়িকভাবে পুরস্কৃত করে তাই নয় বরং তাদের অনন্তকালের জীবনে ক্ষমতা এবং রাজত্বের প্রলোভনও দেখায়। যদিও শয়তানের কোনোই সাধ্য নেই তাদেরকে চিরস্থায়ী পুরস্কার দেয়ার। তাই কিয়ামতের দিন সে নিজের মিথ্যা প্রতিশ্রুতির কথা স্বীকার করে নিয়ে বলবে-
নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে সত্য ওয়াদা দিয়েছিলেন এবং আমি তোমাদের সাথে ওয়াদা করেছি, অতঃপর তা ভঙ্গ করেছি। অতএব তোমরা আমাকে ভৎর্সনা করো না এবং নিজেদেরকেই ভৎর্সনা কর। আমি তোমাদের উদ্ধারে সাহায্যকারী নই। এবং তোমরাও আমার উদ্ধারে সাহায্যকারী নও। ইতোপূর্বে তোমরা আমাকে যে আল্লাহর শরীক করেছিলে, আমি তা অস্বীকার করি। নিশ্চয় যারা জালেম তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (১৪:২২)
এভাবে শয়তানের অনুসারী জ্বীনদের সাথে সমঝোতায় যাওয়ার ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী?
দুনিয়াবী স্বার্থসিদ্ধির জন্য জ্বীনদের সাথে এই ধরনের সমঝোতায় যাওয়া মুসলিমদের জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং এসব কিছুর পরিণাম হলো জাহান্নাম। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে—
“আর যেদিন আল্লাহ তাদের সবাইকে সমবেত করবেন সেদিন বলবেন, হে জ্বীনের দল, তোমরা অনেক মানুষকে বিভ্রান্ত করেছিলে এবং মানুষদের মধ্যে থেকে জ্বীনদের সঙ্গীরা বলবে, হে আমাদের রব, আমরা এক অপরের দ্বারা লাভবান হয়েছি এবং আমরা পৌঁছে গিয়েছি সেই সময়ে, যা আপনি আমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন। আল্লাহ বলবেন, আগুন তোমাদের ঠিকানা,তোমরা সেখানে স্থায়ী হবে। (সূরা আল-আনঅম: ১২৮)
অতএব মুসলিম হিসেবে আমাদের উচিত কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক সঠিক ইসলামিক জ্ঞান আহরণ করা এবং মহান আল্লাহ ছাড়া তাঁর যে কোন সৃষ্টির কাছে ( জ্বীন অথবা তথাকথিত অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ) সাহায্য চাওয়ার মানসিকতা পরিহার করা।
—————————————————————————————————
তথাকথিত আধ্যাত্মিক ব্যক্তিদের সাহায্য নিতে গিয়ে মুসলিমরা কিভাবে নিজের অজান্তেই শিরকে জড়িয়ে পড়ে? (পরবর্তী পর্বে ইনশাাআল্লাহ)
৩য় পর্বের লিংকঃ
লেখকঃ সাহিত্যিক।