Ads

হার্ভার্ডের মতো একটি প্রতিষ্ঠান আমাদের দেশে হবে কি?

এম আর রাসেল

জ্ঞানের জগতে নামকরা প্রতিষ্ঠান হল হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ।১৬৩৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। প্রথমে ধর্মীয় যাজকদের জন্য তৈরি করা হলেও ধীরে ধীরে জ্ঞানের সব শাখাকেই যুক্ত করা হয়েছে। হার্ভার্ডের মেডিসিন স্কুল, ইকোনমিক স্কুলের সুনাম বিশ্বখ্যাত।

জ্ঞানপ্রেমী জন হার্ভার্ড তার সম্পত্তির অর্ধেক কলেজ বানাতে দান করেন। তার দান করা সম্পদ দিয়েই তৈরি হয় হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ।প্রতিষ্ঠার পর থেকে নজরকাড়া সব সাফল্য অর্জন করেছে এটি।বিশ্বের নানা প্রান্তের মেধাবীরা এখানে পড়তে মুখিয়ে থাকে। এই একটি প্রতিষ্ঠান জন্ম দিয়েছে অসংখ্য খ্যাতিমান মানুষ।

প্রেসিডেন্ট, নোবেল বিজয়ী, ব্যবসায়ী নেতা, উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে বিশ্বখ্যাত অভিনয়শিল্পী কে নেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীর তালিকায়! বলতে গেলে হার্ভার্ডের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বকে পরিচালনা করছেন৷

হার্ভার্ড থেকে এ পর্যন্ত ৮ জন হোয়াইট হাউসে গিয়েছেন। অধিক আলোচিত প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট, জন এফ কেনেডি, জর্জ বুশ, বারাক ওবামা হার্ভার্ডের ছাত্র ছিলেন।ইতিহাসের অন্যতম রূপকার হেনরি কিসিঞ্জারও হার্ভার্ডের ছাত্র ছিলেন।বাংলাদেশের সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত হার্ভার্ডে ড্রিগ্রি নিয়েছেন।

আমেরিকার স্বাধীনতা দলিলে সইকারীদের আটজন ছিলেন হার্ভার্ডের সাবেক ছাত্র। ১৬১ জন নোবেল বিজয়ী হার্ভার্ডের আঙিনাতেই গড়ে উঠেছে।এমনকি বিশ্বসেরা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ও হার্ভার্ডের মতো এত বেশি নোবেল বিজয়ীকে বরণ করতে পারেনি। অক্সফোর্ডের ঝুলিতে রয়েছে মাত্র ৭২ জন।

হার্ভার্ড থেকেই বের হয়ে হয়েছে ৬১ জন বিলিয়নিয়ার।প্রতি বছরই এই সংখ্যা বাড়ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।হার্ভার্ডের মেধাবীরাই পেয়েছে ১০ টি অস্কার, ৪৮ টি পুলিৎজার ও ১০৮ টি অলিম্পিক মেডেল। সাহিত্যে নোবেল জয়ী টি এস ইলিয়ট, বার্ট্রান্ড রাসেল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র‍্যাজুয়েট ছিলেন।

উইলিয়াম ফকনারের বিখ্যাত উপন্যাস দ্য সাউন্ড অ্যান্ড দ্য ফিউরি এবং অ্যাবাসলম অ্যাবাসলম হার্ভার্ডের জীবন ঘিরেই রচিত হয়েছে।যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চলের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গড়ে উঠেছে আইভি লীগ।এই আইভি লীগের সবচেয়ে কাঙ্খিত প্রতিষ্ঠান হল হার্ভার্ড।অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হল ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়, ইয়েল, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয় ও ডার্টমাউথ কলেজ। আইভি লীগের প্রতিষ্ঠানগুলো এখন পর্যন্ত শুধু ৪৪ জন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট উপহার দিয়েছে৷

হার্ভার্ড ড্রপআউটরাও রচনা করেছেন কালজয়ী ইতিহাস।এর মধ্যে মার্ক জাকারবাগ ও বিল গেটসকে প্রথমেই স্মরণ করা যায়।দুজনেই এখানে ভর্তি হয়েছিলেন কিন্তু পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি।বিখ্যাত সাহিত্যিক রবার্ট ফ্রস্ট, ইউজিন ও’নিল ও ড্রপ আউটদের তালিকায় আছেন।

রবার্ট ফ্রস্ট সবচেয়ে বেশিসংখ্যক পুলিত্জার পুরস্কার পেয়েছেন। ইউজিন ও’নিল পেয়েছেন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার।এজন্যই অনেকে মজা করে বলে থাকেন, হার্ভার্ডের ডিগ্রি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেয়ে বরং ডিগ্রি প্রত্যাখ্যান করে বিশ্বখ্যাত হওয়াটা হয়তো অধিকতর মর্যাদার ও কৌতূহলের।

বিশ্ববিদ্যালয়টির রয়েছে বিশাল এনডাউমেন্ট ফান্ড।বর্তমানে এর আকার ৪১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার।শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সহায়তা দিতে এই অর্থের আয়ের বড় অংশ ব্যয় হয়।তাদের লাইব্রেরি খ্যাতি রয়েছে পুরো বিশ্ব জুড়ে।

এগুলো থেকে এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে বিশ্বকে শাসন করতে হলে জ্ঞানে-গরিমায় শ্রেষ্ঠ হতে হবে। হার্ভার্ডের মতো একটি প্রতিষ্ঠান যদি আমাদের দেশে থাকতো তবে বাংলাদেশের চেহারা বদলে যেত।

মজার ব্যাপার হল, চীন- যুক্তরাষ্ট্র কিংবা চীন- ইরান বিবাদ থাকলেও জ্ঞান আহরণ ও বিতরণে তাদের মাঝে কোনো ঝামেলা নেই।চীন “থাউজ্যান্ড ট্যালেন্ট প্ল্যান” ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোতে চীনা ছাত্র পাঠানো থেমে নেই।
হার্ভার্ডকে বলা হচ্ছে চীনের ডি-ফ্যাক্টো আউটপোস্ট। ২০১৪ সালে চীনা দম্পতির হার্ভার্ডে ডোনেশেন দেয়ার খবর বেশ আলোচিত হয়েছিল।

লেখকঃ কলাম লেখক

লেখকের আরও লেখা পড়ুন-

বাগরাম বিমানঘাটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

কে এই ইব্রাহিম রাইসি?

আরও পড়ুন